ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

কেয়ারটেকার সরকার পুনঃপ্রবর্তন; জনমত আমলে নেয়া উচিত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৩৫ বার পড়া হয়েছে

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা চিরদিনের জন্য কুক্ষিগত করতে দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছেন। বিশেষ করে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতালিপ্সার কারণে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রবর্তিত কেয়ারটেকার ব্যবস্থা নিজ স্বার্থে আদালতের সাথে অশুভ আঁতাত গড়ে বদলে দেন শেখ হাসিনা। তাকে সহায়তা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক। তিনি অবিবেচকের মতো দলীয় স্বার্থ সংরক্ষণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় দেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আদালতের দোহাই দিয়ে বাতিল করে শেখ হাসিনা দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেন।

প্রকৃত বাস্তবতা হলো- হাসিনার আমলে নির্বাচনের নামে তামাশা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থার কফিনে পেরেক মারা শুরু। এরপর ২০১৮ সালে একাদশ ও ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শেষ দু’টি পেরেক মারা হয়। লক্ষণীয়, পতিত স্বৈরাচারের আমলে ক্ষমতাসীনদের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি করার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া নির্বাচনের আর কিছু অবশিষ্ট ছিল না। এতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয় তা হলো- নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদলের পথ রুদ্ধ করা হয়।

হাসিনার শাসনামলে পুরো সময় ধরে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ নানা বঞ্চনা-নিপীড়ন, গুম-খুনের শিকার হয়ে এ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে থাকেন। অবশেষে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে তার মদদদাতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।

ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলের অবসানে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এ সরকারের প্রতি মানুষের যেমন আস্থা রয়েছে; ঠিক তেমনি প্রত্যাশাও আকাশচুম্বী। নাগরিকদের চাওয়া কী কী, সেই ধারণা পেতে জরিপ করে তার ফল প্রকাশ করা হচ্ছে। এর মধ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে একটি জরিপের ফল প্রকাশ করেছে বেসরকারি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি)। সংস্থাটি জরিপের তথ্যমতে, কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন চান দেশের ৯৪ শতাংশ মানুষ।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে গত বুধবার ‘জাতীয় জরিপ-২০২৪ : বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নাগরিকদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ওই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। গত ৯-১৯ সেপ্টেম্বর দেশের আটটি বিভাগের ১৭টি জেলায় মোট এক হাজর ৮৬৯ জনের ওপর জরিপটি করা হয়। উত্তরদাতাদের বৃহত্তম অংশ (৬৩ শতাংশ) মধ্যবয়সী (২৮-৫০ বছর)। ২২ শতাংশ জেনারেশন জেড (১৮-২৭ বছর)। ১৪ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের ওপরে। এ ছাড়া জরিপের উত্তরদাতাদের ৫৪ শতাংশ শহরাঞ্চলের। ৪৬ শতাংশ গ্রামাঞ্চলের।

দেশের বর্তমান পরিবর্তিত বাস্তবতায় একটি বিষয় সুস্পষ্ট, আওয়ামী উচ্ছিষ্টভোগী ছাড়া দেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পেরে শেখ হাসিনা সরকারের ওপর চরম ক্ষুব্ধ ছিলেন। যারা এত বছর ধরে নির্বাচনী অপরাধ করেছেন, তাদের বিচারের কথা সারা দেশের মানুষ সুস্পষ্টভাবে বলছেন। দেশের সব নাগরিকের এখনকার চাওয়া- নির্বাচনী সংস্কার, যাতে দেশে একটি টেকসই নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়। তাই জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কেয়ারটেকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় নেবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

কেয়ারটেকার সরকার পুনঃপ্রবর্তন; জনমত আমলে নেয়া উচিত

আপলোড টাইম : ০৯:৫৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা চিরদিনের জন্য কুক্ষিগত করতে দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছেন। বিশেষ করে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতালিপ্সার কারণে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রবর্তিত কেয়ারটেকার ব্যবস্থা নিজ স্বার্থে আদালতের সাথে অশুভ আঁতাত গড়ে বদলে দেন শেখ হাসিনা। তাকে সহায়তা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক। তিনি অবিবেচকের মতো দলীয় স্বার্থ সংরক্ষণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় দেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আদালতের দোহাই দিয়ে বাতিল করে শেখ হাসিনা দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেন।

প্রকৃত বাস্তবতা হলো- হাসিনার আমলে নির্বাচনের নামে তামাশা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থার কফিনে পেরেক মারা শুরু। এরপর ২০১৮ সালে একাদশ ও ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শেষ দু’টি পেরেক মারা হয়। লক্ষণীয়, পতিত স্বৈরাচারের আমলে ক্ষমতাসীনদের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি করার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া নির্বাচনের আর কিছু অবশিষ্ট ছিল না। এতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয় তা হলো- নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদলের পথ রুদ্ধ করা হয়।

হাসিনার শাসনামলে পুরো সময় ধরে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ নানা বঞ্চনা-নিপীড়ন, গুম-খুনের শিকার হয়ে এ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে থাকেন। অবশেষে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে তার মদদদাতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।

ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলের অবসানে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এ সরকারের প্রতি মানুষের যেমন আস্থা রয়েছে; ঠিক তেমনি প্রত্যাশাও আকাশচুম্বী। নাগরিকদের চাওয়া কী কী, সেই ধারণা পেতে জরিপ করে তার ফল প্রকাশ করা হচ্ছে। এর মধ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে একটি জরিপের ফল প্রকাশ করেছে বেসরকারি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি)। সংস্থাটি জরিপের তথ্যমতে, কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন চান দেশের ৯৪ শতাংশ মানুষ।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে গত বুধবার ‘জাতীয় জরিপ-২০২৪ : বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নাগরিকদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ওই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। গত ৯-১৯ সেপ্টেম্বর দেশের আটটি বিভাগের ১৭টি জেলায় মোট এক হাজর ৮৬৯ জনের ওপর জরিপটি করা হয়। উত্তরদাতাদের বৃহত্তম অংশ (৬৩ শতাংশ) মধ্যবয়সী (২৮-৫০ বছর)। ২২ শতাংশ জেনারেশন জেড (১৮-২৭ বছর)। ১৪ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের ওপরে। এ ছাড়া জরিপের উত্তরদাতাদের ৫৪ শতাংশ শহরাঞ্চলের। ৪৬ শতাংশ গ্রামাঞ্চলের।

দেশের বর্তমান পরিবর্তিত বাস্তবতায় একটি বিষয় সুস্পষ্ট, আওয়ামী উচ্ছিষ্টভোগী ছাড়া দেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পেরে শেখ হাসিনা সরকারের ওপর চরম ক্ষুব্ধ ছিলেন। যারা এত বছর ধরে নির্বাচনী অপরাধ করেছেন, তাদের বিচারের কথা সারা দেশের মানুষ সুস্পষ্টভাবে বলছেন। দেশের সব নাগরিকের এখনকার চাওয়া- নির্বাচনী সংস্কার, যাতে দেশে একটি টেকসই নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়। তাই জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কেয়ারটেকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় নেবে।