ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

জীবননগরে ভ্রাম্যমাণ মৌ চাষ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ জুন ২০২২
  • / ৪৭ বার পড়া হয়েছে

মিঠুন মাহমুদ/এ আর ডাবলু: জীবননগর উপজেলার বৈদ্যনাথপুর গ্রামের একটি আমবাগানে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ মৌমাছির খামার। ভ্রাম্যমাণ মৌ খামারী মাহফুজুর রহমানের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানায়। শখের বসে নিজ এলাকায় তাঁর আমবাগানে ২০১০ সালে অল্প পরিসরে ৪০টি বক্সে মৌমাছি পালন শুরু করেন। বর্তমানে ১৫০টি বক্সে মৌমাছি পালন করছেন। ঢাকা থেকে মৌমাছি পালনের ওপর প্রশিক্ষণ নেন তিনি। তারপর বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক পরিসরে মৌমাছি খামার গড়ে তোলেন। নিজে ও দুইজন লোক মিলে পরিচর্যা করেন। এই মৌমাছি দল বেধে উড়ে না গেলে কোনো সমস্যা হয় না এরা খুব শান্ত প্রাণী। মৌমাছির রোগ বালাই ও খরচ কম হওয়ায় লাভজনক ব্যবসা বলে জানান মাহফুজুর রহমান। ১২ বছর ধরে তিনি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন মৌমাছি। মৌ খামার থেকে প্রতিবছর ২০-২৫ মণ মধু উৎপাদন করে বাজারে খাঁটি মধু বিক্রি করছেন। মৌমাছির মাধ্যমে ফুল ও ফলের পরাগায়ন হওয়ায় উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মৌ খামারে মধু ও মাছি তৈরির জন্য রয়েছে মেলেফিরিয়া জাতের রাণী, পুরুষ ও কর্মী মৌমাছি। রাণী ও পুরুষ মৌমাছি বংশ বৃদ্ধি করে, আর কর্মী মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। ৫০টি দ্বিতল ও ১০০টি একক বাক্স রয়েছে। বাক্সগুলো কাঠের তৈরি। বাক্সের দুটি মুখ দিয়ে মাছিগুলো বের হয়। একক মৌ বাক্সে ৭টি ফ্রেম ও দ্বিতল বাক্সে রয়েছে ১২টি ফ্রেম। প্রতিটি ফ্রেমে এক থেকে দেড় হাজার মৌমাছি থাকে। বিভিন্ন ফুল ও ফলের মৌসুমে মৌমাছিগুলো নেওয়া হয় বাক্স ধরে মধু সংগ্রহের জন্য। মাছিগুলো দল বেঁধে উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহ করে আবার ফিরে আসে বাক্সে।

মাহফুজুর রহমান বলেন, এই মৌমাছি ডেনমার্ক থেকে আসে, এগুলো আমাদের এলাকার মতো না। এরা সবসময় দল বেধে থাকতে ভালোবাসে। বছরের অর্ধেক সময় দেশের বিভিন্ন জেলায় মৌমাছির বাক্সগুলো নিয়ে মধু সংগ্রহ করতে হয়। প্রতি কেজি মধু সাড়ে ৩ শ টাকা থেকে সাড়ে ৪ শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। বাজারে খাঁটি মধুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে এই মধু চাষ করতে হলে প্রশিক্ষণ নিতে হবে, তা না হলে মৌমাছি মারা যাবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মৌমাছি পালন করলে ফসল ও মধু উৎপাদন সম্ভব বলে জানান এই উদ্যোক্তা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মধু উৎপাদন বেশি হবে বলেন জানান মৌ খামারি। এদিকে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নতুন পদ্ধতিতে মৌমাছি পালন দেখতে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ।

জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, জীবননগর উপজেলায় এই প্রথম বাক্সে মধু চাষ দেখছি। যারা এই মধু চাষ করছেন, তারা আমাদের এলাকার স্থায়ী কেউ না। তাঁরা ভ্রাম্যমাণভাবে মধুর চাষ করছে। তবে মৌ-চাষী মাহফুজুর রহমান মৌমাছি পালন ও মধু উৎপাদন করে এ উপজেলাতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাজারে খাটি মধুর চাহিদা ব্যাপক, তবে প্রশিক্ষণ নিয়ে যদি কোনো ব্যক্তি বাণিজ্যিকভাবে মধুর চাষ করেন, তাহলে লাভবান হওয়া সম্ভব।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জীবননগরে ভ্রাম্যমাণ মৌ চাষ

আপলোড টাইম : ০৮:৫৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ জুন ২০২২

মিঠুন মাহমুদ/এ আর ডাবলু: জীবননগর উপজেলার বৈদ্যনাথপুর গ্রামের একটি আমবাগানে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ মৌমাছির খামার। ভ্রাম্যমাণ মৌ খামারী মাহফুজুর রহমানের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানায়। শখের বসে নিজ এলাকায় তাঁর আমবাগানে ২০১০ সালে অল্প পরিসরে ৪০টি বক্সে মৌমাছি পালন শুরু করেন। বর্তমানে ১৫০টি বক্সে মৌমাছি পালন করছেন। ঢাকা থেকে মৌমাছি পালনের ওপর প্রশিক্ষণ নেন তিনি। তারপর বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক পরিসরে মৌমাছি খামার গড়ে তোলেন। নিজে ও দুইজন লোক মিলে পরিচর্যা করেন। এই মৌমাছি দল বেধে উড়ে না গেলে কোনো সমস্যা হয় না এরা খুব শান্ত প্রাণী। মৌমাছির রোগ বালাই ও খরচ কম হওয়ায় লাভজনক ব্যবসা বলে জানান মাহফুজুর রহমান। ১২ বছর ধরে তিনি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন মৌমাছি। মৌ খামার থেকে প্রতিবছর ২০-২৫ মণ মধু উৎপাদন করে বাজারে খাঁটি মধু বিক্রি করছেন। মৌমাছির মাধ্যমে ফুল ও ফলের পরাগায়ন হওয়ায় উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মৌ খামারে মধু ও মাছি তৈরির জন্য রয়েছে মেলেফিরিয়া জাতের রাণী, পুরুষ ও কর্মী মৌমাছি। রাণী ও পুরুষ মৌমাছি বংশ বৃদ্ধি করে, আর কর্মী মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। ৫০টি দ্বিতল ও ১০০টি একক বাক্স রয়েছে। বাক্সগুলো কাঠের তৈরি। বাক্সের দুটি মুখ দিয়ে মাছিগুলো বের হয়। একক মৌ বাক্সে ৭টি ফ্রেম ও দ্বিতল বাক্সে রয়েছে ১২টি ফ্রেম। প্রতিটি ফ্রেমে এক থেকে দেড় হাজার মৌমাছি থাকে। বিভিন্ন ফুল ও ফলের মৌসুমে মৌমাছিগুলো নেওয়া হয় বাক্স ধরে মধু সংগ্রহের জন্য। মাছিগুলো দল বেঁধে উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহ করে আবার ফিরে আসে বাক্সে।

মাহফুজুর রহমান বলেন, এই মৌমাছি ডেনমার্ক থেকে আসে, এগুলো আমাদের এলাকার মতো না। এরা সবসময় দল বেধে থাকতে ভালোবাসে। বছরের অর্ধেক সময় দেশের বিভিন্ন জেলায় মৌমাছির বাক্সগুলো নিয়ে মধু সংগ্রহ করতে হয়। প্রতি কেজি মধু সাড়ে ৩ শ টাকা থেকে সাড়ে ৪ শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। বাজারে খাঁটি মধুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে এই মধু চাষ করতে হলে প্রশিক্ষণ নিতে হবে, তা না হলে মৌমাছি মারা যাবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মৌমাছি পালন করলে ফসল ও মধু উৎপাদন সম্ভব বলে জানান এই উদ্যোক্তা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মধু উৎপাদন বেশি হবে বলেন জানান মৌ খামারি। এদিকে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নতুন পদ্ধতিতে মৌমাছি পালন দেখতে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ।

জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, জীবননগর উপজেলায় এই প্রথম বাক্সে মধু চাষ দেখছি। যারা এই মধু চাষ করছেন, তারা আমাদের এলাকার স্থায়ী কেউ না। তাঁরা ভ্রাম্যমাণভাবে মধুর চাষ করছে। তবে মৌ-চাষী মাহফুজুর রহমান মৌমাছি পালন ও মধু উৎপাদন করে এ উপজেলাতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাজারে খাটি মধুর চাহিদা ব্যাপক, তবে প্রশিক্ষণ নিয়ে যদি কোনো ব্যক্তি বাণিজ্যিকভাবে মধুর চাষ করেন, তাহলে লাভবান হওয়া সম্ভব।