ইপেপার । আজ রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

কালের আর্বতনে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির বাসা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:০১:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২২
  • / ১৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চমৎকার বাসা বুনে বাস করায় বাবুই পাখির পরিচিত বিশ্বজোড়া। কালের আবর্তনে তালের পাতায় মোড়ানো নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখির বাসা আজ স্মৃতির অন্তরালে বিলীন হতে চলেছে। ঘন বসতি ও পরিবেশ বিপর্যয়ে হ্রাস পাচ্ছে বাবুই পাখির বসবাস। এতে বিপন্ন হচ্ছে এই শিল্পী পাখি বাবুই। অথচ আজ থেকে প্রায় ১২-১৫ বছর আগেও গ্রাম-গঞ্জের মাঠ-ঘাটের তাল গাছে দেখা যেত এদের বাসা। তালের পাতায় মোড়ানো নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখির বাসা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।

বাবুই পাখির বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই নয়, মানুষকে স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করতো। কবি রজনী কান্ত সেনের ভাষায়, ‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই,/ কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই।/ আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার’ পরে,/ তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি-ঝড়ে।’
কবির অমর কবিতা ‘স্বাধীনতার সুখ’ এখন এদেশে তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। শুধু পাঠ্যপুস্তকের কবিতা পড়েই এখনকার শিক্ষার্থীরা বাবুই পাখির শিল্প নিপুণতার কথা জানতে পারে। এখন আর চোখে পড়ে না বাবুই পাখি ও তার নিজের তৈরি দৃষ্টিনন্দন সেই ছোট্ট বাসা তৈরির নৈসর্গিক দৃশ্য। কালের আর্বতনে হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও তার শৈল্পিক বাসা। মূলত তাল, নারকেল ও খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় আবাস সংকটে পড়েছে বাবুই পাখি। প্রকৃতির ভারসাম্য ধরে রাখতে এ বুননশিল্পী পাখি ও তার শিল্প টিকিয়ে রাখা দরকার।
দৃষ্টিকাড়া গাছের ঝুড়ির মতো চমৎকার বাসা বুনে বাস করায় এই পাখির পরিচিতি বিশ্বজোড়া। নারিকেল গাছের কচিপাতা, খড়, তালপাতা ও খেজুর গাছের পাতা দিয়ে উঁচু তালগাছে বাসা তৈরি করত বাবুই পাখি। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ভেঙে পড়ে না। বাবুই পাখির নিখ্্্ুঁত বুননে এই বাসা টেনে ছেঁড়াও ছিল কষ্টকর। এজন্য অনেকেই একে তাঁতিপাখি বলেও ডাকে।

দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের কৃষক সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের গ্রামে ছোটবেলায় দেখতাম রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তাল গাছগুলোর মধ্যে অনেক বাবুই পাখির বাসা ছিল। কিন্তু এখন তাল গাছই কমে গেছে। বাবুই পাখির বাসা আর দেখা যায় না। সারা গ্রাম খুজে হয়তো দুই একটা তালগাছে বাবুই পাখির বাসা দেখতে পাওয়া যায়।’

বাবুই পাখিকে শৈল্পিক কারিগরও বলা হয়। কারণ তারা শিল্পীর মতো নিখুঁত সুন্দর বাসা তৈরি করে। এই বাসা দেখতে খুব সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। যে কেউ এই পাখির বাসা দেখে মোহিত হন। দেশের বিত্তশালীদের ঘরের শোভা বৃদ্ধির জন্য বাবুই পাখির বাসা ঘরের ছাদে কিংবা শো কেইজে রাখে। কোনো মানুষ এই রকম বাসা তৈরি করলে হুবহু পাখিদের তৈরি বাসার মতো হবে না। বাবুই পাখি তাদের ঠোঁট দিয়ে খুব সুন্দর করে শিল্পীর ন্যায় এই বাসা তৈরি করে। এই বাসা বৃষ্টি, বাতাস ও রোদ প্রতিরোধক। এই বাসার ভেতর বৃষ্টির পানি পড়ে না।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

কালের আর্বতনে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির বাসা

আপলোড টাইম : ০২:০১:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক: চমৎকার বাসা বুনে বাস করায় বাবুই পাখির পরিচিত বিশ্বজোড়া। কালের আবর্তনে তালের পাতায় মোড়ানো নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখির বাসা আজ স্মৃতির অন্তরালে বিলীন হতে চলেছে। ঘন বসতি ও পরিবেশ বিপর্যয়ে হ্রাস পাচ্ছে বাবুই পাখির বসবাস। এতে বিপন্ন হচ্ছে এই শিল্পী পাখি বাবুই। অথচ আজ থেকে প্রায় ১২-১৫ বছর আগেও গ্রাম-গঞ্জের মাঠ-ঘাটের তাল গাছে দেখা যেত এদের বাসা। তালের পাতায় মোড়ানো নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখির বাসা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।

বাবুই পাখির বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই নয়, মানুষকে স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করতো। কবি রজনী কান্ত সেনের ভাষায়, ‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই,/ কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই।/ আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার’ পরে,/ তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি-ঝড়ে।’
কবির অমর কবিতা ‘স্বাধীনতার সুখ’ এখন এদেশে তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। শুধু পাঠ্যপুস্তকের কবিতা পড়েই এখনকার শিক্ষার্থীরা বাবুই পাখির শিল্প নিপুণতার কথা জানতে পারে। এখন আর চোখে পড়ে না বাবুই পাখি ও তার নিজের তৈরি দৃষ্টিনন্দন সেই ছোট্ট বাসা তৈরির নৈসর্গিক দৃশ্য। কালের আর্বতনে হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও তার শৈল্পিক বাসা। মূলত তাল, নারকেল ও খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় আবাস সংকটে পড়েছে বাবুই পাখি। প্রকৃতির ভারসাম্য ধরে রাখতে এ বুননশিল্পী পাখি ও তার শিল্প টিকিয়ে রাখা দরকার।
দৃষ্টিকাড়া গাছের ঝুড়ির মতো চমৎকার বাসা বুনে বাস করায় এই পাখির পরিচিতি বিশ্বজোড়া। নারিকেল গাছের কচিপাতা, খড়, তালপাতা ও খেজুর গাছের পাতা দিয়ে উঁচু তালগাছে বাসা তৈরি করত বাবুই পাখি। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ভেঙে পড়ে না। বাবুই পাখির নিখ্্্ুঁত বুননে এই বাসা টেনে ছেঁড়াও ছিল কষ্টকর। এজন্য অনেকেই একে তাঁতিপাখি বলেও ডাকে।

দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের কৃষক সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের গ্রামে ছোটবেলায় দেখতাম রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তাল গাছগুলোর মধ্যে অনেক বাবুই পাখির বাসা ছিল। কিন্তু এখন তাল গাছই কমে গেছে। বাবুই পাখির বাসা আর দেখা যায় না। সারা গ্রাম খুজে হয়তো দুই একটা তালগাছে বাবুই পাখির বাসা দেখতে পাওয়া যায়।’

বাবুই পাখিকে শৈল্পিক কারিগরও বলা হয়। কারণ তারা শিল্পীর মতো নিখুঁত সুন্দর বাসা তৈরি করে। এই বাসা দেখতে খুব সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। যে কেউ এই পাখির বাসা দেখে মোহিত হন। দেশের বিত্তশালীদের ঘরের শোভা বৃদ্ধির জন্য বাবুই পাখির বাসা ঘরের ছাদে কিংবা শো কেইজে রাখে। কোনো মানুষ এই রকম বাসা তৈরি করলে হুবহু পাখিদের তৈরি বাসার মতো হবে না। বাবুই পাখি তাদের ঠোঁট দিয়ে খুব সুন্দর করে শিল্পীর ন্যায় এই বাসা তৈরি করে। এই বাসা বৃষ্টি, বাতাস ও রোদ প্রতিরোধক। এই বাসার ভেতর বৃষ্টির পানি পড়ে না।’