চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে আটক অবস্থায় মাদক মামলার এক হাজতির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার ভোরে সাড়ে পাঁচটার দিকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত হাজতি মহিরুল ইসলাম (৪০) দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার কুড়ুলগাছি পশ্চিমপাড়া এলাকার মৃত আকবর আলীর ছেলে। এদিকে, এ মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মহিরুল ইসলামের পরিবার। তাদের অভিযোগ, গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজতে তাকে মারধর করা হয়, অতিরিক্ত প্রহারের ফলে গুরুতর আহত হয়ে পরে তার মৃত্যু ঘটেছে।
জানা গেছে, দামুড়হুদা থানার ২০২৩ সালের একটি মাদক মামলার (মামলা নম্বর-০৬, তারিখ: ০৮-০৩-২০২৩; জিআর নম্বর-২৬/২৩; ধারা: ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ৩৬(১) সারণি ৩২(ক)) আসামি ছিলেন। গত শনিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে দর্শনা থানা পুলিশ মহিরুলকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। একই দিন আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
কারাগারা সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার দিবাগত রাত রাত ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে কারাগারে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মহিরুল। পরে রাত ২টা ২৫ মিনিটে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে, গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এএসএম আব্দুর রউফ শিবলুর উপস্থিতিতে হাসপাতালের লাশঘরে সদর থানা পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন সম্পন্ন করে। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে মনিরুলের মরদেহ সদর হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়।
নিহত মহিরুলের বড় ভাই সুবার আলী বলে, ‘পুলিশ যখন তাকে তুলে নিয়ে যায়, তখন তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। কিন্তু এখন দেখি ভাইয়ের হাতে আঘাতের চিহ্ন। পুলিশকে এর দায় নিতে হবে, পুলিশই তাকে মেরে ফেলেছে।’ সুবার আলী আরও জানান, ‘১০ থেকে ১২ দিন আগে পাড়ায় একটি বিরোধে জড়িয়ে মহিরুলকে মারধর করেছিলো কয়েকজন। তবে, এই কয়দিনে সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ শনিবার তাকে যখন গ্রেপ্তার করে তার শরীরে কোনো আঘাত ছিল না। তবে আজ তার হাতে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি।’
নিহতের ভাতিজি কাজল রেখা বলেন, ‘সাদা পোশাকের দুজন পুলিশ হঠাৎ করেই বাড়িতে ঢুকে পড়ে। কিন্তু চাচা তাদেরকে জিঙ্গেস করছিল, আমি কী করেছি, আমাকে কেন গ্রেপ্তার করা হবে। আমাদের সামনেও পুলিশ চাচাকে মারধর করে। চাচা সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।’ ভাতিজা গাফ্ফার বলেন, ‘দর্শনা থানার দুজন পুলিশ যখন ছোট আব্বুকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাচ্ছিলো, আমরা বাধা দেয়ার চেষ্টা করি। পুলেশ বলছিলো ওয়ারেন্ট আছে, কিন্তু ওয়ারেন্ট আমাদেরকে দেখায়নি। আমি ওয়ারেন্ট দেখতে চাইলে আমাকে থাপ্পড় মারতে চেষ্টা করে।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রকিন সাদী বলেন, কারাগার থেকে হাজতি মনিরুলকে যখন জরুরি বিভাগে নেয়া হয়, তিনি সম্পূর্ণ চেতনায় ছিলেন না। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নাসিমুজ্জামান তাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে ডা. নাজিমুজ্জামান তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ অবস্থায় ধারণা করা হচ্ছে তিনি স্ট্রোকে মারা যেতে পারেন।
এ বিষয়ে দর্শনা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহীদ তিতুমীর বলেন, শনিবার বেলা ১১টার দিকে মাদক মামলার ওয়ারেন্টবুক্ত আসামি মহিরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এবং সাড়ে ১১টার মধ্যেই আমরা তাকে কোর্টে চালান করে দিই। আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। আসামিকে প্রহার করার কোনো সুযোগ নেই, এ ধরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে, ময়নাতদন্তের পর গতকাল বিকেলেই মহিরুল ইসলামের মরদেহ তার নিজ বাড়িতে নেয়া হয়। পরে মাগরিবের নামাজের পর জানাজা শেষে কুড়ুলগাছি পশ্চিমপাড়া কবরস্থানে দার লাশের দাফন সম্পন্ন হয়।