ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

আলমডাঙ্গা বিদ্যুৎ অফিসের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশালীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

উৎকোচ দিতে সাংবাদিককে অফিসে দাওয়াত!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০১:২৭:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

নাহিদ হাসান, আলমডাঙ্গা:

খুলনা বিভাগীয় বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলা শাখার ডিস্ট্রবিউশন অফিসের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রকৌশালী মুন্সি জহুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও গ্রাহকের নিকট হতে বিভিন্ন কৌশলে অর্থ আদায়সহ লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) লিমিটেড আলমডাঙ্গা অফিসের আবাসিক প্রকৌশলী হিসেবে মুন্সি জহুরুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দুর্নীতির মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎতের লুজ কন্টাক্ট কমানোর নামে গ্রাহকের মূল সংযোগে ক্লাম লাগানোর কথা বলে নিজস্ব লোকবল দিয়ে গ্রাহক প্রতি ১০০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিমাণে অর্থ গ্রহণ করছেন মুন্সি জহুরুল ইসলাম।

সরেজমিনে গেলে অভিযোগের সত্যতা মেলে। দেখা যায়, গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুন্সি জহুরুল ইসলামের লোকজন সার্ভিস তারের মাথায় একটি করে কানেক্টিং ক্লাম লাগাচ্ছেন। আর এর জন্য প্রতি গ্রাহকের থেকে সার্ভিস চার্জের নাম করে ১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। কানেক্টিং ক্লাম লাগানোর কাজে ব্যস্ত কর্মীরা বলেন, ‘আমরা স্যারের নির্দেশে সকল গ্রাহকের সার্ভিস তার মূল লাইনের তারের সাথে ক্লাম দিয়ে আটকিয়ে দিচ্ছি। এটা প্রতিটি গ্রাহককেই করা লাগবে। কারণ এই ক্লাম দিয়ে তার আটকালে কখনো লুজ কানেকশন হবে না।’ ১০০ টাকা করে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘আমরা স্যারের নির্দেশেই ১০০ টাকা করে নিচ্ছি। এটা সরকারি কোনো কাজ না, একটি প্রকল্পের কাজ।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার বাবুপাড়ার এক গ্রাহক বলেন, ‘প্রথমে আমাদের নিকট থেকে ৩০০ টাকা করে চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু আমরা টাকা দিতে না চাওয়ায় আমাদেরকে বলেছিল এই ক্লাম লাগাতেই হবে, স্যারের নির্দেশ। পরবর্তীতে আমরা বাধ্য হয়েই ক্লাম লাগিয়েছি, মিটার প্রতি ২০০ টাকা করেও দিতে হয়েছে।’

আলমডাঙ্গা পৌর এরশাদপুর এলাকার এক নারী গ্রাহক বলেন, ‘আমার স্বামী বাড়িতে না থাকায় আমি তাদের চাহিদা অনুযায়ী ১০০ টাকা দিতে পারিনি। তাই তারা আমার লাইনে ক্লাম না লাগিয়ে চলে গেছে। তারা বলে গেছে এই ক্লাম না লাগালে লাইনে কোনো সমস্যা হলে পরবর্তীতে ঠিক করা হবে না।’

অপর এক গ্রাহক বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার বাড়ির লাইনে একটি সমস্যা নিয়ে ‘আরই’ সাহেবের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমার কোনো কথা না শুনেই লাইনে সমস্যার জন্য আমাকেই দায়ী করেন এবং আমি কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি আমার বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার হুমকি দেন।’

এ বিষয়ে ওজোপাডিকো আলমডাঙ্গা শাখার ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রকৌশালী মুন্সি জহুরুল ইসলামকে না পেয়ে মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এসময় তিনি বলেন, এটি কোনো সরকারি বা প্রকল্পের কাজ নয়। ক্লাম লাগানোর বিষয়ে তিনি জানেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি।’

গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোনো সরকারি নিয়ম বা অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টাকা নিচ্ছে তাতে কী হয়েছে, গ্রাহকের কাজ দিলে টাকা নিতেই পারে।’ এটা অফিসিয়াল কাজ কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা অফিসিয়াল কোনো কাজ হোক বা না হোক, তাতে আপনার কী?’ টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এভাবে টাকা নিয়ে ৪০ তলা বিল্ডিং করব, আপনি পারলে কিছু করেন। আর যদি ভাগ নিতে চান, তাহলে অফিসে আসেন।’

এ বিষয়ে ওজোপাডিকো চুয়াডাঙ্গার নির্বাহী প্রকৌশালী পলাশ কুমার ঘোষ বলেন, ‘ক্লাম লাগানোর বিষয়ে আমাদের কোনো অফিসিয়াল নির্দেশনা নেই। আমার জানা মতে, এটি কোনো সরকারি বা প্রকল্পের কাজ নয়। যদি গ্রাহক সেবার জন্য কেউ এই কাজ করে থাকে, তবে টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম  নেই। যদি কেউ এমন কাজ করে থাকে, তবে তা নিয়ম বহির্ভূত।’

ওজোপাডিকো লিমিটেড খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত সচিব (সমন্বয়, বিদ্যুৎ বিভাগ) ও পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম এনামুল কবির বলেন, ‘কোনোভাবেই বিষয়টি এমন হবার নয়। সার্ভিস ক্লাম (কানেক্টর) লাগানোর বিষয়ে অফিসিয়াল কোনো নির্দেশনা নেই। আর কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে যদি কোনো প্রকার অর্থ বেআইনিভাবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই ওই প্রকৌশলীকে বেআইনি কাজের দায় নিতে হবে। যেহেতু আলমডাঙ্গা ওজোপাডিকোর আবাসিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে, এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

আলমডাঙ্গা বিদ্যুৎ অফিসের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশালীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

উৎকোচ দিতে সাংবাদিককে অফিসে দাওয়াত!

আপলোড টাইম : ০১:২৭:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩

নাহিদ হাসান, আলমডাঙ্গা:

খুলনা বিভাগীয় বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলা শাখার ডিস্ট্রবিউশন অফিসের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রকৌশালী মুন্সি জহুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও গ্রাহকের নিকট হতে বিভিন্ন কৌশলে অর্থ আদায়সহ লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) লিমিটেড আলমডাঙ্গা অফিসের আবাসিক প্রকৌশলী হিসেবে মুন্সি জহুরুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দুর্নীতির মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎতের লুজ কন্টাক্ট কমানোর নামে গ্রাহকের মূল সংযোগে ক্লাম লাগানোর কথা বলে নিজস্ব লোকবল দিয়ে গ্রাহক প্রতি ১০০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিমাণে অর্থ গ্রহণ করছেন মুন্সি জহুরুল ইসলাম।

সরেজমিনে গেলে অভিযোগের সত্যতা মেলে। দেখা যায়, গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুন্সি জহুরুল ইসলামের লোকজন সার্ভিস তারের মাথায় একটি করে কানেক্টিং ক্লাম লাগাচ্ছেন। আর এর জন্য প্রতি গ্রাহকের থেকে সার্ভিস চার্জের নাম করে ১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। কানেক্টিং ক্লাম লাগানোর কাজে ব্যস্ত কর্মীরা বলেন, ‘আমরা স্যারের নির্দেশে সকল গ্রাহকের সার্ভিস তার মূল লাইনের তারের সাথে ক্লাম দিয়ে আটকিয়ে দিচ্ছি। এটা প্রতিটি গ্রাহককেই করা লাগবে। কারণ এই ক্লাম দিয়ে তার আটকালে কখনো লুজ কানেকশন হবে না।’ ১০০ টাকা করে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘আমরা স্যারের নির্দেশেই ১০০ টাকা করে নিচ্ছি। এটা সরকারি কোনো কাজ না, একটি প্রকল্পের কাজ।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার বাবুপাড়ার এক গ্রাহক বলেন, ‘প্রথমে আমাদের নিকট থেকে ৩০০ টাকা করে চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু আমরা টাকা দিতে না চাওয়ায় আমাদেরকে বলেছিল এই ক্লাম লাগাতেই হবে, স্যারের নির্দেশ। পরবর্তীতে আমরা বাধ্য হয়েই ক্লাম লাগিয়েছি, মিটার প্রতি ২০০ টাকা করেও দিতে হয়েছে।’

আলমডাঙ্গা পৌর এরশাদপুর এলাকার এক নারী গ্রাহক বলেন, ‘আমার স্বামী বাড়িতে না থাকায় আমি তাদের চাহিদা অনুযায়ী ১০০ টাকা দিতে পারিনি। তাই তারা আমার লাইনে ক্লাম না লাগিয়ে চলে গেছে। তারা বলে গেছে এই ক্লাম না লাগালে লাইনে কোনো সমস্যা হলে পরবর্তীতে ঠিক করা হবে না।’

অপর এক গ্রাহক বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার বাড়ির লাইনে একটি সমস্যা নিয়ে ‘আরই’ সাহেবের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমার কোনো কথা না শুনেই লাইনে সমস্যার জন্য আমাকেই দায়ী করেন এবং আমি কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি আমার বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার হুমকি দেন।’

এ বিষয়ে ওজোপাডিকো আলমডাঙ্গা শাখার ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রকৌশালী মুন্সি জহুরুল ইসলামকে না পেয়ে মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এসময় তিনি বলেন, এটি কোনো সরকারি বা প্রকল্পের কাজ নয়। ক্লাম লাগানোর বিষয়ে তিনি জানেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি।’

গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোনো সরকারি নিয়ম বা অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টাকা নিচ্ছে তাতে কী হয়েছে, গ্রাহকের কাজ দিলে টাকা নিতেই পারে।’ এটা অফিসিয়াল কাজ কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা অফিসিয়াল কোনো কাজ হোক বা না হোক, তাতে আপনার কী?’ টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এভাবে টাকা নিয়ে ৪০ তলা বিল্ডিং করব, আপনি পারলে কিছু করেন। আর যদি ভাগ নিতে চান, তাহলে অফিসে আসেন।’

এ বিষয়ে ওজোপাডিকো চুয়াডাঙ্গার নির্বাহী প্রকৌশালী পলাশ কুমার ঘোষ বলেন, ‘ক্লাম লাগানোর বিষয়ে আমাদের কোনো অফিসিয়াল নির্দেশনা নেই। আমার জানা মতে, এটি কোনো সরকারি বা প্রকল্পের কাজ নয়। যদি গ্রাহক সেবার জন্য কেউ এই কাজ করে থাকে, তবে টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম  নেই। যদি কেউ এমন কাজ করে থাকে, তবে তা নিয়ম বহির্ভূত।’

ওজোপাডিকো লিমিটেড খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত সচিব (সমন্বয়, বিদ্যুৎ বিভাগ) ও পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম এনামুল কবির বলেন, ‘কোনোভাবেই বিষয়টি এমন হবার নয়। সার্ভিস ক্লাম (কানেক্টর) লাগানোর বিষয়ে অফিসিয়াল কোনো নির্দেশনা নেই। আর কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে যদি কোনো প্রকার অর্থ বেআইনিভাবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই ওই প্রকৌশলীকে বেআইনি কাজের দায় নিতে হবে। যেহেতু আলমডাঙ্গা ওজোপাডিকোর আবাসিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে, এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’