ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

জমজমাট সরোজগঞ্জ গুড়ের হাট, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছেন ক্রেতা-বিক্রেতা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৮:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২২
  • / ৩৫ বার পড়া হয়েছে

দেশজুড়ে চুয়াডাঙ্গার খেজুরের গুড় ও নলেন পাটালির সুখ্যাতি রয়েছে। স্বাদ-গন্ধেও অতুলনীয়। খেজুরের গুড় ও নলেনপাটালি বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে এখন জমজমাট ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ হাট। হাটের দিন এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ক্রেতা-বিক্রেতা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কুয়াকাটাসহ সারা দেশে এখানকার গুড় সরবরাহ করা হয়। চলতি শীতের মৌসুমে ২০ কোটি টাকার গুড় বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ গুড়ের হাটটি স্থানীয় সরোজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে ১৯৪৭ সাল থেকে সপ্তাহে সোম ও শুক্রবার বসে। এ নামের বিষয় নিয়েও রয়েছে কৌতুহল। দেশ বিভাগের আগে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার এই স্থানটিতে দুই জমিদার কর্তৃত্ব করতেন। রাস্তার উত্তর দিকে সরোজ বাবু দক্ষিণ দিকে সরোৎ বাবু ব্যবসা করতেন। এখনও ওই দুই জমিদারের নামানুসারে রাস্তার দেওয়া দুধারে ব্যবসায়ীরা দু স্থানের নামে দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর রেল স্টেশনে শনি ও মঙ্গলবার গুড় ও পাটালির বড় হাট বসে। সেখানেও প্রচুর গুড় ও পাটালি বিকিকিনি হয়। এই গুড়ের হাটটিও অনেক পুরোনো।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তেঘরি গ্রামের গাছী আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‘আমার ৮০টা খেজুর গাছ আছে। প্রতি সপ্তাহে ১১টা করে গুড় ওঠাই। শুক্রবার ও সোমবারে এখানে গুড়ের হাট বসে।’ তিনি জানান, এদিন ২ হাজার ৮০ টাকা হিসেবে ১১ ভাঁড় গুড় ২২ হাজার ৮৮০ টাকায় বিক্রি করেছেন। তিতুদহ গ্রামের জহুরুল ইসলাম জানান, প্রতি সপ্তাহে তাঁর ৬টি করে গুড় ওঠে। সে হিসেবে শুক্রবার হাটে ৬টি গুড় তিনি ১০ হাজার ৮ শ টাকায় বিক্রয় করেছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের গুড় ব্যবসায়ী জানান, ‘আবহাওয়ার কারণে গুড়ের আমদানি কম। শুক্রবার সরোজগঞ্জ হাটে অন্য দিনের তুলনায় প্রতি ভাড় গুড়ের দাম ২ শ টাকা বেশি। যে গুড় অন্য হাটে ১ হাজার ৭ শ থেকে ১ হাজার ৮ শ টাকায় কিনতাম, তা আজ ভাঁড় ২ হাজার টাকায় কিনলাম।’ তিনি জানান, ২০০ ভাঁড় গুড় ২ হাজার টাকা দরে গড়ে ৪ লাখ টাকায় কিনলাম। তিনি পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও কুয়াকাটায় বাজারে বিক্রি গুড় সরবরাহ করে থাকেন।

গত শুক্রবার ঝিনাইদহের শৈলকুপার থেকে গুড় কিনতে আসা সনজিৎ কর্মকার জানান, সরোজগঞ্জ হাট গুড়ের বড় মুকাম। তিনি জানান, ২৫ ভাড় গুড় ৪০ হাজার টাকায় কিনেছেন। তিনি জানান, ঢাকার সাভারসহ বিভিন্ন মুকামে তিনি গুড় সরবরাহ করে থাকেন।

সিরাজগঞ্জ থেকে গুড় কিনতে আসা ব্যবসায়ী হাজি ইসারুহুল আমীন জানান, এ বাজারে গুড়ের মান ভালো, তবে এদিন আমদানি কম হওয়ায় গুড়ের দাম বেশি। উল্লাহপাড়া গুড় ব্যবসায়ী হাসান আলী একই কথা জানান।

চুয়াডাঙ্গা বোয়ালিয়া গ্রামের নবীছদ্দিন জানান, গুড় বিকিকিনি করার পর গুড়ের ভাড়ের মাথা বাঁধি। ভাঁড় প্রতি দেড় টাকা থেকে ২ টাকা পাই। প্রায় ৩০ বছর যাবৎ এই কাজ করে সচ্ছলভাবে জীবন পরিচালনা করে আসছি। একই উপজেলার জাহিদুল ইসলাম জানান, ‘আমি এই বাজারে খালি মাটির ভাঁড় সরবরাহ করে থাকি। মাঝারি ভাঁড় ৫০ টাকা এবং বড় সাইজের ভাঁড় ১ শ টাকা করে বিকিকিনি হয়।

বান্দরবান বানিয়াচড় থেকে গুড় কিনতে আসা আশরাফুল আলম জানান, চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী গুড়ের হাট সরোজগঞ্জ থেকে গুড় সংগ্রহ করে ঢাকা, সিলেট ও বানিয়াচড় মুকামে গুড় সরবরাহ করেন।

চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জ বাজার উন্নয়র কমিটির সভাপতি শেখ আব্দুল্লাহ জানান, ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ বাজার কৃষি ভিত্তিক হাট। এই হাটের সুনামের কারণে ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুরসহ দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা গুড় নিয়ে হাটে আসেন।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. আব্দুল মাজেদ বলেন, চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় ২ হাজার ৫ শ মেট্রিকটন গুড় তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। আশা করা হচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি গুড় উৎপন্ন হবে এই মৌসুমে। তিনি আরও জানান, মৌসুমের শুরু থেকে গুড় কেজি প্রতি ১ শ টাকা থেকে ১২০ টাকা ও পাটালি ১৫০ টাকা থেকে ২ শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান বাজার মূল্য না ধরে যদি ৮০ টাকা কেজি ধরে ২৫ টন গুড় বিক্রয় করা যায় তবুও প্রায় ২০ কোটি টাকার গুড় বিক্রি হবে এই মৌসুমে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জমজমাট সরোজগঞ্জ গুড়ের হাট, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছেন ক্রেতা-বিক্রেতা

আপলোড টাইম : ১০:১৮:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২২

দেশজুড়ে চুয়াডাঙ্গার খেজুরের গুড় ও নলেন পাটালির সুখ্যাতি রয়েছে। স্বাদ-গন্ধেও অতুলনীয়। খেজুরের গুড় ও নলেনপাটালি বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে এখন জমজমাট ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ হাট। হাটের দিন এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ক্রেতা-বিক্রেতা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কুয়াকাটাসহ সারা দেশে এখানকার গুড় সরবরাহ করা হয়। চলতি শীতের মৌসুমে ২০ কোটি টাকার গুড় বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ গুড়ের হাটটি স্থানীয় সরোজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে ১৯৪৭ সাল থেকে সপ্তাহে সোম ও শুক্রবার বসে। এ নামের বিষয় নিয়েও রয়েছে কৌতুহল। দেশ বিভাগের আগে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার এই স্থানটিতে দুই জমিদার কর্তৃত্ব করতেন। রাস্তার উত্তর দিকে সরোজ বাবু দক্ষিণ দিকে সরোৎ বাবু ব্যবসা করতেন। এখনও ওই দুই জমিদারের নামানুসারে রাস্তার দেওয়া দুধারে ব্যবসায়ীরা দু স্থানের নামে দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর রেল স্টেশনে শনি ও মঙ্গলবার গুড় ও পাটালির বড় হাট বসে। সেখানেও প্রচুর গুড় ও পাটালি বিকিকিনি হয়। এই গুড়ের হাটটিও অনেক পুরোনো।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তেঘরি গ্রামের গাছী আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‘আমার ৮০টা খেজুর গাছ আছে। প্রতি সপ্তাহে ১১টা করে গুড় ওঠাই। শুক্রবার ও সোমবারে এখানে গুড়ের হাট বসে।’ তিনি জানান, এদিন ২ হাজার ৮০ টাকা হিসেবে ১১ ভাঁড় গুড় ২২ হাজার ৮৮০ টাকায় বিক্রি করেছেন। তিতুদহ গ্রামের জহুরুল ইসলাম জানান, প্রতি সপ্তাহে তাঁর ৬টি করে গুড় ওঠে। সে হিসেবে শুক্রবার হাটে ৬টি গুড় তিনি ১০ হাজার ৮ শ টাকায় বিক্রয় করেছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের গুড় ব্যবসায়ী জানান, ‘আবহাওয়ার কারণে গুড়ের আমদানি কম। শুক্রবার সরোজগঞ্জ হাটে অন্য দিনের তুলনায় প্রতি ভাড় গুড়ের দাম ২ শ টাকা বেশি। যে গুড় অন্য হাটে ১ হাজার ৭ শ থেকে ১ হাজার ৮ শ টাকায় কিনতাম, তা আজ ভাঁড় ২ হাজার টাকায় কিনলাম।’ তিনি জানান, ২০০ ভাঁড় গুড় ২ হাজার টাকা দরে গড়ে ৪ লাখ টাকায় কিনলাম। তিনি পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও কুয়াকাটায় বাজারে বিক্রি গুড় সরবরাহ করে থাকেন।

গত শুক্রবার ঝিনাইদহের শৈলকুপার থেকে গুড় কিনতে আসা সনজিৎ কর্মকার জানান, সরোজগঞ্জ হাট গুড়ের বড় মুকাম। তিনি জানান, ২৫ ভাড় গুড় ৪০ হাজার টাকায় কিনেছেন। তিনি জানান, ঢাকার সাভারসহ বিভিন্ন মুকামে তিনি গুড় সরবরাহ করে থাকেন।

সিরাজগঞ্জ থেকে গুড় কিনতে আসা ব্যবসায়ী হাজি ইসারুহুল আমীন জানান, এ বাজারে গুড়ের মান ভালো, তবে এদিন আমদানি কম হওয়ায় গুড়ের দাম বেশি। উল্লাহপাড়া গুড় ব্যবসায়ী হাসান আলী একই কথা জানান।

চুয়াডাঙ্গা বোয়ালিয়া গ্রামের নবীছদ্দিন জানান, গুড় বিকিকিনি করার পর গুড়ের ভাড়ের মাথা বাঁধি। ভাঁড় প্রতি দেড় টাকা থেকে ২ টাকা পাই। প্রায় ৩০ বছর যাবৎ এই কাজ করে সচ্ছলভাবে জীবন পরিচালনা করে আসছি। একই উপজেলার জাহিদুল ইসলাম জানান, ‘আমি এই বাজারে খালি মাটির ভাঁড় সরবরাহ করে থাকি। মাঝারি ভাঁড় ৫০ টাকা এবং বড় সাইজের ভাঁড় ১ শ টাকা করে বিকিকিনি হয়।

বান্দরবান বানিয়াচড় থেকে গুড় কিনতে আসা আশরাফুল আলম জানান, চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী গুড়ের হাট সরোজগঞ্জ থেকে গুড় সংগ্রহ করে ঢাকা, সিলেট ও বানিয়াচড় মুকামে গুড় সরবরাহ করেন।

চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জ বাজার উন্নয়র কমিটির সভাপতি শেখ আব্দুল্লাহ জানান, ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ বাজার কৃষি ভিত্তিক হাট। এই হাটের সুনামের কারণে ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুরসহ দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা গুড় নিয়ে হাটে আসেন।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. আব্দুল মাজেদ বলেন, চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় ২ হাজার ৫ শ মেট্রিকটন গুড় তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। আশা করা হচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি গুড় উৎপন্ন হবে এই মৌসুমে। তিনি আরও জানান, মৌসুমের শুরু থেকে গুড় কেজি প্রতি ১ শ টাকা থেকে ১২০ টাকা ও পাটালি ১৫০ টাকা থেকে ২ শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান বাজার মূল্য না ধরে যদি ৮০ টাকা কেজি ধরে ২৫ টন গুড় বিক্রয় করা যায় তবুও প্রায় ২০ কোটি টাকার গুড় বিক্রি হবে এই মৌসুমে।