ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

আসামি না হয়েও খাটলেন জেল!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:৫৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০২২
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

দর্শনা অফিস: কোনো মামলার আসামি না হয়েও নাম বিভ্রাটে একদিনের জেল খাটলেন চুয়াডাঙ্গার দোস্ত গ্রামের নিরপরাধ আবু সাইদ। ওয়ারেন্ট ভুক্ত পলাতক এক আসামির সঙ্গে নামে কিছুটা মিল থাকায় একদিনের জেল খেটে জামিনে বাড়ি ফিরতে হয়েছে আবু সাইদকে।

অভিযোগ রয়েছে, আসামির নাম, বাবার নাম এবং ঠিকানার সাথে কিছু মিল থাকায় নিরাপরাধ আবু সাইদ (৪২) নামের এক ব্যক্তিকে দর্শনা থানার এএসআই হাফিজ গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেন। গ্রেপ্তারকৃত আবু সাইদ সে দিন হাজারো মিনতি করলে তার কথা দর্শনা থানার কেউ শোনেননি। মামলার প্রকৃত আসামির নাম সাইদুর রহমান (২৫)। আসামি না হয়েও একদিন জেল খাটা এবং কিছু টাকা গচ্চা যাওয়া আবু সাইদের এ দ্বায়ভার আসলে কার?

জানা যায়, ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর বোয়ালমারি পাড়ার আব্দুর রফিকের ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিক মুদি দোকানের মালামাল ক্রয়ের জন্য বাড়ি থেকে দর্শনার দিকে আসছিলেন। এসময় তিনি আমতলা মোড়ের ফারুক হোসেনের বাড়ির সামনে পৌঁছালে দোস্ত মোল্লাপাড়ার মসলেম উদ্দিনসহ কয়েক তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। ঘটনার পরপরই আহত আবু বক্কর ছিদ্দিককে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এবং রাতে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করে দায়িত্বরত চিকিৎসক। এঘটনায় ১৯ সেপ্টম্বর আবু বক্কর ছিদ্দিকের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন বাদি হয়ে মৃত জব্বার মোল্লার ছেলে মসলেম, সিরাজের ছেলে সাইদুল, জসিম মোল্লার ছেলে আইয়ুব আলী, ইলিয়াস টাকের ছেলে দরুদ আলী ও সাদেক বাচ্চুর ছেলে পান্নু খাকে আসামী করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন (জিআর ৩৬৪/১২)।

মামলার তৎকালীন এসআই রবিউল ইসলাম (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) দীর্ঘ তদন্তের পর ২৭/০৬/২০১৩ তারিখে আইয়ুব মোল্লা, দরুদ ও পান্না খাকে মামলার সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় মামলা থেকে অব্যাহতি দেয় এবং মসলেম. সাইদুর রহমান, ওমর আলী, সাইদুর রহমানকে আসামি করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। যেখানে একজন সাইদুর রহমানের পিতার নাম সিরাজ ও অপর সাইদুর রহমানের পিতার নাম ইদু মিয়া মণ্ডল উল্লেখ আছে। দোস্ত গ্রামের সিরাজ প্রধানের ছেলে আবু সাইদ (৪২) ঈদ করতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসলে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দর্শনা থানার এএসআই হাফিজ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেন। একদিন জেল খেটে পরের দিন আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাড়িতে আসেন তিনি।

আবু সাইদ অভিযোগ করে বলেন, আমাকে যখন পুলিশ গ্রেপ্তার করে তখন হাজারও বার বলেছি, আমি কোনো মামলার আসামি না। আমার নাম সাইদুর রহমান না। এই দেখেন আমার জাতীয় পরিচয়পত্র। তখন কোনো কথায় কর্ণপাত করেনি পুলিশ। কোনো মামলার আসামী নাহয়েও আমাকে একদিন জেল খাটতে হলো। সেই সাথে জামিন হতে ৬ হাজার টাকা খরচ হলো। এমন কী থানায় গিয়ে একই কথা বলেছি, তাতেও কাজ হয়নি। উল্টো পুলিশের ধমক খেতে হয়েছে। জামিনে বাড়িতে এসে গতকাল দর্শনা থানায় গিয়েছিলাম। খুব একটা লাভ হয়নি।

এ ব্যাপারে হামলার শিকার হওয়া আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, ‘আমার করা মামলার আসামি দোস্ত গ্রামের বসতিপাড়ার ইদুর ছেলে সাইদুর রহমান, আমতলাপাড়ার সিরাজ উদ্দিন ওরফে সিরুর ছেলে সাইদুর রহমান। সিরাজ প্রধানের ছেলে আবু সাইদ মামলার আসামি না। কেন তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করল আমার জানা নেই।’

এ বিষয়ে এএসআই হাফিজ বলেন, ‘সঠিক ব্যক্তিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বেশি কিছু জানার থাকলে ওসি স্যারের সাথে কথা বলেন।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

আসামি না হয়েও খাটলেন জেল!

আপলোড টাইম : ০২:৫৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০২২

দর্শনা অফিস: কোনো মামলার আসামি না হয়েও নাম বিভ্রাটে একদিনের জেল খাটলেন চুয়াডাঙ্গার দোস্ত গ্রামের নিরপরাধ আবু সাইদ। ওয়ারেন্ট ভুক্ত পলাতক এক আসামির সঙ্গে নামে কিছুটা মিল থাকায় একদিনের জেল খেটে জামিনে বাড়ি ফিরতে হয়েছে আবু সাইদকে।

অভিযোগ রয়েছে, আসামির নাম, বাবার নাম এবং ঠিকানার সাথে কিছু মিল থাকায় নিরাপরাধ আবু সাইদ (৪২) নামের এক ব্যক্তিকে দর্শনা থানার এএসআই হাফিজ গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেন। গ্রেপ্তারকৃত আবু সাইদ সে দিন হাজারো মিনতি করলে তার কথা দর্শনা থানার কেউ শোনেননি। মামলার প্রকৃত আসামির নাম সাইদুর রহমান (২৫)। আসামি না হয়েও একদিন জেল খাটা এবং কিছু টাকা গচ্চা যাওয়া আবু সাইদের এ দ্বায়ভার আসলে কার?

জানা যায়, ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর বোয়ালমারি পাড়ার আব্দুর রফিকের ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিক মুদি দোকানের মালামাল ক্রয়ের জন্য বাড়ি থেকে দর্শনার দিকে আসছিলেন। এসময় তিনি আমতলা মোড়ের ফারুক হোসেনের বাড়ির সামনে পৌঁছালে দোস্ত মোল্লাপাড়ার মসলেম উদ্দিনসহ কয়েক তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। ঘটনার পরপরই আহত আবু বক্কর ছিদ্দিককে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এবং রাতে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করে দায়িত্বরত চিকিৎসক। এঘটনায় ১৯ সেপ্টম্বর আবু বক্কর ছিদ্দিকের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন বাদি হয়ে মৃত জব্বার মোল্লার ছেলে মসলেম, সিরাজের ছেলে সাইদুল, জসিম মোল্লার ছেলে আইয়ুব আলী, ইলিয়াস টাকের ছেলে দরুদ আলী ও সাদেক বাচ্চুর ছেলে পান্নু খাকে আসামী করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন (জিআর ৩৬৪/১২)।

মামলার তৎকালীন এসআই রবিউল ইসলাম (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) দীর্ঘ তদন্তের পর ২৭/০৬/২০১৩ তারিখে আইয়ুব মোল্লা, দরুদ ও পান্না খাকে মামলার সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় মামলা থেকে অব্যাহতি দেয় এবং মসলেম. সাইদুর রহমান, ওমর আলী, সাইদুর রহমানকে আসামি করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। যেখানে একজন সাইদুর রহমানের পিতার নাম সিরাজ ও অপর সাইদুর রহমানের পিতার নাম ইদু মিয়া মণ্ডল উল্লেখ আছে। দোস্ত গ্রামের সিরাজ প্রধানের ছেলে আবু সাইদ (৪২) ঈদ করতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসলে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দর্শনা থানার এএসআই হাফিজ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেন। একদিন জেল খেটে পরের দিন আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাড়িতে আসেন তিনি।

আবু সাইদ অভিযোগ করে বলেন, আমাকে যখন পুলিশ গ্রেপ্তার করে তখন হাজারও বার বলেছি, আমি কোনো মামলার আসামি না। আমার নাম সাইদুর রহমান না। এই দেখেন আমার জাতীয় পরিচয়পত্র। তখন কোনো কথায় কর্ণপাত করেনি পুলিশ। কোনো মামলার আসামী নাহয়েও আমাকে একদিন জেল খাটতে হলো। সেই সাথে জামিন হতে ৬ হাজার টাকা খরচ হলো। এমন কী থানায় গিয়ে একই কথা বলেছি, তাতেও কাজ হয়নি। উল্টো পুলিশের ধমক খেতে হয়েছে। জামিনে বাড়িতে এসে গতকাল দর্শনা থানায় গিয়েছিলাম। খুব একটা লাভ হয়নি।

এ ব্যাপারে হামলার শিকার হওয়া আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, ‘আমার করা মামলার আসামি দোস্ত গ্রামের বসতিপাড়ার ইদুর ছেলে সাইদুর রহমান, আমতলাপাড়ার সিরাজ উদ্দিন ওরফে সিরুর ছেলে সাইদুর রহমান। সিরাজ প্রধানের ছেলে আবু সাইদ মামলার আসামি না। কেন তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করল আমার জানা নেই।’

এ বিষয়ে এএসআই হাফিজ বলেন, ‘সঠিক ব্যক্তিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বেশি কিছু জানার থাকলে ওসি স্যারের সাথে কথা বলেন।’