ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকই দালালের সহায়তাকারী, একজন আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ১১:২৫:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ এপ্রিল ২০২২
  • / ২৬ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালকে দালালমুক্ত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, উপজেলা প্রশাসন ও সদর থানা একত্রে তদারকি করছে। ইতঃমধ্যে হাসপাতাল চত্বরে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে জড়িতদের হাসপাতালে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার সকালে কর্তব্যরত অবস্থায় হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (আয়ুর্বেদিক) ডা. হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই রোগীকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধি (দালাল) হাসপাতাল থেকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেওয়ার সময় স্থানীয়দের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে। ঘটনার খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন ঘটনাস্থলে আসেন। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অভিযুক্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধিকে পরবর্তীতে আর কখনো হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে না যাওয়ার শর্তে মুচলেকায় মুক্তি দেন। মুচলেকায় মুক্তি পাওয়া গ্রিন লাইফ মেডিকেল সেন্টার ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধি আশিক (১৬) নামের এক কিশোর।

জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার সকালে চুয়াডাঙ্গার শ্যাকড়াতলা মোড় থেকে নিজের অসুস্থ মেয়ে শামসুন্নাহারকে চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বর্হিবিভাগের টিকেট নিয়ে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (আয়ুর্বেদিক) ডা. হুমায়ুন কবিরের কক্ষে যান। পরবর্তীতে ডা. হুমায়ুন কবির রোগী শামসুন্নাহারের রোগ নির্ণয়ের জন্য তার প্রেসক্রিপশনে তিনটি পরীক্ষা লেখেন ও পরীক্ষাগুলি করানোর জন্য রোগীকে হাসপাতাল সড়কের গ্রিন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে যেতে বলেন। এসময় ডা. হুমায়ুন কবিরের কবিরের কক্ষের রোগীদের সিরিয়াল সহায়তাকারী ও গ্রিন লাইফ মেডিকেল সেন্টারের প্রতিনিধি ওই কিশোর হাসপাতাল থেকে তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছিলেন। হাসপাতালের প্রধান ফটক দিয়ে রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় ব্যক্তিরা গ্রিন লাইফ মেডিকেল সেন্টারের ওই দুজন প্রতিনিধি ও রোগীকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করে। এদিকে, ডা. হুমায়ুন কবির হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট আশিককে তার চেম্বারের তালা খোলা ও বন্ধ করার কাজে নিয়োজিত রেখেছেন বলে জানান।
ভুক্তভোগী রোগী শামসুন্নাহারের মা আদরী খাতুন বলেন, ‘অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে যায় ডাক্তার দেখানোর জন্য। টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট নিলে আমাদের ২০৯ নম্বর কক্ষে ডা. হুমায়ুন কবিরের কাছে যেতে বলে। এসম মেয়েকে নিয়ে ডা. হুমায়ুন কবিরের কক্ষে গেলে তিনি মেয়ের রোগ নির্ণয়ের জন্য তিনটি পরীক্ষা দেন ও পরীক্ষাগুলো গ্রিন লাইফের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাক্তার মশিউর রহমানের নিকট থেকে করানোর জন্য বলেন। তখন তার কক্ষের একটি ছেলে আমাদেরকে ডাক্তার মশিউর রহমানের নিকট নিয়ে যাচ্ছিল। হাসপাতাল থেকে বাইরে যাওয়ার সময় কয়েকজন ব্যক্তি আমাদেরকে হাসপাতালে বাইরে যেয়ে পরীক্ষা করানোর বিষয়ে জানতে পেরে ওই ছেলেকে ও আমাদেরকে হাসপাতালের আরএমও-এর নিকটে নিয়ে যায়। আমরা সাধারণ মানুষ অসুস্থ হলে হাসপাতালে আসি, কিন্তু হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিষয়ে আমরা কিছু বুঝি না। ডাক্তার আমাদেরকে যা বলেছে আমরা তাই করেছি।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান বলেন, ‘আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ডা. হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগটি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তিনি একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক, তিনি রোগীদের এত পরীক্ষা লিখতে পারেন না। যদি চিকিৎসার প্রয়োজনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন তবে সে পরীক্ষাতো হাসপাতালেই সম্ভব। হাসপাতাল থেকে দালালের মাধ্যমে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠানো অপরাধ। যদি তার বিরুদ্ধে এ ধরণের কোনো কর্মকা- ঘটানোর প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাপসাতালকে সম্পূর্ণরুপে দালালমুক্ত করতে আমরা ইতঃমধ্যেই কাজ শুরু করেছি। হাপসাতালে কোনো চিকিৎসক কর্তব্যরত অবস্থায় দালাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে সক্ষতা রাখতে পারবে না।’

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি ডা. মার্টিন হিরক চৌধুরী বলেন, ‘একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক আয়ুর্বেদিক বিষয়ে লেখাপড়া করেন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করেন। একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসককে আল্ট্রাসনোগ্রাফ বা ইসিজির বিষয়ে পড়ানো হয় না। সুতরাং এই জাতীয় পরীক্ষা লেখাও একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের বৈধ নয়।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ এস এম ফাতেহ আকরাম বলেন, ‘হাসপাতালে দালালদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সদর থানার ওসি হাসপাতালকে দালাল মুক্ত করতে আমাদেরকে সাহায্য করছেন। এমন পরিস্থিতিতে দালালদের সঙ্গে যদি কোনো চিকিৎসকের জড়িত থাকার বিষয়ে অভিযোগ ও প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে, এবিষয়ে জানতে চেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (আয়ুর্বেদিক) ডা. হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকই দালালের সহায়তাকারী, একজন আটক

আপলোড টাইম : ১১:২৫:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ এপ্রিল ২০২২

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালকে দালালমুক্ত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, উপজেলা প্রশাসন ও সদর থানা একত্রে তদারকি করছে। ইতঃমধ্যে হাসপাতাল চত্বরে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে জড়িতদের হাসপাতালে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার সকালে কর্তব্যরত অবস্থায় হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (আয়ুর্বেদিক) ডা. হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই রোগীকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধি (দালাল) হাসপাতাল থেকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেওয়ার সময় স্থানীয়দের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে। ঘটনার খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন ঘটনাস্থলে আসেন। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অভিযুক্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধিকে পরবর্তীতে আর কখনো হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে না যাওয়ার শর্তে মুচলেকায় মুক্তি দেন। মুচলেকায় মুক্তি পাওয়া গ্রিন লাইফ মেডিকেল সেন্টার ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধি আশিক (১৬) নামের এক কিশোর।

জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার সকালে চুয়াডাঙ্গার শ্যাকড়াতলা মোড় থেকে নিজের অসুস্থ মেয়ে শামসুন্নাহারকে চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বর্হিবিভাগের টিকেট নিয়ে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (আয়ুর্বেদিক) ডা. হুমায়ুন কবিরের কক্ষে যান। পরবর্তীতে ডা. হুমায়ুন কবির রোগী শামসুন্নাহারের রোগ নির্ণয়ের জন্য তার প্রেসক্রিপশনে তিনটি পরীক্ষা লেখেন ও পরীক্ষাগুলি করানোর জন্য রোগীকে হাসপাতাল সড়কের গ্রিন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে যেতে বলেন। এসময় ডা. হুমায়ুন কবিরের কবিরের কক্ষের রোগীদের সিরিয়াল সহায়তাকারী ও গ্রিন লাইফ মেডিকেল সেন্টারের প্রতিনিধি ওই কিশোর হাসপাতাল থেকে তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছিলেন। হাসপাতালের প্রধান ফটক দিয়ে রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় ব্যক্তিরা গ্রিন লাইফ মেডিকেল সেন্টারের ওই দুজন প্রতিনিধি ও রোগীকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করে। এদিকে, ডা. হুমায়ুন কবির হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট আশিককে তার চেম্বারের তালা খোলা ও বন্ধ করার কাজে নিয়োজিত রেখেছেন বলে জানান।
ভুক্তভোগী রোগী শামসুন্নাহারের মা আদরী খাতুন বলেন, ‘অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে যায় ডাক্তার দেখানোর জন্য। টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট নিলে আমাদের ২০৯ নম্বর কক্ষে ডা. হুমায়ুন কবিরের কাছে যেতে বলে। এসম মেয়েকে নিয়ে ডা. হুমায়ুন কবিরের কক্ষে গেলে তিনি মেয়ের রোগ নির্ণয়ের জন্য তিনটি পরীক্ষা দেন ও পরীক্ষাগুলো গ্রিন লাইফের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাক্তার মশিউর রহমানের নিকট থেকে করানোর জন্য বলেন। তখন তার কক্ষের একটি ছেলে আমাদেরকে ডাক্তার মশিউর রহমানের নিকট নিয়ে যাচ্ছিল। হাসপাতাল থেকে বাইরে যাওয়ার সময় কয়েকজন ব্যক্তি আমাদেরকে হাসপাতালে বাইরে যেয়ে পরীক্ষা করানোর বিষয়ে জানতে পেরে ওই ছেলেকে ও আমাদেরকে হাসপাতালের আরএমও-এর নিকটে নিয়ে যায়। আমরা সাধারণ মানুষ অসুস্থ হলে হাসপাতালে আসি, কিন্তু হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিষয়ে আমরা কিছু বুঝি না। ডাক্তার আমাদেরকে যা বলেছে আমরা তাই করেছি।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান বলেন, ‘আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ডা. হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগটি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তিনি একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক, তিনি রোগীদের এত পরীক্ষা লিখতে পারেন না। যদি চিকিৎসার প্রয়োজনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন তবে সে পরীক্ষাতো হাসপাতালেই সম্ভব। হাসপাতাল থেকে দালালের মাধ্যমে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠানো অপরাধ। যদি তার বিরুদ্ধে এ ধরণের কোনো কর্মকা- ঘটানোর প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাপসাতালকে সম্পূর্ণরুপে দালালমুক্ত করতে আমরা ইতঃমধ্যেই কাজ শুরু করেছি। হাপসাতালে কোনো চিকিৎসক কর্তব্যরত অবস্থায় দালাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে সক্ষতা রাখতে পারবে না।’

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি ডা. মার্টিন হিরক চৌধুরী বলেন, ‘একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক আয়ুর্বেদিক বিষয়ে লেখাপড়া করেন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করেন। একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসককে আল্ট্রাসনোগ্রাফ বা ইসিজির বিষয়ে পড়ানো হয় না। সুতরাং এই জাতীয় পরীক্ষা লেখাও একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের বৈধ নয়।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ এস এম ফাতেহ আকরাম বলেন, ‘হাসপাতালে দালালদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সদর থানার ওসি হাসপাতালকে দালাল মুক্ত করতে আমাদেরকে সাহায্য করছেন। এমন পরিস্থিতিতে দালালদের সঙ্গে যদি কোনো চিকিৎসকের জড়িত থাকার বিষয়ে অভিযোগ ও প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে, এবিষয়ে জানতে চেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (আয়ুর্বেদিক) ডা. হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।