ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

ওষুধ কিনতে না পেরে কৃষকের আত্মহত্যা!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৬:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ মে ২০২২
  • / ২১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: জীবননগরের টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে না পেরে মোক্তার হোসেন (৪৫) নামে এক কৃষক বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ অবস্থায় মোক্তার হোসেনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মোক্তার হোসেন জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের মীরপাড়া গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ঘরে অসুস্থ ছিলেন মোক্তার আলী। তাঁর মাজার হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে। মাঠে কাজ করা মোক্তার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থান থেকে চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ হননি। রোগের যন্ত্রণায় ছটফট করলেও ওষুধ কিনে খাওয়ার জন্য টাকাও তাঁর কাছে ছিল না। এ নিয়ে তাঁদের  পরিবারে অশান্তি লেগেই থাকত। এরই মধ্যে গতকাল সকাল নয়টার দিকে নিজ বাড়িতেই বিষপান করেন তিনি। এক ঘণ্টা পর পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। এসময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

মোক্তার আলীর ছেলে নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবা মাজার অসুখসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। মাঠে খাটা কৃষক তিনি, যা কাজ করতেন তাই দিয়েই সংসার চলত। তবে বেশ কিছুদিন ধরে তার মাজার অসুখ বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ-কর্ম করতে পারছিল না। যে কারণে তার চিকিৎসাও ঠিকমতো করাতে পারছিলাম না। এরই মধ্যে আজ সকালে এসব বিষয় নিয়ে অভিমান করে বাবা সকলের অগোচরে বিষপান করে। সকাল ১০টার দিকে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা বিষপানের বিষয়টি জানতে পারি। এসময় স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় দ্রুত তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন, মাঠে কাজ করতেন মোক্তার আলী। খুবই দরিদ্রতার সঙ্গে জীবন অতিবাহিত করতেন। মাজার হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ সময় অসুস্থতায় থাকতেন তিনি। অর্থের অভাবে ঠিকঠাক মতো চিকিৎসাও করাতে পারতেন না। জানতে পেরেছি ওষুধ কিনতে না পারার কারণে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন মোক্তার।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. খালিদ হাসান বলেন, বেলা ১১টার দিকে পরিবারের সদস্যরা মোক্তার আলীকে জরুরি বিভাগে নেয়। পরিবারের সদস্যরা জানায় তিনি বিষপান করেছেন। এসময় পরিক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। জরুরি বিভাগে আমরা তাঁকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি দুপুরেই সদর থানা কর্তৃপক্ষকে লিখিত জানানো হয়েছে।

এবিষয়ে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল খালেক বলেন, দুপুরে মোক্তার আলী নামের এক ব্যক্তির বিষপানে আত্মহত্যার বিষয়ে জানতে পারি। তিনি দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ ছিলেন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, অসুস্থতার কারণে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। তবে এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ না থাকায় পরিবারের সদস্যদের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে সুরতহাল শেষে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ওষুধ কিনতে না পেরে কৃষকের আত্মহত্যা!

আপলোড টাইম : ০৮:৩৬:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ মে ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক: জীবননগরের টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে না পেরে মোক্তার হোসেন (৪৫) নামে এক কৃষক বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ অবস্থায় মোক্তার হোসেনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মোক্তার হোসেন জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের মীরপাড়া গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ঘরে অসুস্থ ছিলেন মোক্তার আলী। তাঁর মাজার হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে। মাঠে কাজ করা মোক্তার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থান থেকে চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ হননি। রোগের যন্ত্রণায় ছটফট করলেও ওষুধ কিনে খাওয়ার জন্য টাকাও তাঁর কাছে ছিল না। এ নিয়ে তাঁদের  পরিবারে অশান্তি লেগেই থাকত। এরই মধ্যে গতকাল সকাল নয়টার দিকে নিজ বাড়িতেই বিষপান করেন তিনি। এক ঘণ্টা পর পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। এসময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

মোক্তার আলীর ছেলে নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবা মাজার অসুখসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। মাঠে খাটা কৃষক তিনি, যা কাজ করতেন তাই দিয়েই সংসার চলত। তবে বেশ কিছুদিন ধরে তার মাজার অসুখ বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ-কর্ম করতে পারছিল না। যে কারণে তার চিকিৎসাও ঠিকমতো করাতে পারছিলাম না। এরই মধ্যে আজ সকালে এসব বিষয় নিয়ে অভিমান করে বাবা সকলের অগোচরে বিষপান করে। সকাল ১০টার দিকে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা বিষপানের বিষয়টি জানতে পারি। এসময় স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় দ্রুত তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন, মাঠে কাজ করতেন মোক্তার আলী। খুবই দরিদ্রতার সঙ্গে জীবন অতিবাহিত করতেন। মাজার হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ সময় অসুস্থতায় থাকতেন তিনি। অর্থের অভাবে ঠিকঠাক মতো চিকিৎসাও করাতে পারতেন না। জানতে পেরেছি ওষুধ কিনতে না পারার কারণে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন মোক্তার।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. খালিদ হাসান বলেন, বেলা ১১টার দিকে পরিবারের সদস্যরা মোক্তার আলীকে জরুরি বিভাগে নেয়। পরিবারের সদস্যরা জানায় তিনি বিষপান করেছেন। এসময় পরিক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। জরুরি বিভাগে আমরা তাঁকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি দুপুরেই সদর থানা কর্তৃপক্ষকে লিখিত জানানো হয়েছে।

এবিষয়ে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল খালেক বলেন, দুপুরে মোক্তার আলী নামের এক ব্যক্তির বিষপানে আত্মহত্যার বিষয়ে জানতে পারি। তিনি দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ ছিলেন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, অসুস্থতার কারণে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। তবে এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ না থাকায় পরিবারের সদস্যদের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে সুরতহাল শেষে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।