ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা কাওসারের কাণ্ড

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৩:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২
  • / ২২ বার পড়া হয়েছে

জীবননগর অফিস: জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিম্ন মানের চাল ক্রয় করে ভালো চালের সাথে মিশিয়ে ভোক্তাদের মাঝে সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে। খাদ্যগুদামের ওসিএলএসডি কাওসার, অফিস সহকারী প্রতিবন্ধী রাকিব এবং নাইটগার্ড মাসুদের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। ইতঃমধ্যে অফিস সহকারী প্রতিবন্ধী রাকিব ও মাসুদের বদলির অর্ডার হয়ে গেছে। তবুও থেমে নেই তাদের অপকর্ম। প্রতিদিনের মতো গতকাল সোমবার সকালে গুদামের বাইরে তালা দিয়ে ভালো চালের সঙ্গে নিম্নমানের চাল ভেজাল করছিল তারা। ঘটনাটি সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে।

সংশ্লিষ্ট মিলারদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা কাওসার হোসেন ও অফিস সহকারী রাকিব হোসেন যোগদানের পর থেকে নাইটগার্ড মাসুদ আলমকে সাথে নিয়ে নানা কৌশলে দুর্নীতি-অনিয়ম করে আসছিলেন। খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা কাওসার হোসেন ও অফিস সহকারী রাকিব হোসেন দুর্নীতির মাধ্যমে তালিকাভুক্ত মিলারদের নিকট থেকে নিম্নমানের চাল ক্রয় করে তা ভোক্তাদের মাঝে সরবরাহ করে থাকেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মিলারের অভিযোগ, খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাকে প্রতি কেজি ভালো চালের অনুকূলে এক টাকা এবং নিম্নমানের খাওয়ার অনুপযোগী চালের অনুকূলে ৬-৭ টাকা হারে উৎকোচ না দিলে তিনি চাল নিতে চান না। এসব নিম্নমানের চাল খাদ্যগুদাম থেকে সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরবরাহ করা হয়।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, নিম্নমানের চাল ক্রয়ের পর তা অফিস টাইমের আগে ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত গুদাম শ্রমিক সর্দার রমজানের নেতৃত্বে খাদ্যগুদামের ভেতর থেকে তালাবদ্ধ করে তার ভেতরে শ্রমিকেরা নিম্নমানের (স্থানীয় ভাষায় তামড়ী চাল অর্থাৎ লাল রংয়ের চাল) চালের সাথে ভালো চাল ভেজাল করে থাকেন। এভাবে দীর্ঘ এক বছর ধরে নিম্নমানের চাল ক্রয় করে, তা ভালো চালের সাথে ভেজাল করে আসছে এ চক্রটি। যার ফলে মিলাররা ভালো চাল দিলে সেগুলো নিতে চায় না এই চক্রটি। একইভাবে গতকাল সোমবার সকালে নিম্নমানের চালের সাথে ভালো চাল ভেজালকালে বিষয়টি সাংবাদিকদের চোখে পড়ে। সাংবাদিকদের খাদ্যগুদাম কর্মকতা কাওসার হোসেন বলেন, ভিজিএফ’র চাল তৈরি করা হচ্ছে।

এদিকে, উপজেলা খাদ্যগুদামের তালিকাভুক্ত কোনো মিলার প্রতিবাদ করলে সেই মিলারের চাল ক্রয় করতে গিয়ে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা কাওসার, অফিস সহকারী রাকিব, নাইট গার্ড মাসুদ রানা ও শ্রমিক সর্দার রমজান নানাভাবে হয়রানি করে থাকে। অন্যদিকে খাদ্যগুদাম কাওসার হোসেন নিয়মিত অফিস না করে অধিকাংশ সময় বাইরে অবস্থান করেন এবং নাইট গার্ড মাসুদ রানা স্থানীয় হওয়ায় মিলারদের নিকট থেকে উৎকোচের টাকা আদায় করে থাকে। মাসুদ রানা নাইট গার্ড হলেও অফিসার হালে তাকে দিনের বেলায় খাদ্যগুদামে দেখা যায়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ মাসুদ রানা বর্তমানে কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে, ঈদের বিশেষ ভিজিএফ, ভিজিডি, ওএমএস, টিআর, জিআর বিভিন্ন কর্মসূচিতে অসহায়, হতদরিদ্র কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবে উপজেলা খাদ্যগুদাম থেকে যে চাল সরবরাহ করা হয়, তা অত্যন্ত নিম্নমানের ও অনেক ক্ষেত্রে খাওয়ার অনুপযোগী এবং ওজনে কম দেওয়া হয়। এসব ব্যাপারে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাকে অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয় না।

উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা কাওসার হোসেন বলেন, ভালো চালের সাথে নিম্নমানের চাল ভেজাল করার অভিযোগ সত্য নয়। ভিজিডির চাল সরবরাহের জন্য চাল গড় করে রিপ্যাক করা হচ্ছিল। এদিকে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে চাল ভেজাল কাজে ব্যস্ত শ্রমিকেরা দ্রুত গোডাউন ছেড়ে চলে যায়।

এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওবাইদুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় ঘটনার ব্যাপারে তাঁর মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এ কে এম শহিদুল হক বলেন, ‘নিম্নমানের চাল ক্রয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ভিজিডির চাল সরবরাহের জন্য যদি ৩০ কেজির প্যাকেট না থাকে, তাহলে রিপ্যাক করা যাবে। শ্রমিকেরা যদি সঠিক ন্যায় কাজ করেন, তাহলে তারা গুদাম ছেড়ে পালাবে কেন, আমি বিষয়টি দেখছি।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা কাওসারের কাণ্ড

আপলোড টাইম : ০৯:০৩:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২

জীবননগর অফিস: জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিম্ন মানের চাল ক্রয় করে ভালো চালের সাথে মিশিয়ে ভোক্তাদের মাঝে সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে। খাদ্যগুদামের ওসিএলএসডি কাওসার, অফিস সহকারী প্রতিবন্ধী রাকিব এবং নাইটগার্ড মাসুদের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। ইতঃমধ্যে অফিস সহকারী প্রতিবন্ধী রাকিব ও মাসুদের বদলির অর্ডার হয়ে গেছে। তবুও থেমে নেই তাদের অপকর্ম। প্রতিদিনের মতো গতকাল সোমবার সকালে গুদামের বাইরে তালা দিয়ে ভালো চালের সঙ্গে নিম্নমানের চাল ভেজাল করছিল তারা। ঘটনাটি সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে।

সংশ্লিষ্ট মিলারদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা কাওসার হোসেন ও অফিস সহকারী রাকিব হোসেন যোগদানের পর থেকে নাইটগার্ড মাসুদ আলমকে সাথে নিয়ে নানা কৌশলে দুর্নীতি-অনিয়ম করে আসছিলেন। খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা কাওসার হোসেন ও অফিস সহকারী রাকিব হোসেন দুর্নীতির মাধ্যমে তালিকাভুক্ত মিলারদের নিকট থেকে নিম্নমানের চাল ক্রয় করে তা ভোক্তাদের মাঝে সরবরাহ করে থাকেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মিলারের অভিযোগ, খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাকে প্রতি কেজি ভালো চালের অনুকূলে এক টাকা এবং নিম্নমানের খাওয়ার অনুপযোগী চালের অনুকূলে ৬-৭ টাকা হারে উৎকোচ না দিলে তিনি চাল নিতে চান না। এসব নিম্নমানের চাল খাদ্যগুদাম থেকে সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরবরাহ করা হয়।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, নিম্নমানের চাল ক্রয়ের পর তা অফিস টাইমের আগে ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত গুদাম শ্রমিক সর্দার রমজানের নেতৃত্বে খাদ্যগুদামের ভেতর থেকে তালাবদ্ধ করে তার ভেতরে শ্রমিকেরা নিম্নমানের (স্থানীয় ভাষায় তামড়ী চাল অর্থাৎ লাল রংয়ের চাল) চালের সাথে ভালো চাল ভেজাল করে থাকেন। এভাবে দীর্ঘ এক বছর ধরে নিম্নমানের চাল ক্রয় করে, তা ভালো চালের সাথে ভেজাল করে আসছে এ চক্রটি। যার ফলে মিলাররা ভালো চাল দিলে সেগুলো নিতে চায় না এই চক্রটি। একইভাবে গতকাল সোমবার সকালে নিম্নমানের চালের সাথে ভালো চাল ভেজালকালে বিষয়টি সাংবাদিকদের চোখে পড়ে। সাংবাদিকদের খাদ্যগুদাম কর্মকতা কাওসার হোসেন বলেন, ভিজিএফ’র চাল তৈরি করা হচ্ছে।

এদিকে, উপজেলা খাদ্যগুদামের তালিকাভুক্ত কোনো মিলার প্রতিবাদ করলে সেই মিলারের চাল ক্রয় করতে গিয়ে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা কাওসার, অফিস সহকারী রাকিব, নাইট গার্ড মাসুদ রানা ও শ্রমিক সর্দার রমজান নানাভাবে হয়রানি করে থাকে। অন্যদিকে খাদ্যগুদাম কাওসার হোসেন নিয়মিত অফিস না করে অধিকাংশ সময় বাইরে অবস্থান করেন এবং নাইট গার্ড মাসুদ রানা স্থানীয় হওয়ায় মিলারদের নিকট থেকে উৎকোচের টাকা আদায় করে থাকে। মাসুদ রানা নাইট গার্ড হলেও অফিসার হালে তাকে দিনের বেলায় খাদ্যগুদামে দেখা যায়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ মাসুদ রানা বর্তমানে কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে, ঈদের বিশেষ ভিজিএফ, ভিজিডি, ওএমএস, টিআর, জিআর বিভিন্ন কর্মসূচিতে অসহায়, হতদরিদ্র কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবে উপজেলা খাদ্যগুদাম থেকে যে চাল সরবরাহ করা হয়, তা অত্যন্ত নিম্নমানের ও অনেক ক্ষেত্রে খাওয়ার অনুপযোগী এবং ওজনে কম দেওয়া হয়। এসব ব্যাপারে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাকে অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয় না।

উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা কাওসার হোসেন বলেন, ভালো চালের সাথে নিম্নমানের চাল ভেজাল করার অভিযোগ সত্য নয়। ভিজিডির চাল সরবরাহের জন্য চাল গড় করে রিপ্যাক করা হচ্ছিল। এদিকে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে চাল ভেজাল কাজে ব্যস্ত শ্রমিকেরা দ্রুত গোডাউন ছেড়ে চলে যায়।

এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওবাইদুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় ঘটনার ব্যাপারে তাঁর মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এ কে এম শহিদুল হক বলেন, ‘নিম্নমানের চাল ক্রয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ভিজিডির চাল সরবরাহের জন্য যদি ৩০ কেজির প্যাকেট না থাকে, তাহলে রিপ্যাক করা যাবে। শ্রমিকেরা যদি সঠিক ন্যায় কাজ করেন, তাহলে তারা গুদাম ছেড়ে পালাবে কেন, আমি বিষয়টি দেখছি।’