ইপেপার । আজ রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ১৩৯ মিলিমিটার রেকর্ড, চরম দুর্ভোগে খেটে খাওয়া মানুষ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:১৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ৩৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গায় এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। প্রবল বৃষ্টির কারণে মাঠঘাট, পুকুর সব পানিতে থৈ থৈ করছে। অতিমাত্রায় বৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। কাজে যোগ দিতে না পারায় বিপাকে পড়েন তাঁরা। এদিকে, জেলার উপজেলাগুলোর বিভিন্ন গ্রামে বিরামহীন বৃষ্টির পানিতে বিধ্বস্ত হয়েছে বেশকিছু মাটির তৈরি বাড়িঘর। মেইন রাস্তা ভেঙে জনগণ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বাড়ির উঠানসহ এলাকার অধিকাংশ রাস্তা রয়েছে পানির নিচে। তলিয়ে গেছে মাঠের বিস্তীর্ণ ধানের জমিসহ বিভিন্ন ফসলের খেত। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না কর্মব্যস্ত সাধারণ জনগণ।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামাদুল হক জানান, কয়েকদিন ধরেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে নিম্নচাপের প্রভাবে গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকেই অতিমাত্রায় বৃষ্টি শুরু হয় এবং দুপুর ১২টায় কিছুটা কমে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এর আগে এ বছর বর্ষায় ভরা মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৬২ মিলিমিটার।

তিনি আরও জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে এই বৃষ্টিপাত। নিম্নচাপটি বর্তমানে লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এবং আজ বুধবার এই বৃষ্টি অব্যহত থাকবে। বৃষ্টির কারণে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রাও হ্রাস পেয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের তারিনীপুর গ্রামে ৩০টি পরিবার পানিবন্দি। বাড়ির উঠানের ওপরে হাঁটু সমান পানি। মাটির তৈরি বসতঘরের দেয়াল ধসে পড়েছে ও পুরাতন বাস্তুপুর গ্রামের মেইন রাস্তা ভেঙে চলে গেছে নদীর গর্ভে। প্রায় সপ্তাহব্যাপী বিরামহীন বৃষ্টির ফলে এলাকার বেশিরভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে হাউলী ইউনিয়নের তারিনীপুর গ্রামের জনগণ। এছাড়া গ্রামের মধ্যে জমে থাকা বৃষ্টির পানি বের করার জন্য নেই কোনো কালভার্ট বা ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ফলে বৃষ্টির সমস্ত পানিই থেকে যাচ্ছে গ্রামের ভেতরে। অতিমাত্রায় বৃষ্টির পানিতে বেশ কয়েকজনের মাটির তৈরি বসতঘরের দেয়াল ধসে পড়তেও দেখা গেছে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আশাদুল হক বলেন, দিনের বেলায় কষ্ট করে চলাফেরা করলেও ভাঙনের ভয়ে রাতে ঘুম হয় না। তাছাড়া সাপ ও পোকামাকড়ের ভয় তো নিত্যসঙ্গী। টয়লেট করা নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছে পরিবারের সদস্যরা। অন্যত্র যাওয়ার সুযোগ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন ওই পরিবারের সদস্যরা। তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবুর সুদৃষ্টি কামনা করছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ও এলাকাবাসী।

বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘লাগাতার বৃষ্টির পানিতে কালভার্ট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় ৩০টি বাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আমার ঘরের মধ্যে পানি উঠে আড়াই বিঘা জমির ৫০ মণ শুকনো ধান ভিজে গেছে। যদি রোদ না ওঠে তাহলে আমার প্রায় ৭০ হাজার টাকার ধান নষ্ট হয়ে যাবে।’ পুরাতন বাস্তুপুরের জনগণ জানান, ১০ থেকে ১৫টি গ্রামের মানুষ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। আর সেই রাস্তাটি যদি ভেঙে যায় তাহলে কীভাবে চলাচল করবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই রাস্তাটি মেরামত করা প্রয়োজন।

এবিষয়ে হাউলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিষয়টি আমি জানি না, এখন জানতে পারলাম। সরেজমিনে গিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি, আজকেই রাস্তাটি মেরামত করা হবে।’ দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সানজিদা বেগম বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। খোঁজ নিয়ে দেখছি, যদি পানিবন্দি হয়ে পড়ে, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ১৩৯ মিলিমিটার রেকর্ড, চরম দুর্ভোগে খেটে খাওয়া মানুষ

আপলোড টাইম : ০৮:১৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গায় এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। প্রবল বৃষ্টির কারণে মাঠঘাট, পুকুর সব পানিতে থৈ থৈ করছে। অতিমাত্রায় বৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। কাজে যোগ দিতে না পারায় বিপাকে পড়েন তাঁরা। এদিকে, জেলার উপজেলাগুলোর বিভিন্ন গ্রামে বিরামহীন বৃষ্টির পানিতে বিধ্বস্ত হয়েছে বেশকিছু মাটির তৈরি বাড়িঘর। মেইন রাস্তা ভেঙে জনগণ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বাড়ির উঠানসহ এলাকার অধিকাংশ রাস্তা রয়েছে পানির নিচে। তলিয়ে গেছে মাঠের বিস্তীর্ণ ধানের জমিসহ বিভিন্ন ফসলের খেত। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না কর্মব্যস্ত সাধারণ জনগণ।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামাদুল হক জানান, কয়েকদিন ধরেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে নিম্নচাপের প্রভাবে গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকেই অতিমাত্রায় বৃষ্টি শুরু হয় এবং দুপুর ১২টায় কিছুটা কমে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এর আগে এ বছর বর্ষায় ভরা মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৬২ মিলিমিটার।

তিনি আরও জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে এই বৃষ্টিপাত। নিম্নচাপটি বর্তমানে লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এবং আজ বুধবার এই বৃষ্টি অব্যহত থাকবে। বৃষ্টির কারণে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রাও হ্রাস পেয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের তারিনীপুর গ্রামে ৩০টি পরিবার পানিবন্দি। বাড়ির উঠানের ওপরে হাঁটু সমান পানি। মাটির তৈরি বসতঘরের দেয়াল ধসে পড়েছে ও পুরাতন বাস্তুপুর গ্রামের মেইন রাস্তা ভেঙে চলে গেছে নদীর গর্ভে। প্রায় সপ্তাহব্যাপী বিরামহীন বৃষ্টির ফলে এলাকার বেশিরভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে হাউলী ইউনিয়নের তারিনীপুর গ্রামের জনগণ। এছাড়া গ্রামের মধ্যে জমে থাকা বৃষ্টির পানি বের করার জন্য নেই কোনো কালভার্ট বা ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ফলে বৃষ্টির সমস্ত পানিই থেকে যাচ্ছে গ্রামের ভেতরে। অতিমাত্রায় বৃষ্টির পানিতে বেশ কয়েকজনের মাটির তৈরি বসতঘরের দেয়াল ধসে পড়তেও দেখা গেছে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আশাদুল হক বলেন, দিনের বেলায় কষ্ট করে চলাফেরা করলেও ভাঙনের ভয়ে রাতে ঘুম হয় না। তাছাড়া সাপ ও পোকামাকড়ের ভয় তো নিত্যসঙ্গী। টয়লেট করা নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছে পরিবারের সদস্যরা। অন্যত্র যাওয়ার সুযোগ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন ওই পরিবারের সদস্যরা। তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবুর সুদৃষ্টি কামনা করছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ও এলাকাবাসী।

বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘লাগাতার বৃষ্টির পানিতে কালভার্ট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় ৩০টি বাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আমার ঘরের মধ্যে পানি উঠে আড়াই বিঘা জমির ৫০ মণ শুকনো ধান ভিজে গেছে। যদি রোদ না ওঠে তাহলে আমার প্রায় ৭০ হাজার টাকার ধান নষ্ট হয়ে যাবে।’ পুরাতন বাস্তুপুরের জনগণ জানান, ১০ থেকে ১৫টি গ্রামের মানুষ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। আর সেই রাস্তাটি যদি ভেঙে যায় তাহলে কীভাবে চলাচল করবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই রাস্তাটি মেরামত করা প্রয়োজন।

এবিষয়ে হাউলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিষয়টি আমি জানি না, এখন জানতে পারলাম। সরেজমিনে গিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি, আজকেই রাস্তাটি মেরামত করা হবে।’ দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সানজিদা বেগম বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। খোঁজ নিয়ে দেখছি, যদি পানিবন্দি হয়ে পড়ে, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’