ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

খেলা দেখতে যাওয়া হলো না বন্ধুদের!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪৬:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২
  • / ২১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দামুড়হুদায় মোটরসাইকেলযোগে ফুটবল খেলা দেখতে যাওয়ার পথে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখী সংঘর্ষে সুমন আলী (১২) নামের এক স্কুলছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। একই দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলের আরও তিন আরোহী আহত হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা দুইটার দিকে দামুড়হুদা উপজেলার চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা সড়কের জয়রামপুর গ্রামের কাঁঠালতলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সুমন আলী জয়রামপুর গ্রামের কুঠিরপাড়ার কৃষক বাবলু রহমানের ছেলে ও জয়রামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। আহতরা হলো- মোটরসাইকেলের চালক দামুড়হুদার জয়রামপুর গ্রামের শেখপাড়ার সাইফুল ইসলামের ছেলে ও দামুড়হুদা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রাশেদুল ইসলাম ফকা (১৩), একই গ্রামের কুঠিরপাড়ার তারা মিয়ার ছেলে তামিম হোসেন (১১) ও আরিফুল ইসলামের ছেলে ইমন আলী (১০)। দুজনেই জয়রামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলে জয়রামপুর গ্রামের মাঠে মোটরসাইকেলযোগে ফুটবল খেলা দেখতে যাচ্ছিল সুমন, তামিম, ইমন ও রাশেদুল। মোটরসাইকেলটি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল রাশেদুল। পথের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা সড়কের জয়রামপুর কাঁঠালতলা মোড়ে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগামী ট্রাক তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে সুমন আলী, তামিম, রাশেদুল গুরুতর জখম হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দামুড়হুদা ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদেরকে দ্রুত উদ্ধার করে উপজেলার চিৎলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। তিনজনের জখম গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরে পরিবারের সদস্যরা তাদেরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। এসময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর জখম একই সময়ে উন্নত চিকিৎসার তামিম ও রাশেদুলকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।

এদিকে, গতকাল বিকেলেই পরিবারের সদস্যরা তামিম ও রাশেদুলের উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহীর উদ্যেশ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর হাপসাতাল ত্যাগ করে। অপর দিকে, মোটরসাইকেলের অপর এক আরোহী ইমন পায়ে সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়। চিৎলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠানো হয়।

মোটরসাইকেল আরোহী ইমন জানায়, ইমন, তার চাচাত ভাই রাশেদুল ও তামিম তিনজন খালুর মোটরসাইকেলযোগে লোকনাথপুর মাঠে খেলা দেখার জন্য যাচ্ছিল। পথের মধ্যে সুমনের সঙ্গে দেখা হলে সেও মোটরসাইকেলে উঠে পড়ে। পরে কাঁঠালতলা মোড়ে পৌঁছালে একটি ভ্যান দেখে সেখানে রাশেদুল মোটরসাইকেল আস্তে চালায়, এমন সময় সামনে থেকে একটি ট্রাক এসে তাদের ওপর চালিয়ে দেয়।

আহত তামিম হোসেনের মামী আফরোজা বেগম বলেন, দুপুরে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এসে খাওয়া দাওয়া করে ফুটবল খেলা দেখার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় তামিম। পরে মোটরসাইকেলযোগে ইমন ও সুমনের সঙ্গে খেলা দেখার জন্য যাচ্ছিল। পথের মধ্যে ট্রাক তাদেরকে ধাক্কা দেয়। তামিমের অবস্থা ভালো না।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাদিয়া মা আরিজ বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম অবস্থায় তিনজনকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্যে সুমনকে জরুরি বিভাগে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। অন্য দুজনের জখম গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান শেষে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।’

দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, দামুড়হুদা থানাধীন জয়রামপুর কাঁঠালতলা মোড়ে ট্রাক ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখী সংঘর্ষে সুমন আলী নামে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। একই দুর্ঘটনায় আরও দুজন গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। সুমন আলীর মৃত্যুর বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ হয়নি। নিহতের পরিবারের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘাতক ট্রাকটি আটকের চেষ্টা চলছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

খেলা দেখতে যাওয়া হলো না বন্ধুদের!

আপলোড টাইম : ০৮:৪৬:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দামুড়হুদায় মোটরসাইকেলযোগে ফুটবল খেলা দেখতে যাওয়ার পথে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখী সংঘর্ষে সুমন আলী (১২) নামের এক স্কুলছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। একই দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলের আরও তিন আরোহী আহত হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা দুইটার দিকে দামুড়হুদা উপজেলার চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা সড়কের জয়রামপুর গ্রামের কাঁঠালতলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সুমন আলী জয়রামপুর গ্রামের কুঠিরপাড়ার কৃষক বাবলু রহমানের ছেলে ও জয়রামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। আহতরা হলো- মোটরসাইকেলের চালক দামুড়হুদার জয়রামপুর গ্রামের শেখপাড়ার সাইফুল ইসলামের ছেলে ও দামুড়হুদা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রাশেদুল ইসলাম ফকা (১৩), একই গ্রামের কুঠিরপাড়ার তারা মিয়ার ছেলে তামিম হোসেন (১১) ও আরিফুল ইসলামের ছেলে ইমন আলী (১০)। দুজনেই জয়রামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলে জয়রামপুর গ্রামের মাঠে মোটরসাইকেলযোগে ফুটবল খেলা দেখতে যাচ্ছিল সুমন, তামিম, ইমন ও রাশেদুল। মোটরসাইকেলটি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল রাশেদুল। পথের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা সড়কের জয়রামপুর কাঁঠালতলা মোড়ে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগামী ট্রাক তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে সুমন আলী, তামিম, রাশেদুল গুরুতর জখম হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দামুড়হুদা ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদেরকে দ্রুত উদ্ধার করে উপজেলার চিৎলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। তিনজনের জখম গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরে পরিবারের সদস্যরা তাদেরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। এসময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর জখম একই সময়ে উন্নত চিকিৎসার তামিম ও রাশেদুলকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।

এদিকে, গতকাল বিকেলেই পরিবারের সদস্যরা তামিম ও রাশেদুলের উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহীর উদ্যেশ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর হাপসাতাল ত্যাগ করে। অপর দিকে, মোটরসাইকেলের অপর এক আরোহী ইমন পায়ে সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়। চিৎলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠানো হয়।

মোটরসাইকেল আরোহী ইমন জানায়, ইমন, তার চাচাত ভাই রাশেদুল ও তামিম তিনজন খালুর মোটরসাইকেলযোগে লোকনাথপুর মাঠে খেলা দেখার জন্য যাচ্ছিল। পথের মধ্যে সুমনের সঙ্গে দেখা হলে সেও মোটরসাইকেলে উঠে পড়ে। পরে কাঁঠালতলা মোড়ে পৌঁছালে একটি ভ্যান দেখে সেখানে রাশেদুল মোটরসাইকেল আস্তে চালায়, এমন সময় সামনে থেকে একটি ট্রাক এসে তাদের ওপর চালিয়ে দেয়।

আহত তামিম হোসেনের মামী আফরোজা বেগম বলেন, দুপুরে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এসে খাওয়া দাওয়া করে ফুটবল খেলা দেখার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় তামিম। পরে মোটরসাইকেলযোগে ইমন ও সুমনের সঙ্গে খেলা দেখার জন্য যাচ্ছিল। পথের মধ্যে ট্রাক তাদেরকে ধাক্কা দেয়। তামিমের অবস্থা ভালো না।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাদিয়া মা আরিজ বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম অবস্থায় তিনজনকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্যে সুমনকে জরুরি বিভাগে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। অন্য দুজনের জখম গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান শেষে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।’

দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, দামুড়হুদা থানাধীন জয়রামপুর কাঁঠালতলা মোড়ে ট্রাক ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখী সংঘর্ষে সুমন আলী নামে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। একই দুর্ঘটনায় আরও দুজন গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। সুমন আলীর মৃত্যুর বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ হয়নি। নিহতের পরিবারের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘাতক ট্রাকটি আটকের চেষ্টা চলছে।