ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষ শূন্য কৃঞ্চপুর গ্রাম!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:৪৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০২২
  • / ২৯ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃঞ্চপুরে তিন ফসলী কৃষি জমিতে সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় দুটি মামলা দিয়ে স্থানীয় কৃষকদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোলার পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ বন্ধের আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও প্রতিবাদ করায় কৃঞ্চপুর গ্রামের ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধি আবু তাহের জবা বলেও অভিযোগ উঠেছে। এরপর থেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে কৃঞ্চপুর গ্রাম।

স্থানীয় কৃষকেরা অভিযোগ করে বলেন, ‘রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশিদ শাহ তাঁর ছেলে জীবননগর উপজেলা সেচ্ছাসেবকলীগের সহসভাপতি নয়ন ও জবা কৃঞ্চপুরের কৃষি জমিতে সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য সিঙ্গাপুর ভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সাইক্রেটিক এনার্জি লিমিটেডকে সহযোগিতা করছেন। তাঁরা জোর করে কৃষকদের জমি নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আর এসবের প্রতিবাদ করায় কৃষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশিদ শাহ বলেন, ‘৭ জুলাই কৃষকেরা জেলা প্রশাসকের কার্যলয়ের সামনে বিক্ষোভ করে ফেরার পথে তাঁর কাঠগোলায় হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে মামলা করেছি। আমি কৃষকদের কোনো হয়রানি করছি না।’

স্থানীয় কৃষক মো. আনছার বলেন, ‘জমি না দিতে চাওয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। আমরা জীবন দেব, তবুও চাষের জমি দেব না। জমি দিলে আমরা খাব কী?’

কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কৃঞ্চপুরের মাঠে সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য কেউ কোনো জমি দিতে চাচ্ছি না। তবে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ, তাঁর ছেলে নয়ন ও জবা জমি নেওয়ার জন্য জোর করছেন। প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন। আমরা এর প্রতিবাদ করায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।’

সাবেক ইউপি সদস্য জেহের আলী বলেন, ‘আমরা সবাই গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছি। বাড়িতে রাতে কেউ ঘুমাতে পারছি না। ঈদটা আমরা করতে পারিনি। প্রতিদিন রাত কাটাতে হচ্ছে বিভিন্ন মাঠে। প্রায়ই গ্রামে পুলিশ আসছে।’

গৃহিণী শখের বানু বলেন, ‘আমার ভাসুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রায় প্রতিদিন গ্রামে পুলিশ আসছে। রাতে পুরুষ মানুষ বাড়িতে থাকতে পারছে না। মাঠেও কাজ করতে পারছে না। রাতে গ্রামে চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশিদের লোকজন এসে বলছেন, আসামিদের না ধরিয়ে দিলে খারাপ লোক পাঠাবে। এ ভয়তে আমরাও রাতে ঘরে থাকতে ভয় পাচ্ছি।’

মামলার স্বাক্ষী মো. জসিম ও মো. সোহাগ বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমাদের মামলায় স্বাক্ষী করা হয়েছে শুনছি। তবে আমরা এবিষয়ে কিছুই জানি না।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল খালেক বলেন, ‘স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাঠগোলায় ও সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্রর অফিসে হামলার অভিযোগে থানায় দুটি মামলা করেছেন চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ ও জবা। এই মামলায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। পুলিশ কাউকে হয়রানি করছে না।’ মামলার স্বাক্ষীদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ওসি মো. আব্দুল খালেক বলেন, ‘এটা তদন্তের পর জানা যাবে।’

এবিষয়ে জানতে সাইক্রেটিক এনার্জি লিমিডেটের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. জাকির হোসাইনকে ফোন করা হয়। তিনি এবিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজী বল জানান।

উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কৃষ্ণপুর মাঠে সৌর শক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হয় মূলত ২০১৮ সালে। প্রথম দিকে অকৃষি জমি হিসেবে ছাড়পত্র পেলেও পরবর্তীতে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সচিবালয় থেকে সরেজমিন তদন্ত করা হয়। এ তদন্তে ওই মাঠে বাদাম ও পেয়ারার আবাদের কথা উল্লেখ করা হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। সরকারের খনিজ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর সিঙ্গাপুরের কোম্পানি চলতি বছরের শুরুর দিক থেকে জমি কেনার কার্যক্রম শুরু করে। শতাধিক বিঘা জমি ইতোমধ্যে কেনাও হয়েছে। ওই জমিতে অফিস কক্ষ, গাড়ির গ্যারেজসহ স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। লিন্টন পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এরই মাঝে গত ৭ জুলাই দুপুরে জেলা প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির নিকট আন্দোলকারী গ্রামবাসী আর্জি জানিয়ে ওই জমিতে সোলার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করতে জমি দিতে বল প্রয়োগ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। ওইদিনই বিকেলে নির্মাণাধীন স্থাপনা ভেঙে দেয়া হয়। রড গ্রিল লুট হয়। এসব অভিযোগ তুলে মামলা করেন কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধি আবু তাহের জবা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষ শূন্য কৃঞ্চপুর গ্রাম!

আপলোড টাইম : ০২:৪৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃঞ্চপুরে তিন ফসলী কৃষি জমিতে সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় দুটি মামলা দিয়ে স্থানীয় কৃষকদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোলার পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ বন্ধের আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও প্রতিবাদ করায় কৃঞ্চপুর গ্রামের ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধি আবু তাহের জবা বলেও অভিযোগ উঠেছে। এরপর থেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে কৃঞ্চপুর গ্রাম।

স্থানীয় কৃষকেরা অভিযোগ করে বলেন, ‘রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশিদ শাহ তাঁর ছেলে জীবননগর উপজেলা সেচ্ছাসেবকলীগের সহসভাপতি নয়ন ও জবা কৃঞ্চপুরের কৃষি জমিতে সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য সিঙ্গাপুর ভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সাইক্রেটিক এনার্জি লিমিটেডকে সহযোগিতা করছেন। তাঁরা জোর করে কৃষকদের জমি নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আর এসবের প্রতিবাদ করায় কৃষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশিদ শাহ বলেন, ‘৭ জুলাই কৃষকেরা জেলা প্রশাসকের কার্যলয়ের সামনে বিক্ষোভ করে ফেরার পথে তাঁর কাঠগোলায় হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে মামলা করেছি। আমি কৃষকদের কোনো হয়রানি করছি না।’

স্থানীয় কৃষক মো. আনছার বলেন, ‘জমি না দিতে চাওয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। আমরা জীবন দেব, তবুও চাষের জমি দেব না। জমি দিলে আমরা খাব কী?’

কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কৃঞ্চপুরের মাঠে সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য কেউ কোনো জমি দিতে চাচ্ছি না। তবে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ, তাঁর ছেলে নয়ন ও জবা জমি নেওয়ার জন্য জোর করছেন। প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন। আমরা এর প্রতিবাদ করায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।’

সাবেক ইউপি সদস্য জেহের আলী বলেন, ‘আমরা সবাই গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছি। বাড়িতে রাতে কেউ ঘুমাতে পারছি না। ঈদটা আমরা করতে পারিনি। প্রতিদিন রাত কাটাতে হচ্ছে বিভিন্ন মাঠে। প্রায়ই গ্রামে পুলিশ আসছে।’

গৃহিণী শখের বানু বলেন, ‘আমার ভাসুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রায় প্রতিদিন গ্রামে পুলিশ আসছে। রাতে পুরুষ মানুষ বাড়িতে থাকতে পারছে না। মাঠেও কাজ করতে পারছে না। রাতে গ্রামে চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশিদের লোকজন এসে বলছেন, আসামিদের না ধরিয়ে দিলে খারাপ লোক পাঠাবে। এ ভয়তে আমরাও রাতে ঘরে থাকতে ভয় পাচ্ছি।’

মামলার স্বাক্ষী মো. জসিম ও মো. সোহাগ বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমাদের মামলায় স্বাক্ষী করা হয়েছে শুনছি। তবে আমরা এবিষয়ে কিছুই জানি না।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল খালেক বলেন, ‘স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাঠগোলায় ও সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্রর অফিসে হামলার অভিযোগে থানায় দুটি মামলা করেছেন চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ ও জবা। এই মামলায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। পুলিশ কাউকে হয়রানি করছে না।’ মামলার স্বাক্ষীদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ওসি মো. আব্দুল খালেক বলেন, ‘এটা তদন্তের পর জানা যাবে।’

এবিষয়ে জানতে সাইক্রেটিক এনার্জি লিমিডেটের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. জাকির হোসাইনকে ফোন করা হয়। তিনি এবিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজী বল জানান।

উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কৃষ্ণপুর মাঠে সৌর শক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হয় মূলত ২০১৮ সালে। প্রথম দিকে অকৃষি জমি হিসেবে ছাড়পত্র পেলেও পরবর্তীতে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সচিবালয় থেকে সরেজমিন তদন্ত করা হয়। এ তদন্তে ওই মাঠে বাদাম ও পেয়ারার আবাদের কথা উল্লেখ করা হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। সরকারের খনিজ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর সিঙ্গাপুরের কোম্পানি চলতি বছরের শুরুর দিক থেকে জমি কেনার কার্যক্রম শুরু করে। শতাধিক বিঘা জমি ইতোমধ্যে কেনাও হয়েছে। ওই জমিতে অফিস কক্ষ, গাড়ির গ্যারেজসহ স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। লিন্টন পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এরই মাঝে গত ৭ জুলাই দুপুরে জেলা প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির নিকট আন্দোলকারী গ্রামবাসী আর্জি জানিয়ে ওই জমিতে সোলার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করতে জমি দিতে বল প্রয়োগ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। ওইদিনই বিকেলে নির্মাণাধীন স্থাপনা ভেঙে দেয়া হয়। রড গ্রিল লুট হয়। এসব অভিযোগ তুলে মামলা করেন কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধি আবু তাহের জবা।