ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

জীবননগর বাঁকায় ভৈরব নদের মাটি বিক্রির প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:১৭:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২
  • / ২৬ বার পড়া হয়েছে

সরকারি নিয়মানুযায়ী মাটি বিক্রি করা হয়েছে : ইউএনও আরিফুল ইসলাম

জীবননগর অফিস: জীবননগরে ভৈরব নদের পাড়ের মাটি লুট বন্ধে মানববন্ধন করেছেন কৃষকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকাল শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে উপজেলার বাঁকা জোড়া ব্রিজের মুখে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এদিকে, মানববন্ধন বন্ধ করার জন্য জীবননগর থানা পুলিশের সদস্যরা চেষ্টা করে। কিন্তু সকল  বাধা উপেক্ষা করে তিন গ্রামের সাধারণ মানুষ নদের পাড়ে হাতে হাত রেখে মানববন্ধন কর্মসূচি সফল করেন। স্থানীয় কৃষক হাফিজুল, আক্কাস, আকালে, নুরী, আলী কদর, মুবারেক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন, শিক্ষক আবুল হাসেমসহ প্রায় দুই শতাধিক মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেয়।

মানববন্ধনে কৃষকেরা বলেন, নদী পুনঃখননের পর নদীর পাড় না বেধে মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে নদী পাড়ের কৃষি জমি, রাস্তা ও বাড়ি-ঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাঁরা নদীর পাড়ের মাটি লুট বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আলীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক আবুল হাশেম বলেন, নদী পুনঃখনন করা হয়েছে। এতে কৃষকদের অনেক উপকার হয়েছে। তবে যদি নদীর পাড় না বেধে মাটি বিক্রি করা হয়, তাহলে কৃষকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নদী পাড়ের কৃষিজমি, ঘরবাড়ি ও রাস্তা ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়বে। আবুল হাশেম আরও বলেন, আগে কয়েকবার নদীপাড়ের মাটি লুট করতে বাঁকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন ফরজ ও আলীপুর গ্রামের গরুর ব্যাপারী মিজানুর রহমানসহ কয়েকটি দল এসেছিল। প্রতিবাদ করায় তারা চলে যায়। ওই চক্রের সদস্যরা এবার ঢাকার ফাইজা ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্তি করে ভৈরব নদী পাড়ের ৫ কিলোমিটার মাটির ৬০ শতাংশ ৮ লাখ টাকায় কিনেছে বলে দাবি করছে। তারা প্রমাণ হিসেবে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলামের স্বাক্ষর করা একটি কাগজ দেখাচ্ছে।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন বলেন, ‘নদী খনন করেছে এ জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু মাটি খনন শেষ হতে না হতেই ইউএনও সাহেব কীভাবে মাটি বিক্রির অনুমতি দেয়, এটা আমাদের জানা নেই। জমি আমাদের, মাটি আমাদের, আমরা এক গাড়ি মাটিও নিয়ে যেতে দেব না, যত দিন নদীর পাড় বাধা না হবে, ততদিন মাটি নিতে দিব না। পাড় বাধার পর যে মাটি থাকবে, সেই মাটি নিবে তাতে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু পাড় বাধা শেষ না হতেই মাটি বিক্রি করবে এটা আমরা সহ্য করব না।’

ফাইজা ট্রেডার্সের মালিক মো. শামসুর হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমি সরকারিভাবে টাকা জমা দিয়ে মাটি নিচ্ছি। আমার কাছে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার চালান আছে এবং ইউএনও সাহেবের অনুমতিপত্র আছে। আমার টাকা অনুপাতে আমাকে যেখান থেকে মাটি কাটার অনুমতি দিয়েছে, আমি সেখান থেকে মাটি কাটছি। আমরা এখানে ব্যবসা করতে এসেছি, কোনো ঝামেলা করতে আসিনি। আর আমি কাউকে হুমকি-ধামকি প্রদান করিনি।’

এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, আগে লোকজন চুরি করে মাটি বিক্রি করত। তখন কেউ অভিযোগ করত না। এখন সরকারিভাবে নিয়ম অনুযায়ী মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারি রাজস্বে অর্থ জমা হচ্ছে। এতে অনেকেই রাগান্বিত হচ্ছে। কারণ তারা চুরি করে মাটি বিক্রি করতে পারছে না। সরকারি নিয়মানুযায়ী মাটি বিক্রি করা হয়েছে এবং নদীর পাড় বাধার অবশিষ্ট মাটি দেওয়া হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জীবননগর বাঁকায় ভৈরব নদের মাটি বিক্রির প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

আপলোড টাইম : ০৭:১৭:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২

সরকারি নিয়মানুযায়ী মাটি বিক্রি করা হয়েছে : ইউএনও আরিফুল ইসলাম

জীবননগর অফিস: জীবননগরে ভৈরব নদের পাড়ের মাটি লুট বন্ধে মানববন্ধন করেছেন কৃষকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকাল শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে উপজেলার বাঁকা জোড়া ব্রিজের মুখে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এদিকে, মানববন্ধন বন্ধ করার জন্য জীবননগর থানা পুলিশের সদস্যরা চেষ্টা করে। কিন্তু সকল  বাধা উপেক্ষা করে তিন গ্রামের সাধারণ মানুষ নদের পাড়ে হাতে হাত রেখে মানববন্ধন কর্মসূচি সফল করেন। স্থানীয় কৃষক হাফিজুল, আক্কাস, আকালে, নুরী, আলী কদর, মুবারেক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন, শিক্ষক আবুল হাসেমসহ প্রায় দুই শতাধিক মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেয়।

মানববন্ধনে কৃষকেরা বলেন, নদী পুনঃখননের পর নদীর পাড় না বেধে মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে নদী পাড়ের কৃষি জমি, রাস্তা ও বাড়ি-ঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাঁরা নদীর পাড়ের মাটি লুট বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আলীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক আবুল হাশেম বলেন, নদী পুনঃখনন করা হয়েছে। এতে কৃষকদের অনেক উপকার হয়েছে। তবে যদি নদীর পাড় না বেধে মাটি বিক্রি করা হয়, তাহলে কৃষকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নদী পাড়ের কৃষিজমি, ঘরবাড়ি ও রাস্তা ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়বে। আবুল হাশেম আরও বলেন, আগে কয়েকবার নদীপাড়ের মাটি লুট করতে বাঁকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন ফরজ ও আলীপুর গ্রামের গরুর ব্যাপারী মিজানুর রহমানসহ কয়েকটি দল এসেছিল। প্রতিবাদ করায় তারা চলে যায়। ওই চক্রের সদস্যরা এবার ঢাকার ফাইজা ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্তি করে ভৈরব নদী পাড়ের ৫ কিলোমিটার মাটির ৬০ শতাংশ ৮ লাখ টাকায় কিনেছে বলে দাবি করছে। তারা প্রমাণ হিসেবে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলামের স্বাক্ষর করা একটি কাগজ দেখাচ্ছে।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন বলেন, ‘নদী খনন করেছে এ জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু মাটি খনন শেষ হতে না হতেই ইউএনও সাহেব কীভাবে মাটি বিক্রির অনুমতি দেয়, এটা আমাদের জানা নেই। জমি আমাদের, মাটি আমাদের, আমরা এক গাড়ি মাটিও নিয়ে যেতে দেব না, যত দিন নদীর পাড় বাধা না হবে, ততদিন মাটি নিতে দিব না। পাড় বাধার পর যে মাটি থাকবে, সেই মাটি নিবে তাতে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু পাড় বাধা শেষ না হতেই মাটি বিক্রি করবে এটা আমরা সহ্য করব না।’

ফাইজা ট্রেডার্সের মালিক মো. শামসুর হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমি সরকারিভাবে টাকা জমা দিয়ে মাটি নিচ্ছি। আমার কাছে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার চালান আছে এবং ইউএনও সাহেবের অনুমতিপত্র আছে। আমার টাকা অনুপাতে আমাকে যেখান থেকে মাটি কাটার অনুমতি দিয়েছে, আমি সেখান থেকে মাটি কাটছি। আমরা এখানে ব্যবসা করতে এসেছি, কোনো ঝামেলা করতে আসিনি। আর আমি কাউকে হুমকি-ধামকি প্রদান করিনি।’

এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, আগে লোকজন চুরি করে মাটি বিক্রি করত। তখন কেউ অভিযোগ করত না। এখন সরকারিভাবে নিয়ম অনুযায়ী মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারি রাজস্বে অর্থ জমা হচ্ছে। এতে অনেকেই রাগান্বিত হচ্ছে। কারণ তারা চুরি করে মাটি বিক্রি করতে পারছে না। সরকারি নিয়মানুযায়ী মাটি বিক্রি করা হয়েছে এবং নদীর পাড় বাধার অবশিষ্ট মাটি দেওয়া হয়েছে।