ইপেপার । আজ সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

কালের সাক্ষী দেড়শ বছরের রূপির বটগাছ!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৭:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

রাসেল হোসেন মুন্না, উথলী: জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো রূপির চারা বটবৃক্ষটি আজও দাঁড়িয়ে আছে বিস্তৃত বিশাল জায়গাজুড়ে। শীতল ছায়াদানকারী এই বটবৃক্ষটির নাম এলাকার কারোর অজানা নয়। বটবৃক্ষটির নামকরণে রয়েছে এক দারুন ইতিহাস।

স্থানীয় বয়োবৃদ্ধরা জানান, রূপি ছিল এক সম্ভান্ত্র পরিবারের মেয়ে, ব্যক্তি জীবনে রূপি ছিলেন নিঃসন্তান। একটি সন্তানের জন্য রূপি হাকিম-কবিরাজসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। অনেক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘোরাঘুরি করেও তার কোনো সন্তান হয়নি। পরবর্তীতে রূপি একজন দরবেশের স্মরণাপণ্ন হলে দরবেশ তাঁকে একটি বটবৃক্ষ ও একটি শিমুল বৃক্ষ লাগিয়ে দুটি বৃক্ষের মধ্যে বিবাহ দিতে বলেন। সন্তানের আশায় রূপি একটি বটবৃক্ষ ও একটি শিমুল বৃক্ষের চারা পাশাপাশি লাগিয়ে বিবাহ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। বটবৃক্ষের চারাটি বর ও শিমুল বৃক্ষের চারাটি বধু সাঝে সজ্জিত করা হয়। সেই বিবাহ অনুষ্ঠানে চারদিন ধরে গ্রামবাসীদের মধ্যে বিশাল খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেন রুপি।

স্থানীয় লোকজন গাছ দুটিকে পরিচর্যা করলেও কয়েক বছর পর শিমুল গাছটি মারা যায়। দরবেশের পরামর্শে রূপি বট ও শিমুল গাছের চারা রোপণ করার পর তিনি সন্তান লাভ করেছিলেন কি না, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেননি। তবে কালের সাক্ষী হয়ে রুপির লাগানো সেই বটগাছের চারাটি আজও রুপির নামকে ধরে বাঁচিয়ে রেখেছে। রূপি সে সময় বটের চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেছে বলেই এলাকাবাসী এই বৃক্ষটির নাম দেয় রূপির চারা বটগাছ। এলাকার লোকজনের মধ্যে প্রচলিত আছে রূপির চারা বটগাছের ডাল কাটলে বা পাতা ছিড়লে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হন। তাই এই গাছের একটি পাতাও সহজে কেউ ছেড়ে না।

বটবৃক্ষটি জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের উথলী-হিজলগাড়ী ও মোল্লাবাড়ি-আন্দুলবাড়িয়া সড়কের চার রাস্তার সংযোগস্থলে আজও টিকে রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ক্লান্ত পথিকেরা এই গাছের শীতল ছায়ায় বিশ্রাম নিয়ে আসছেন। গাছে আশ্রয় নেয়া বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কল-কাকলি ধ্বনিতে মুখরিত হয় এই এলাকার পরিবেশ। শীতকালীন সময়ে বটবৃক্ষটি হয়ে ওঠে অতিথি পাখিদের আবাসস্থল। রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে দিনদিন বট গাছের একপাশ ধসে চলে যাচ্ছে পুকুরের মধ্যে। বটবৃক্ষটি রক্ষণাবেক্ষণ ও মানুষের বিশ্রাম নেওয়ার সুবিধার্থে গাছের চারিদিকে সান বাঁধানোর জন্য জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করেছে এলাকাবাসী।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

কালের সাক্ষী দেড়শ বছরের রূপির বটগাছ!

আপলোড টাইম : ০৮:৫৭:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২২

রাসেল হোসেন মুন্না, উথলী: জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো রূপির চারা বটবৃক্ষটি আজও দাঁড়িয়ে আছে বিস্তৃত বিশাল জায়গাজুড়ে। শীতল ছায়াদানকারী এই বটবৃক্ষটির নাম এলাকার কারোর অজানা নয়। বটবৃক্ষটির নামকরণে রয়েছে এক দারুন ইতিহাস।

স্থানীয় বয়োবৃদ্ধরা জানান, রূপি ছিল এক সম্ভান্ত্র পরিবারের মেয়ে, ব্যক্তি জীবনে রূপি ছিলেন নিঃসন্তান। একটি সন্তানের জন্য রূপি হাকিম-কবিরাজসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। অনেক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘোরাঘুরি করেও তার কোনো সন্তান হয়নি। পরবর্তীতে রূপি একজন দরবেশের স্মরণাপণ্ন হলে দরবেশ তাঁকে একটি বটবৃক্ষ ও একটি শিমুল বৃক্ষ লাগিয়ে দুটি বৃক্ষের মধ্যে বিবাহ দিতে বলেন। সন্তানের আশায় রূপি একটি বটবৃক্ষ ও একটি শিমুল বৃক্ষের চারা পাশাপাশি লাগিয়ে বিবাহ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। বটবৃক্ষের চারাটি বর ও শিমুল বৃক্ষের চারাটি বধু সাঝে সজ্জিত করা হয়। সেই বিবাহ অনুষ্ঠানে চারদিন ধরে গ্রামবাসীদের মধ্যে বিশাল খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেন রুপি।

স্থানীয় লোকজন গাছ দুটিকে পরিচর্যা করলেও কয়েক বছর পর শিমুল গাছটি মারা যায়। দরবেশের পরামর্শে রূপি বট ও শিমুল গাছের চারা রোপণ করার পর তিনি সন্তান লাভ করেছিলেন কি না, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেননি। তবে কালের সাক্ষী হয়ে রুপির লাগানো সেই বটগাছের চারাটি আজও রুপির নামকে ধরে বাঁচিয়ে রেখেছে। রূপি সে সময় বটের চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেছে বলেই এলাকাবাসী এই বৃক্ষটির নাম দেয় রূপির চারা বটগাছ। এলাকার লোকজনের মধ্যে প্রচলিত আছে রূপির চারা বটগাছের ডাল কাটলে বা পাতা ছিড়লে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হন। তাই এই গাছের একটি পাতাও সহজে কেউ ছেড়ে না।

বটবৃক্ষটি জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের উথলী-হিজলগাড়ী ও মোল্লাবাড়ি-আন্দুলবাড়িয়া সড়কের চার রাস্তার সংযোগস্থলে আজও টিকে রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ক্লান্ত পথিকেরা এই গাছের শীতল ছায়ায় বিশ্রাম নিয়ে আসছেন। গাছে আশ্রয় নেয়া বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কল-কাকলি ধ্বনিতে মুখরিত হয় এই এলাকার পরিবেশ। শীতকালীন সময়ে বটবৃক্ষটি হয়ে ওঠে অতিথি পাখিদের আবাসস্থল। রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে দিনদিন বট গাছের একপাশ ধসে চলে যাচ্ছে পুকুরের মধ্যে। বটবৃক্ষটি রক্ষণাবেক্ষণ ও মানুষের বিশ্রাম নেওয়ার সুবিধার্থে গাছের চারিদিকে সান বাঁধানোর জন্য জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করেছে এলাকাবাসী।