ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গার মোকিম-ঝড়ুর আপিল অকার্যকর

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৫৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১
  • / ৪২ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গার একটি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া মোকিম ও ঝড়ুর আপিল আবেদন অকার্যকর বলে তা খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। ওই দুই আসামির নিয়মিত আপিল নিষ্পত্তির আগে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। গতকাল ওই আপিলের শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, এই যে মোকিম ও ঝড়ুর বিষয়ে বিস্তারিত না জেনেই আইনজীবী বলে দিলেন। এই কোর্টের ওপর এমন একটা ব্লেইম (অভিযোগ) আসে। এটা বিরাট বিব্রতকর কোর্টের জন্য। আমরা প্রত্যেকটা ফাঁসি দেয়ার আগে ভালো করে দেখি। ফাঁসি দেয়ার আগে আমরা কম করে হলেও ১০ বার চিন্তা করি।

শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, আমাদেরও ভুল হতে পারে। আমাদের এই ক্ষেত্রে একটু চাওয়া হলো, আমাদের হয়তো আরো সতর্ক হতে হবে। এ বিষয়ে একটা গাইডলাইন দিলে ভালো হয়। এরপর আদালত ওই দুই আসামির নিয়মিত আপিল অকার্যকর বলে খারিজ করে দেন। পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিষয়ে গাইডলাইন থাকবে বলে জানিয়ে দেন আদালত। একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আজকের কার্যতালিকার ৭ নম্বর আইটেমে সুজনের যে বিষয়টি, সেখানে তো তার জেল আপিল শুনানিতে আইনজীবী আর্গুমেন্টই করেননি। তবে তার জেল আপিলটি আমরা শুনে তাকে (সুজনকে) খালাস দিয়েছি। কিন্তু তার রেগুলার আপিলটি রয়ে গেছে। প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, আমাদের এখানে এখনো সবকিছু ডিজিটাল হয়নি। ডিজিটাল হলে সাথে সাথে ডিটেক্ট করা যেত যে কোনো মামলার কোনটা থেকে কোনটা এসেছে। কিন্তু আমাদের এখানো তো ডিজিটাল হয়নি, এটাই সমস্যা। এ সময় আদালতে আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

আইনজীবীরা জানান, ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন কুমারি ইউনিয়নের দুর্লভপুর এলাকার সাবেক মেম্বার মো: মনোয়ার হোসেন খুন হন। ওই ঘটনায় তার চাচাতো ভাই মো: অহিমউদ্দিন বাদি হয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারে মোকিম ও ঝড়ুর নাম আসে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ মামলার বিচারে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড, দুইজনকে যাবজ্জীবন ও অপর আসামিদের খালাস দেয় চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন একই ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, মোকিম ও ঝড়ু। বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুসারে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য মামলাটি হাইকোর্টে যায়। মামলার ডেথ রেফারেন্স নম্বর ছিল ৩৯/২০০৮। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৩ সালের ৭ জুলাই ও ৮ জুলাই মামলার রায় ঘোষণা করে। বাকি আসামিদের খালাস দেয়া হয়। পরে মোকিম (আপিল নম্বর ১১১/২০১৩) ও ঝড়ু (আপিল নম্বর ১০৭/২০১৩) মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন। সম্প্রতি মোকিম ও ঝড়ুর আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসে। এ বিষয়ে গত ৩ নভেম্বর আসামি পক্ষের আইনজীবী মো: হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন যে, আপিল নিষ্পত্তির আগেই মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশ হয়।

এরপর গত ৪ নভেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আসামি মোকিম ও ঝড়ু জেলখানা থেকে যে আপিল করেছিলেন, সেটি ছিল জেল আপিল। তিনজন বিচারপতি শুনানি করে সে জেল আপিল ১৫ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে রায়ের মাধ্যমে খারিজ করে দেন। পরে আসামিরা রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষার আবেদন করলে সেটিও খারিজ হয়েছে। আপিল এবং প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হওয়ার পরেই স্বাভাবিকভাবে আসামিদের ফাঁসির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। কিন্তু আসামিরা আর একটি (নিয়মিত) আপিল করে, যেটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ছিল। যেহেতু এই আপিলটি আলাদাভাবে করা হয়েছে একসাথে ট্যাগ করা হয়নি, এই কারণে এটি রয়ে গেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গার মোকিম-ঝড়ুর আপিল অকার্যকর

আপলোড টাইম : ০৭:৫৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১

চুয়াডাঙ্গার একটি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া মোকিম ও ঝড়ুর আপিল আবেদন অকার্যকর বলে তা খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। ওই দুই আসামির নিয়মিত আপিল নিষ্পত্তির আগে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। গতকাল ওই আপিলের শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, এই যে মোকিম ও ঝড়ুর বিষয়ে বিস্তারিত না জেনেই আইনজীবী বলে দিলেন। এই কোর্টের ওপর এমন একটা ব্লেইম (অভিযোগ) আসে। এটা বিরাট বিব্রতকর কোর্টের জন্য। আমরা প্রত্যেকটা ফাঁসি দেয়ার আগে ভালো করে দেখি। ফাঁসি দেয়ার আগে আমরা কম করে হলেও ১০ বার চিন্তা করি।

শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, আমাদেরও ভুল হতে পারে। আমাদের এই ক্ষেত্রে একটু চাওয়া হলো, আমাদের হয়তো আরো সতর্ক হতে হবে। এ বিষয়ে একটা গাইডলাইন দিলে ভালো হয়। এরপর আদালত ওই দুই আসামির নিয়মিত আপিল অকার্যকর বলে খারিজ করে দেন। পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিষয়ে গাইডলাইন থাকবে বলে জানিয়ে দেন আদালত। একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আজকের কার্যতালিকার ৭ নম্বর আইটেমে সুজনের যে বিষয়টি, সেখানে তো তার জেল আপিল শুনানিতে আইনজীবী আর্গুমেন্টই করেননি। তবে তার জেল আপিলটি আমরা শুনে তাকে (সুজনকে) খালাস দিয়েছি। কিন্তু তার রেগুলার আপিলটি রয়ে গেছে। প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, আমাদের এখানে এখনো সবকিছু ডিজিটাল হয়নি। ডিজিটাল হলে সাথে সাথে ডিটেক্ট করা যেত যে কোনো মামলার কোনটা থেকে কোনটা এসেছে। কিন্তু আমাদের এখানো তো ডিজিটাল হয়নি, এটাই সমস্যা। এ সময় আদালতে আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

আইনজীবীরা জানান, ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন কুমারি ইউনিয়নের দুর্লভপুর এলাকার সাবেক মেম্বার মো: মনোয়ার হোসেন খুন হন। ওই ঘটনায় তার চাচাতো ভাই মো: অহিমউদ্দিন বাদি হয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারে মোকিম ও ঝড়ুর নাম আসে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ মামলার বিচারে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড, দুইজনকে যাবজ্জীবন ও অপর আসামিদের খালাস দেয় চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন একই ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, মোকিম ও ঝড়ু। বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুসারে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য মামলাটি হাইকোর্টে যায়। মামলার ডেথ রেফারেন্স নম্বর ছিল ৩৯/২০০৮। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৩ সালের ৭ জুলাই ও ৮ জুলাই মামলার রায় ঘোষণা করে। বাকি আসামিদের খালাস দেয়া হয়। পরে মোকিম (আপিল নম্বর ১১১/২০১৩) ও ঝড়ু (আপিল নম্বর ১০৭/২০১৩) মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন। সম্প্রতি মোকিম ও ঝড়ুর আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসে। এ বিষয়ে গত ৩ নভেম্বর আসামি পক্ষের আইনজীবী মো: হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন যে, আপিল নিষ্পত্তির আগেই মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশ হয়।

এরপর গত ৪ নভেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আসামি মোকিম ও ঝড়ু জেলখানা থেকে যে আপিল করেছিলেন, সেটি ছিল জেল আপিল। তিনজন বিচারপতি শুনানি করে সে জেল আপিল ১৫ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে রায়ের মাধ্যমে খারিজ করে দেন। পরে আসামিরা রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষার আবেদন করলে সেটিও খারিজ হয়েছে। আপিল এবং প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হওয়ার পরেই স্বাভাবিকভাবে আসামিদের ফাঁসির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। কিন্তু আসামিরা আর একটি (নিয়মিত) আপিল করে, যেটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ছিল। যেহেতু এই আপিলটি আলাদাভাবে করা হয়েছে একসাথে ট্যাগ করা হয়নি, এই কারণে এটি রয়ে গেছে।