মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে

  • আপলোড তারিখঃ ১৮-০১-২০১৮ ইং
রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে
সমীকরণ ডেস্ক: নগদ অর্থের সংকটে আছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। তারল্য সংস্থানে তাই রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালীর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের। মেয়াদি ঋণ, কলমানি ও সাব-অর্ডিনেটেড বন্ডের মাধ্যমে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অর্থসংস্থানে এ চার ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে। একই কারণে এ চার ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোরও (এনবিএফআই)। জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত এ চার ব্যাংক থেকে এখন পর্যন্ত ১৯ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করেছে দেশের বেসরকারি ব্যাংক ও এনবিএফআইগুলো। গত মঙ্গলবার কলমানিতে এ চার ব্যাংক থেকে তারা ধার নিয়েছে ৩ হাজার ২১২ কোটি টাকা। এছাড়া সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড কিনে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ৬ হাজার ৫১৯ কোটি টাকার মূলধন জোগান দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক চারটি। বন্ডের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে মূলধন জোগান নেয়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে এবি, প্রাইম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল, ইউসিবিএল, ওয়ান, সাউথইস্ট, ইস্টার্ন, এক্সিম, আল-আরাফাহ্, স্ট্যান্ডার্ড, ঢাকা, আইএফআইসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া। হলমার্ক, বিসমিল্লাহ্ গ্রুপ ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির মতো বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির পর গত তিন বছর রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছিল। অন্যদিকে একই সময়ে বিনিয়োগে আগ্রাসী ছিল দেশের অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংক। এতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় অতিরিক্ত তারল্য সৃষ্টি হলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় দেখা দেয় তীব্র তারল্য সংকট। আগামী ছয় মাসে এ সংকট আরো বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগের কিছু নেই বলে মনে করেন ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় ঋণ দিতে পারে না। এজন্যই তাদের অতিরিক্ত তারল্য সৃষ্টি হয়েছে। আন্তঃব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে তাদের টাকা ধার নিয়ে বেসরকারি ব্যাংক বিনিয়োগ করবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা টাকা না দিলে বিনিয়োগকারীরা কোথায় যাবে? গ্রাহকদের ৬৪ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকার আমানত রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের কাছে। এর মধ্যে ৪৫ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। বাকি টাকাই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ হিসেবে রয়েছে। দেশের ২৪টি ব্যাংক ও এনবিএফআইকে মঙ্গলবার কলমানিতে ৫৩০ কোটি টাকা ধার দেয় জনতা ব্যাংক। এর মধ্যে ১০টি বেসরকারি ব্যাংক ধার করে ৩৪৭ কোটি টাকা। এছাড়া ১৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ১৮৩ কোটি টাকা ধার দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। দেশের ৩৫টি ব্যাংক ও এনবিএফআই জনতা ব্যাংক থেকে ২ হাজার ১৮৭ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত ধার নিয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি ব্যাংক মেয়াদি আমানত নিয়েছে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। ৭৪০ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত নিয়েছে ১৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আইসিবিতে জনতা ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে ১৯০ কোটি টাকা। এছাড়া রিভার্স রেপোর মাধ্যমে দুটি ব্যাংককে ১০০ কোটি টাকা ধার দিয়েছে জনতা ব্যাংক। এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যান্য ব্যাংকের মতো মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে জনতা ব্যাংকও। নিজেদের মূলধনের জোগান বাড়াতে ৭০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংকটি। অথচ দেশের ১৫টি ব্যাংকের ১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকার বন্ড কিনে জনতা ব্যাংক মূলধন জোগান দিয়েছে। গ্রাহকদের ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকার আমানত নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃত রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। বিশাল অংকের এ আমানত থেকে ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণ মাত্র ৪২ হাজার কোটি টাকা। বাকি প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকাই সরকারি-বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকটি। দেশের ২৭টি ব্যাংক ও ২০টি এনবিএফআইয়ের কাছে সোনালী ব্যাংকের মেয়াদি আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ব্যাংকটি থেকে কলমানিতে ১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা ধার নিয়েছে ১৪টি ব্যাংক ও ২৭টি এনবিএফআই। এছাড়া ২ হাজার ১৩৪ কোটি টাকার বন্ড কিনে দেশের ২১টি বেসরকারি ব্যাংকের মূলধন জোগান দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। একই সময়ে সরকারি ট্রেজারি বন্ড ও বিলে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে সোনালী ব্যাংক। এবিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, দেশের বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর হাতে এখন বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত আমানত নেই। তাছাড়া এডি রেশিও (আমানত ও ঋণ অনুপাত) নির্ধারিত সীমা পার হয়ে যাওয়ায় অনেক ব্যাংকই নতুন আমানত সংগ্রহ না করে গ্রাহকদের ঋণ দিতে পারবে না। এজন্য প্রতিদিনই কোনো না কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছ থেকে আমানত নেয়ার জন্য আসছে। তবে ধার দেয়ার ক্ষেত্রেও আমরা ওই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বাস্থ্য নিরীক্ষা করে দেখছি। রাষ্ট্রায়ত্ত আরেক ব্যাংক অগ্রণী থেকে মেয়াদি আমানত নিয়ে বিনিয়োগ করেছে দেশের ৩৮টি ব্যাংক ও ২৫টি এনবিএফআই। মঙ্গলবার পর্যন্ত ব্যাংকটি থেকে নেয়া মেয়াদি আমানতের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৮টি ব্যাংক নিয়েছে ৫ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। বাকি ১ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা নিয়েছে দেশের ২৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। দেশের ৩০টি ব্যাংক ও ৩২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক থেকে কলমানিতে ধার নেয় ৬৫০ কোটি টাকা। যদিও গত ২৮ ডিসেম্বর কলমানি বাজারে ব্যাংকটির হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ ছিল। নিজের মূলধন ঘাটতি পূরণে সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক ও আইসিবির কাছে ৬০০ কোটি টাকার বন্ড বিক্রি করেছে অগ্রণী ব্যাংক। যদিও দেশের ১৬টি বেসরকারি ব্যাংকের মূলধনে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার জোগান দিয়েছে ব্যাংকটি। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংকে গ্রাহকদের জমাকৃত আমানত ছিল ৫৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। একই সময়ে ৩১ হাজার ৯১১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছিল ব্যাংকটি। এছাড়া ১৪ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা সরকারি ট্রেজারি বন্ড ও বিলে বিনিয়োগের পাশাপাশি সিআরআর ও এসএলআর হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে অগ্রণী ব্যাংকের জমা ছিল ৩ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে কেবল রূপালী ব্যাংক। অন্য তিনটি ব্যাংকের তুলনায় আকারে কিছুটা ছোট হলেও ব্যাংকটির আমানতের ওপর নির্ভর করছে দেশের অর্ধেকের বেশি ব্যাংক ও এনবিএফআই। মঙ্গলবার কলমানি বাজারে রূপালী ব্যাংকের বিনিয়োগ ছিল ২৯৩ কোটি টাকা। দেশের বেসরকারি খাতের আটটি ব্যাংক এ টাকা ধার নেয়। একই সময়ে বিনিয়োগের জন্য রূপালী ব্যাংক থেকে ৪ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত ধার করে বেসরকারি খাতের ২৫টি ব্যাংক ও ১৩টি এনবিএফআই। এছাড়া ২২টি বেসরকারি ব্যাংকের মূলধন জোগান দিতে ১ হাজার ৭৯০ কোটি টাকার বন্ড কিনেছে রূপালী ব্যাংক। যদিও রূপালী ব্যাংকের মূলধনের জোগান বাড়াতে ৬০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির পর্ষদ।


কমেন্ট বক্স
notebook

পরীক্ষায় অনুপস্থিতদেরও উত্তীর্ণের অভিযোগ, সমালোচনার ঝড়