বিতর্ক আর নীরবতার মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে স্বাস্থ্য সহকারী পদে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির (১১-২৯ গ্রেড) নিয়োগ প্রক্রিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৫৯ মিনিটে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ হালনাগাতকৃত ওয়েবসাইটে নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। এই তালিকায় স্থান পেয়েছে অনুত্তীর্ণ প্রার্থীকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে উত্তীর্ণ করা আলোচিত সেই প্রার্থী। এই পরীক্ষাকে ঘিরে অনিয়ম ও স্বচ্ছতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয় পরীক্ষার আগের রাত থেকেই। বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরেও। গতকাল সকাল সাতটা বাজার ঠিক এক মিনিট আগে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ওয়েবসাইটের নোটিশ বোর্ডে নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বৃহস্পতিবার ২৬ জুন তারিখে জেলা সিভিল সার্জন ও নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিব ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত ‘সিএসএফ/প্রশাসন/১১-২০ গ্রেড জনবল নিয়োগ/২০২৫/১০৮৩’ নং স্মারকে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়।
এদিকে, চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের সময় নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সকাল ৭টায় ফলাফল বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে নিয়োগ বোর্ডের সদস্যসচিবের স্বাক্ষরের তারিখ ২৬ জুন উল্লেখ রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে নিয়োগ বোর্ডের কার্যক্রম কি রাত ১২টার পরেও চলেছে? নিয়োগ বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালনা সম্পর্কে জানতে সিভিল সার্জনের অফিসে গেলে সিভিল সার্জন ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্যসচিবের অনুপস্থিতির কারণে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বন্ধ পাওয়া যায় প্রধান সহকারীও কক্ষও।
জানা গেছে, গত শুক্রবার (২০ জুন) জেলার সদর ও দামুড়হুদা উপজেলার ১৯টি কেন্দ্রে একযোগে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এ পরীক্ষার লিখিত অনুষ্ঠিত হয়। ৩৯টি শূন্য পদে নিয়োগের বিপরীতে ১৩ হাজার ৬৬৮ জন চাকরি প্রার্থী ছিলেন। ফলে প্রতি একটি পদের জন্য প্রতিযোগিতা করেছেন ৩৫০ জনেরও বেশি পরীক্ষার্থী। রোববার (২২ ফেব্রুয়ারি) লিখিত পরীক্ষায় ২০৫ জনকে উত্তীর্ণ করে তালিকা প্রকাশ করা হয়। এবং মৌখিক পরীক্ষা ২৪ জুন মঙ্গলবার শুরু হয়ে চলে বুধবার (২৫ জুন) শেষ সময় বিকেল পাঁটারও পর। এদিন সন্ধ্যায় ছয়টায়ও মৌখিক পরীক্ষা চলে।
এরইমধ্যে পরীক্ষা কক্ষের অনিয়ম তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে পরীক্ষক পরীক্ষার্থীকে উত্তর বলে দেন, প্রকাশিত ফলফল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরীক্ষায় অনুর্ত্তীত পরীক্ষার্থীরা অনুপস্থিত প্রাথীদেরও উত্তীর্ণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত দাবি করে সাধারণ নাগরিক ও ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকেও প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়। চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পরেও ২৪১৯১১০২৯৯০ রোল নম্বরের প্রার্থী পরীক্ষার হলে অনুপস্থিত ছিল বলে নতুন করে অভিযোগ উঠে।
বিতর্ক বাড়ায় সোমবার (২৩ জুন) সংশোধিত নতুন বিজ্ঞপ্তি। সেই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ২২/০৬/২০২৫ তারিখে প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রাথীদের ফলাফল বিজ্ঞপ্তিতে মুদ্রণজনিত ত্রুটির কারণে রোল নম্বর ১৮১৯৩৪০৩২৬৭ এর স্থলে রোল নম্বর ১৮১৯৩৪০৩২৭৬ লিপিবদ্ধ হয়েছে। তদপ্রেক্ষিতে ১৮১৯৩৪০৩২৭৬ রোল নম্বরধারী পরীক্ষার্থীর পরিবর্তে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৮১৯৩৪০৩২৬৭ রোল নম্বর প্রার্থীকে ২৫/০৬/২০২৫ তারিখে বিকেল ২টা ৩০ মিনিটে মৌখিক পরীক্ষার জন্য চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো। এই প্রার্থীই জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে চাকরি পেয়েছেন।
এসব বিষয়ে জানতে গতকাল সিভিল সার্জন অফিসে উপস্থিত হয়ে সিভিল সার্জন ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্যসচিব ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদকে না পেয়ে পরবর্তীতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে ফোন রিসিভ না করায় কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগেও, বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার সিভিল সার্জন ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।