বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে গুণী সিনিয়রকে শ্রদ্ধায় চিরস্মরণীয় করে রাখলেন সহকর্মীরা

একটি চেয়ার, একটি অধ্যায়, একটি ভালোবাসার নিদর্শন
  • আপলোড তারিখঃ ০৩-০৬-২০২৫ ইং
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে গুণী সিনিয়রকে শ্রদ্ধায় চিরস্মরণীয় করে রাখলেন সহকর্মীরা


চেয়ার কখনো খালি থাকে না, কথাটির একটি বিশেষ বিশেষত্ব আছে। মানুষ যায়, মানুষ আসে। চেয়ার পূরণও হয়। ইতিহাসে এমন নজির আছে কি না, যোগ্য ব্যক্তির ভালোবাসা ও সম্মানে তার চেয়ারে পরবর্তী যোগ্যজন আর বসেননি। সৃষ্টি করেছেন এক অনন্য উদাহরণ। পূর্ববর্তী গুণীজনের সম্মানে নতুন গুণীজন চেয়ারটিকেই সম্মানের পাত্র ঘোষণা করেছেন। স্বযত্নে সংরক্ষণ করা হচ্ছে পূর্ববর্তী গুণীজনের চেয়ারটিকেও। এ যেন সম্মান প্রদান, ধারণ, বহন তথা ধারাকে অব্যহত রাখার অনন্য চেষ্টা। এ যেন ভ্রাতৃত্বের মধ্যেই জৈষ্ঠজনকে উপযুক্ত সম্মান প্রদানের অনন্য উদাহরণ। বলছিলাম চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের একটি চেয়ার আর গুণী শিক্ষকদের গুণের অসাধারণ চর্চার কথা। যেখানে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতি, অনিয়ম, একজনের সাথে আরেকজনের বনাবনি না হওয়া, সেখানে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বিসিএস ক্যাডার শিক্ষকগণ চর্চা করছেন ন্যায়ের, সম্মানের আর সমাজের জন্য দারুণ মহানুভব উদাহরণ তৈরির।


চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগ। প্রায় মাস পাঁচেক হয়েছে এই বিভাগের অত্যান্ত সুনামধন্য গুণী শিক্ষক ও বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজ বদলিজনিত কারণে সরকারি বাঙলা কলেজ, ঢাকায় যোগদান করেছেন। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে চাকরিরত অবস্থায় তিনি শুধুমাত্র বাংলা বিভাগের নয়, কলেজের সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের হৃদয়েই জায়গা করেছিলেন। তার সৃজনশীল কাজ সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতো। অসাধারণ ক্লাস নেয়ার দক্ষতা, শিক্ষার্থীদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলো। তার বদলি অনেকটা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল হৃদয় বিদারক। আনুষ্ঠানিক বিদায় অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র বাংলা বিভাগ নয়, ইংরেজিসহ প্রায় সব বিভাগের শিক্ষার্থীরাই ছিলেন অশ্রুসিক্ত।


সেই প্রিয় শিক্ষক ড. আব্দুল আজিজের আরেকজন সতীর্থ চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান তথা গর্ব চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজেরই বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুন্সী আবু সাইফ। তিনি বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে নিযুক্ত হয়েছেন। তবে তাঁর সিনিয়র সহকর্মী ড. আব্দুল আজিজের ব্যবহৃত বিভাগীয় প্রধানের চেয়ারে বসেননি। বিভাগের সকল শিক্ষক মিলে সম্মান ও ভালোবাসায় প্রিয় সিনিয়রের চেয়ারটিকে ‘ড. আব্দুল আজিজ চেয়ার’ ঘোষণা করে সংরক্ষিত করেছেন। একজন গুণী সিনিয়র শিক্ষকের প্রতি আরেকজন সুনামধন্য গুণী শিক্ষক তথা চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষকদের এই অনন্য উদাহরণ ইতোমধ্যেই প্রশংসা কুঁড়িয়েছে বিভিন্ন মহলে। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরাও এটাকে নিয়েছেন অত্যান্ত সম্মানের সাথে।
এদিকে, এই ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সদ্য সাবেক বিভাগীয় প্রধান ড. আব্দুল আজিজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন এক আবেগঘন পোস্ট। তিনি লিখেছেন, ‘ঐ যে আপ্ত বাক্য বা কথাটি : মানুষ যায়, মানুষ আসে, চেয়ার কখনো শূন্য হয় না। ঐ শাশ্বত বাণী-বক্তব্য কখনো মিথ্যা হয়েছে কি-না, আমার জানা নেই। তবে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মুন্সি আবু সাইফ ঐ কথাটি ভুল প্রমাণিত করেছেন। আমি (অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আজিজ) গত জানুয়ারি মাসে সরকারি বাঙলা কলেজ, ঢাকাতে চলে এসেছি। বিভাগীয় প্রধানের চেয়ারটি (আমি যে চেয়ারে বসতাম) পাঁচ মাস যাবৎ খালি পড়ে আছে। স্বাভাবিকভাবেই ঐ চেয়ারে ড. সাইফের আসন গ্রহণ করার কথা। তিনি বসেননি। তাছাড়া, ঐ চেয়ারটিকে ঘোষণা করেছেন : ‘অধ্যাপক ড. মো: আব্দুল আজিজ চেয়ার (সংরক্ষিত)। ফেইসবুকে এই সংবাদ দেখে আমি অভিভূত হই।


অতিসম্প্রতি আমি পূর্বের কর্মস্থল চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ এবং আমার প্রিয় বাংলা বিভাগে বেড়াতে গিয়েছিলাম। দৃশ্যটি স্বচক্ষে অবলোকন করার পর ড. সাইফকে ঐ চেয়ারে আসন গ্রহণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করলেও তিনি ঐ চেয়ারে বসেননি। অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এ কে এম সাইফুর রশীদ স্যারসহ কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী আমাকে মনে রেখেছেন জেনে আমি খুশি হয়েছি। বাংলা বিভাগের আহ্বানে শিক্ষক-কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে একই টেবিলে বসে খানা খেয়েছি এবং অনেক আনন্দ পেয়েছি। পরবর্তী কার্যক্রমে কলেজ প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং বাংলা বিভাগের শিক্ষক-ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নিয়ে আম, জাম, কাঁঠাল, বকুল, তেঁতুল প্রভৃতি গাছের চারা রোপণ করেছি। কুড়ি বছর পর হয়ত আমার প্রিয় মানুষগুলো ঐ কলেজে থাকবে না; কিন্তু ওরা (গাছেরা) হয়ত থাকবে। শেষে এসে, ভালোবেসে, বসে বসে, কৃতজ্ঞ-নিঃশ্বাসে, বিশ্বাসে বিশ্বাসে সাইফ ভাইকে স্মরণ না করে পারছি না। ভালো থাকুক, আমার প্রিয় বাংলা বিভাগ। ভালো থাকুক, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ।’



কমেন্ট বক্স
notebook

আলমডাঙ্গা ও জীবননগরে গাংনীতে জামায়াতের দায়িত্বশীল সমাবেশ