সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা : নিজেদের আড়াল করতে গডফাদারদের দৌঁড়ঝাপ

  • আপলোড তারিখঃ ১৮-০১-২০১৮ ইং
৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা : নিজেদের আড়াল করতে গডফাদারদের দৌঁড়ঝাপ
দামুড়হুদায় ৬৪ ভরি স্বর্ণের গহনাসহ চোরাকারবারী আটক : কামালের স্বীকারোক্তিতে পলাতক জুয়েলসহ নিজস্ব প্রতিবেদক: দামুড়হুদা থানা পুলিশের অভিযানে প্রায় ৬৪ ভরি সোনার গহনাসহ জীবননগর উপজেলার সোনা পাচারকারীদলের সদস্য কামাল হোসেন আটক হওয়ার পর তাকে ছাড়াতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেও ব্যর্থ হয়েছে গডফাদাররা। এখন চোরাকারবারীদের তালিকা থেকে নিজেদেরকে আড়াল করতে তদবির শুরু করেছে পাচারকারীদলের অনেক গডফাদার। এছাড়া পুলিশের ভুমিকা সচ্ছ থাকায় বিপদে পড়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তালিকাভুক্ত গডফাদাররাও। এসব গডফাদারা চেষ্টা করছে আটক কামালের মুখ থেকে আর কারও নাম যেন প্রকাশ না হয়। এমন তদবিরের জন্য দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলার বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে পুলিশের কানে দেনদরবারের বয়ান অব্যাহত রেখেছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এমন গুঞ্জনই শোনা যাচ্ছিলো দামুড়হুদার সর্ব মহলে। এই গুঞ্জনের কিছুটা সত্যতাও স্বীকার করলেন দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আকরাম হোসেন। গত মঙ্গলবার সকালে জীবননগর থেকে চুয়াডাঙ্গাগামী যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশী চালিয়ে জীবননগর আশতলা পাড়ার সোনা চোরাকারবারী কামালকে আটক করে তার জ্যাকেটের পকেট থেকে লুকানো অবস্থায় ৬৪ ভরি ৪ আনা এক রতি স্বর্নালংকার উদ্ধার করে। এ ঘটনায় কামালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ি প্রকাশ পায়- সোনার গহনার মুল মালিক সোনাপাচারচক্রের মূল হোতা জীবননগর উপজেলার কেডিকে ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা খাইরুল বাশার শিপলুর ছোট ভাই জুয়েলসহ আরও কয়েকজন। পুলিশ এ ঘটনায় কামাল, জুয়েল ও অজ্ঞাত এক ব্যক্তিসহ ৩ জনের নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেছে। অনসন্ধানে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলার সীমান্তগুলি এখন সোনা চোরাকারবারীদের নিরাপদ রুট। সীমান্তের বিভিন্ন রুট হয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার সোনা পাচার হলেও আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা এর কিছুটা আটক করতে পারলেও এর সিংহভাগই নিরাপদে পাচার হচ্ছে। এ বিষয়ে আরো জানা গেছে, এ জেলার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার হচ্ছে সোনা ও রুপা এবং ভারত থেকে আসছে অতি নি¤œমানের সোনা-রুপার গহনা। ইতিমধ্যে সোনার গহনাসহ আটক সোনা চোরাকারবারী চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার আশতলাপাড়ার মৃত. মুনসুর আলীর ছেলে কামাল হোসেনের স্বীকারোক্তি মোতাবেক জীবননগর উপজেলার বৃহত্তর উথলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত শরীফ উদ্দীনের ছেলে ও নবগঠিত কেডিকে ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শিপলুর ভাই জুয়েলসহ (৩৬) অজ্ঞাত আরও একজনকে পলাতক দেখিয়ে মামলা করা হয়েছে। এই তিন জন ছাড়া এই সোনা চোরাচালানী চক্রের সাথে আরও কে কে জড়িত আছে তা জানতে আটক কামালকে আদালতে সোপর্দ করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ৭দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করেছেন। দীর্ঘদিন থেকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলার সীমান্তগুলো সোনা পাচারকারীদের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে বলে মনে করেন এলাকার সচেতন মহল। ইতিপূর্বেও মাঝে মধ্যে সোনা ও রুপোর ছোট ছোট চালান পুলিশ ও বিজিবির হাতে ধরা খেলেও আইন শৃংখলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অভিকাংশ চালানই পৌছে যায় সঠিক গন্তব্যে। দামুড়হুদা থানা পুলিশের হাতে সোনার গহনাসহ এক পাচারকারী আটক হওয়ার পর অনেক দেন দরবার করেও কোন লাভ না হওয়ায় এই পাচারকারী চক্রের হোতারা একটু হলেও হোচট খেয়েছে বলেও মনে করছে সচেতন মহল। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর সড়ক দিয়ে চোরাচালানের মালামাল যাচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে একটি যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি করে দুইটি বাক্স ও চোরাকারবারী কামাল হোসেনকে আটক করা হয়। বাক্স দুইটি থেকে ৬৪ ভরি স্বর্ণের গহনা উদ্ধার করা হয়। পরে স্বর্ণের গহনাসহ চোরাকারবারীকে থানায় নেয়া হয়। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা ও জীবননগর সার্কেল), দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হাসানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থানায় এসে পুলিশের এ ধরণের চোরাচালান বিরোধী অভিযানের প্রশংসা করেন। দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন জানান, কামালকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই সোনার গহনা পাচারকারীচক্রের গডফাদারদের সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা নিয়ে পুলিশ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। সোনা পাচারকারীচক্রের গডফাদাররা যত বড় শক্তিশালীই হোকনা কেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।


কমেন্ট বক্স