ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

জীবননগরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর গলাকেটে হত্যা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০৯:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৪০ বার পড়া হয়েছে

জীবননগর অফিস:
জীবননগরে মরিয়ম (১১) নামের দ্বিতীয় শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর গলাকেটে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ছোট বোন আসিয়া, সমবয়সী স্নেহা ও হুজাইফাসহ বাড়ির পাশের হাড়িভাঙ্গা মাঠে শাক তুলতে গিয়ে খুন হয় সে।

বেলা দেড়টার দিকে আসিয়া, স্নেহা ও হুজাইফা বাড়িতে ফিরে শিশুটির মা জবেদা বেগমকে জানায় অজ্ঞাত একটি লোক মরিয়মকে ভুট্টার খেতের মধ্যে নিয়ে গেছে। তারপর থেকে মরিয়মকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। এসময় মরিয়মের পরিবারের সদস্যরা তাকে খুঁজতে গেলে মাঠের মধ্যে ভুট্টা খেতে গলাকাটা অবস্থায় মরিয়মের বিবস্ত্র লাশ দেখতে পায়। শিশু মরিয়ম উপজেলার গোয়ালপাড়ার গ্রামের দক্ষিণ নতুন মসজিদপাড়ার ইকবাল মণ্ডলের মেয়ে।

ঘটনার খবরে পেয়ে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নাজিম আল আজাদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা-জীবননগর সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা, জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেয়। আজ ময়নাতন্তের জন্য শিশুটির লাশ সদর হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হবে।

মরিয়মের মা জোবেদা বেগম বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে ছোট বোন আর পাশের বাড়ির তিনজনের সঙ্গে মরিয়ম মাঠে শাক তুলতে গিয়েছিল। দুপুরে ওরা এসে বলে মরিয়মকে পাচ্ছে না। একজন তাকে ভুট্টার মধ্যে নিয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা মাঠে চলে আসি। মাঠে খুঁজতে খুঁজতে ওই ভুট্টা খেতের মধ্যে গেলে মরিয়মের লাশ পড়ে থাকতে দেখি। গলাকাটা, আর গায়ে শুধু গেঞ্জি ছিল।’

নিহত মরিয়মের চাচী সেলিনা খাতুন বলেন, ‘দুপুরে মরিয়ম ছোট বোন আসিয়াকে নিয়ে গ্রামের আরও কয়েককটি শিশুর সঙ্গে হাড়িভাঙ্গা মাঠে যায়। এসময় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি মাঠের একটি ভুট্টা খেতে নিয়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে গলাকেটে হত্যা করে।’

মরিয়মের দাদী জাহানারা বেগম বলেন, ‘মেয়ে দুটি মসজিদে ছিল। মসজিদ থেকে এসে মায়ের কাছ থেকে ভাত খেয়ে শাক তুলতে যায়। এর আগে পাশের বাড়ির স্নেহা, হুজাইফাসহ দুই তিনজন মরিয়মকে ডেকে নিয়ে যায়। দুপুরের দিকে ওরা কানতে কানতে এসে বলছে মরিয়মকে পাচ্ছে না। একজন মরিয়মকে ভুট্টার মধ্যে নিয়ে গেছে। তার মুখে তিল ছিল। আমরা তখন ভাত রান্না ফেলে ভুট্টার মধ্যে গিয়ে মরিয়মের লাশ দেখি।’

সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইসাবুল ইসলাম মিল্টন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘শিশুটিকে এমনভাবে গলাকেটে হত্যা করেছে এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর। তবে যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তাকে দ্রুত আটক করে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার। তার শাস্তি দেখে আর কোনো মানুষ যেন এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে না পারে।’
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদনে হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ধর্ষণের বিষয়টি ডাক্তারি পরীক্ষার পর জানা যাবে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে মামলার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বিকেল চারটার পর মরদেহ পাঠালে ময়নাতদন্ত সেই দিন হয় না। আমরা লাশ শুক্রবার ভোরের মধ্যে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেব।’ এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত কাউকে সনাক্ত করা যায়নি। ডিবিসহ পুলিশের কয়েকটি ইউনিট আসামি ধরতে কাজ করছে।’

চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নাজিম উদ্দীন আল আজাদ বলেন, জীবননগর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় ভুট্টা খেতে শিশুর লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল যায়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ধর্ষককে চিনে ফেলায় ওই শিশুকে গলাকেটে হত্যা করা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জীবননগরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর গলাকেটে হত্যা

আপলোড টাইম : ১০:০৯:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৩

জীবননগর অফিস:
জীবননগরে মরিয়ম (১১) নামের দ্বিতীয় শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর গলাকেটে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ছোট বোন আসিয়া, সমবয়সী স্নেহা ও হুজাইফাসহ বাড়ির পাশের হাড়িভাঙ্গা মাঠে শাক তুলতে গিয়ে খুন হয় সে।

বেলা দেড়টার দিকে আসিয়া, স্নেহা ও হুজাইফা বাড়িতে ফিরে শিশুটির মা জবেদা বেগমকে জানায় অজ্ঞাত একটি লোক মরিয়মকে ভুট্টার খেতের মধ্যে নিয়ে গেছে। তারপর থেকে মরিয়মকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। এসময় মরিয়মের পরিবারের সদস্যরা তাকে খুঁজতে গেলে মাঠের মধ্যে ভুট্টা খেতে গলাকাটা অবস্থায় মরিয়মের বিবস্ত্র লাশ দেখতে পায়। শিশু মরিয়ম উপজেলার গোয়ালপাড়ার গ্রামের দক্ষিণ নতুন মসজিদপাড়ার ইকবাল মণ্ডলের মেয়ে।

ঘটনার খবরে পেয়ে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নাজিম আল আজাদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা-জীবননগর সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা, জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেয়। আজ ময়নাতন্তের জন্য শিশুটির লাশ সদর হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হবে।

মরিয়মের মা জোবেদা বেগম বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে ছোট বোন আর পাশের বাড়ির তিনজনের সঙ্গে মরিয়ম মাঠে শাক তুলতে গিয়েছিল। দুপুরে ওরা এসে বলে মরিয়মকে পাচ্ছে না। একজন তাকে ভুট্টার মধ্যে নিয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা মাঠে চলে আসি। মাঠে খুঁজতে খুঁজতে ওই ভুট্টা খেতের মধ্যে গেলে মরিয়মের লাশ পড়ে থাকতে দেখি। গলাকাটা, আর গায়ে শুধু গেঞ্জি ছিল।’

নিহত মরিয়মের চাচী সেলিনা খাতুন বলেন, ‘দুপুরে মরিয়ম ছোট বোন আসিয়াকে নিয়ে গ্রামের আরও কয়েককটি শিশুর সঙ্গে হাড়িভাঙ্গা মাঠে যায়। এসময় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি মাঠের একটি ভুট্টা খেতে নিয়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে গলাকেটে হত্যা করে।’

মরিয়মের দাদী জাহানারা বেগম বলেন, ‘মেয়ে দুটি মসজিদে ছিল। মসজিদ থেকে এসে মায়ের কাছ থেকে ভাত খেয়ে শাক তুলতে যায়। এর আগে পাশের বাড়ির স্নেহা, হুজাইফাসহ দুই তিনজন মরিয়মকে ডেকে নিয়ে যায়। দুপুরের দিকে ওরা কানতে কানতে এসে বলছে মরিয়মকে পাচ্ছে না। একজন মরিয়মকে ভুট্টার মধ্যে নিয়ে গেছে। তার মুখে তিল ছিল। আমরা তখন ভাত রান্না ফেলে ভুট্টার মধ্যে গিয়ে মরিয়মের লাশ দেখি।’

সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইসাবুল ইসলাম মিল্টন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘শিশুটিকে এমনভাবে গলাকেটে হত্যা করেছে এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর। তবে যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তাকে দ্রুত আটক করে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার। তার শাস্তি দেখে আর কোনো মানুষ যেন এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে না পারে।’
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদনে হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ধর্ষণের বিষয়টি ডাক্তারি পরীক্ষার পর জানা যাবে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে মামলার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বিকেল চারটার পর মরদেহ পাঠালে ময়নাতদন্ত সেই দিন হয় না। আমরা লাশ শুক্রবার ভোরের মধ্যে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেব।’ এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত কাউকে সনাক্ত করা যায়নি। ডিবিসহ পুলিশের কয়েকটি ইউনিট আসামি ধরতে কাজ করছে।’

চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নাজিম উদ্দীন আল আজাদ বলেন, জীবননগর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় ভুট্টা খেতে শিশুর লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল যায়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ধর্ষককে চিনে ফেলায় ওই শিশুকে গলাকেটে হত্যা করা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।