ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

অস্বাভাবিক লেনদেন ও অবৈধ স্বর্ণের খোঁজে চুয়াডাঙ্গা নগদের অফিসে সিআইডির অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ১২:৪৮:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ নভেম্বর ২০২১
  • / ৫৫ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদের ডিস্ট্রিবিউটর স্বর্ণ ব্যবসায়ী রিপনুল হাসানের অর্ন্তগত নগদ এজেন্টদের কয়েকটি অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত সোমবার রাতে সিআইডির একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে ইতঃমধ্যে দুজনকে আটক করেছে। এ ঘটনাটি গতকাল মঙ্গলবার সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়। অনেককে বলতে শোনা যায়, স্বর্ণ ব্যবসায়ী রিপনুল হাসান স্বর্ণ চোরচালানের টাকা হয়তো নগদের এই অ্যাকাউন্ট দিয়ে পাচার করে থাকতে পারেন। আবার অনেকে বলছেন, ক্রিকেট বেটিং অর্থাৎ অনলাইন জুয়ার টাকাও এই নগদের অ্যাকাউন্ট দিয়ে লেনদেন হতে পারে। তবে সিআইডির পক্ষ থেকে প্রেস বিফিংয়ের পরেই তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
জানা যায়, গত সোমবার রাতে ঢাকা থেকে আসা সিআইডির একটি টিম জীবননগর উপজেলার উথলী বাজারের সেতু কসমেটিকস ও চুয়াডাঙ্গা শহর সংলগ্ন দৌলাতদিয়াড়ে অবস্থিত নগদের কার্যালয় মহিমা টেলিকমে অভিযান চালায়। এসময় উথলী বাজারের সেতু কসমেটিকসের মালিক আহমেদ নাদিমের নামে রেজিস্ট্রশনকৃত নগদের এজেন্ট সিমটি মেহেরপুরে ব্যবহৃত হওয়া এবং অস্বাভাবিক লেনদেন হওয়ায় নাদিমকে সিআইডি গত সোমবার রাতে আটক করে নিয়ে যায়। তবে প্রশ্ন থেকেই যায় নাদিমের নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত সিম দিয়ে মেহেরপুরে কীভাবে অস্বাভাবিক লেনদেন হতো?। আবার নাদিমের নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত ওই সিমটি যা চুয়াডাঙ্গা শহর সংলগ্ন দৌলাতদিয়াড় থেকে নগদের ডিস্ট্রিবিউটর স্বর্ণ ব্যবসায়ী রিপনুল হাসানের নগদে টাকা লেনদেনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল। সিআইডি অভিযান চালিয়ে উক্ত সিমটি আরমানের নিকটে পাওয়ায় সিআইডি তাকেও আটক করে নিয়ে যায়। এসময় সিআইডির অভিযানের বিষয়ে টের পেয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী রিপনুল হাসানের ভাই রোকনুল হাসান ও চাচাতে ভাই কানন বাড়ির পাশে থাকা মাথাভাঙ্গা নদী সাতরিয়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে, গত সোমবার রাতে সিআইডির অভিযানের পর গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে নগদের সব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তালাবন্ধ ছিল নগদের কার্যালয়ও। কোনো কর্মচারী ও কর্মকর্তা এদিন অফিসে আসেননি। এমনকি তাঁদের মোবাইল ফোনটিও বন্ধ করে রেখেছেন। এছাড়া সাধারণ মানুষ মনে করছে স্বর্ণ ব্যবসায়ী রিপন হয়তো এ অঞ্চলে সিন্ডিকেট করে স্বর্ণ পাচার করছেন। যার কারইে সিআইডির অভিযান ও গতকাল সারাদিন নগদের কার্যক্রম বন্ধ।

নগদ এজেন্ট অ্যাকাউন্টে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে সিআইডির হাতে আটক দুজন হলেন- চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নের স্কুলপাড়ার মোতালেব মোল্লার ছেলে আরমান (২৪) ও জীবননগর উপজেলার উথলী বাজারের লাল্টু বিশ্বাসের ছেলে সেতু কসমেটিক্সের প্রোপাইটার আহাম্মেদ নাদিম।
চুয়াডাঙ্গা শহরের একাধিক নগদ এজেন্ট ব্যবসায়ী বলেন, ‘আজ সারাদিন নগদের এজেন্ট সম্পর্কিত সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে কেন বন্ধ রয়েছে তা জানা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার নগদের চুয়াডাঙ্গা জেলার ম্যানেজার, ডিএসওসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। কারণ অস্বাভাবিকভাবে একই দিনে প্রত্যেকের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। আমাদের এজেন্টেদের সকলের নগদ অ্যাকাউন্টে লেনদেনের টাকা রয়েছে। এই টাকা তুলতে না পারলে আমদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।’

কেন হঠাৎ করে নগদের লেনদেন বন্ধ করা হয়েছে এ বিষয়ে কিছু জানে কি না জানেত চাইলে তারা আরও বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার দৌলতদিয়ারে নগদের ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে সিআইডি অভিযান চালিয়েছে বলে শুনেছি। হয়তো নগদের অভ্যন্তরিণ কোনো সমস্যা হওয়ায় নগদ বন্ধ রয়েছে।’

এ বিষয়ে নগদের চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার ডিস্ট্রিবিউটর রিপনুল হাসান রিপন বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর দুই জেলা মিলিয়ে আমার ২২শ এজেন্ট রয়েছে। এতো এজেন্টের ভিড়ে গ্রাহকরা কে কোন কাজে টাকা লেনদেন করছে, তা জানা সম্ভব নয়। একটি সংস্থা তথ্য নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। জীবননগরের উথলী থেকে আহাম্মেদ নাদিম একজন নগদ এজেন্ট ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। আমার কাছেও বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমি বৈধ কাগজপত্র নিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করছি।’

অন্যদিকে, স্থানীয় অনেকের দাবি, ওই ভবনে অবৈধ চোরাচালানি স্বর্ণসহ বিভিন্নভাবে জুয়া ও ক্রিকেট বেটিং হয়ে থাকে। তবে এই তথ্যের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে গত পরশু সিআইডির একটি টিম ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গায় এসে অভিযান চালিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

অস্বাভাবিক লেনদেন ও অবৈধ স্বর্ণের খোঁজে চুয়াডাঙ্গা নগদের অফিসে সিআইডির অভিযান

আপলোড টাইম : ১২:৪৮:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ নভেম্বর ২০২১

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদের ডিস্ট্রিবিউটর স্বর্ণ ব্যবসায়ী রিপনুল হাসানের অর্ন্তগত নগদ এজেন্টদের কয়েকটি অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত সোমবার রাতে সিআইডির একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে ইতঃমধ্যে দুজনকে আটক করেছে। এ ঘটনাটি গতকাল মঙ্গলবার সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়। অনেককে বলতে শোনা যায়, স্বর্ণ ব্যবসায়ী রিপনুল হাসান স্বর্ণ চোরচালানের টাকা হয়তো নগদের এই অ্যাকাউন্ট দিয়ে পাচার করে থাকতে পারেন। আবার অনেকে বলছেন, ক্রিকেট বেটিং অর্থাৎ অনলাইন জুয়ার টাকাও এই নগদের অ্যাকাউন্ট দিয়ে লেনদেন হতে পারে। তবে সিআইডির পক্ষ থেকে প্রেস বিফিংয়ের পরেই তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
জানা যায়, গত সোমবার রাতে ঢাকা থেকে আসা সিআইডির একটি টিম জীবননগর উপজেলার উথলী বাজারের সেতু কসমেটিকস ও চুয়াডাঙ্গা শহর সংলগ্ন দৌলাতদিয়াড়ে অবস্থিত নগদের কার্যালয় মহিমা টেলিকমে অভিযান চালায়। এসময় উথলী বাজারের সেতু কসমেটিকসের মালিক আহমেদ নাদিমের নামে রেজিস্ট্রশনকৃত নগদের এজেন্ট সিমটি মেহেরপুরে ব্যবহৃত হওয়া এবং অস্বাভাবিক লেনদেন হওয়ায় নাদিমকে সিআইডি গত সোমবার রাতে আটক করে নিয়ে যায়। তবে প্রশ্ন থেকেই যায় নাদিমের নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত সিম দিয়ে মেহেরপুরে কীভাবে অস্বাভাবিক লেনদেন হতো?। আবার নাদিমের নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত ওই সিমটি যা চুয়াডাঙ্গা শহর সংলগ্ন দৌলাতদিয়াড় থেকে নগদের ডিস্ট্রিবিউটর স্বর্ণ ব্যবসায়ী রিপনুল হাসানের নগদে টাকা লেনদেনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল। সিআইডি অভিযান চালিয়ে উক্ত সিমটি আরমানের নিকটে পাওয়ায় সিআইডি তাকেও আটক করে নিয়ে যায়। এসময় সিআইডির অভিযানের বিষয়ে টের পেয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী রিপনুল হাসানের ভাই রোকনুল হাসান ও চাচাতে ভাই কানন বাড়ির পাশে থাকা মাথাভাঙ্গা নদী সাতরিয়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে, গত সোমবার রাতে সিআইডির অভিযানের পর গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে নগদের সব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তালাবন্ধ ছিল নগদের কার্যালয়ও। কোনো কর্মচারী ও কর্মকর্তা এদিন অফিসে আসেননি। এমনকি তাঁদের মোবাইল ফোনটিও বন্ধ করে রেখেছেন। এছাড়া সাধারণ মানুষ মনে করছে স্বর্ণ ব্যবসায়ী রিপন হয়তো এ অঞ্চলে সিন্ডিকেট করে স্বর্ণ পাচার করছেন। যার কারইে সিআইডির অভিযান ও গতকাল সারাদিন নগদের কার্যক্রম বন্ধ।

নগদ এজেন্ট অ্যাকাউন্টে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে সিআইডির হাতে আটক দুজন হলেন- চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নের স্কুলপাড়ার মোতালেব মোল্লার ছেলে আরমান (২৪) ও জীবননগর উপজেলার উথলী বাজারের লাল্টু বিশ্বাসের ছেলে সেতু কসমেটিক্সের প্রোপাইটার আহাম্মেদ নাদিম।
চুয়াডাঙ্গা শহরের একাধিক নগদ এজেন্ট ব্যবসায়ী বলেন, ‘আজ সারাদিন নগদের এজেন্ট সম্পর্কিত সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে কেন বন্ধ রয়েছে তা জানা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার নগদের চুয়াডাঙ্গা জেলার ম্যানেজার, ডিএসওসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। কারণ অস্বাভাবিকভাবে একই দিনে প্রত্যেকের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। আমাদের এজেন্টেদের সকলের নগদ অ্যাকাউন্টে লেনদেনের টাকা রয়েছে। এই টাকা তুলতে না পারলে আমদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।’

কেন হঠাৎ করে নগদের লেনদেন বন্ধ করা হয়েছে এ বিষয়ে কিছু জানে কি না জানেত চাইলে তারা আরও বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার দৌলতদিয়ারে নগদের ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে সিআইডি অভিযান চালিয়েছে বলে শুনেছি। হয়তো নগদের অভ্যন্তরিণ কোনো সমস্যা হওয়ায় নগদ বন্ধ রয়েছে।’

এ বিষয়ে নগদের চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার ডিস্ট্রিবিউটর রিপনুল হাসান রিপন বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর দুই জেলা মিলিয়ে আমার ২২শ এজেন্ট রয়েছে। এতো এজেন্টের ভিড়ে গ্রাহকরা কে কোন কাজে টাকা লেনদেন করছে, তা জানা সম্ভব নয়। একটি সংস্থা তথ্য নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। জীবননগরের উথলী থেকে আহাম্মেদ নাদিম একজন নগদ এজেন্ট ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। আমার কাছেও বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমি বৈধ কাগজপত্র নিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করছি।’

অন্যদিকে, স্থানীয় অনেকের দাবি, ওই ভবনে অবৈধ চোরাচালানি স্বর্ণসহ বিভিন্নভাবে জুয়া ও ক্রিকেট বেটিং হয়ে থাকে। তবে এই তথ্যের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে গত পরশু সিআইডির একটি টিম ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গায় এসে অভিযান চালিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন।