মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, প্রবাদে আছে ‘জাল যার, জলা তার’। কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের বাদ দিয়ে বাঁওড় ও প্রাকৃতিক জলমহালগুলোর প্রভাবশালীদের মাঝে ইজারা দেওয়া হয়। ফলে বাঁওড়গুলোতে দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও উৎপাদন ধ্বংস হয়ে গেছে। বাঁওড়গুলোতে বাণিজ্যিক উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃত্রিম খাবার ও রাসায়নিক উপাদান ব্যবহারের ফলে জলমহালগুলোর তার প্রাকৃতিক রূপ হারিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিল-বাঁওড়গুলো প্রকৃত মৎস্যজীবীদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। জল যার জলা তার, এই নীতি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করব। তরুণ প্রজন্ম আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বাঁওড় পাড়ের মৎস্যজীবী হালদার সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন। এর আগে সকাল ১০টায় বলুহর বাঁওড় পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে মৎস্যজীবী হালদার সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল, জেলা খেতমজুর সমিতির সভাপতি ফজলুর রহমান ও মৎস্য অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ মৎস্য কর্মকর্তা কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন। সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্যজীবী হালদার সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা বলেন, শত শত বছর ধরে হালদার মৎস্যজীবীরা বাঁওড় মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার জলমহাল নীতি সংশোধন করে বাঁওড়গুলো বাণিজ্যিক স্বার্থে মৎস্যজীবীদের মাঝে ইজারা দেয়। ইজারা নিয়ে প্রভাবশালী মহলের লোকজন বাওড়ে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। ইজারাদাররা বাওড়ে মৎস্য আহরণ ও বাঁওড় পাড়ের বাসিন্দাদের ওপর নানাভাবে হয়রানি করে আসছে।
হালদার সম্প্রদায়ের মৎস্যজীবীরা বলেন, হালদার সম্প্রদায়ের প্রকৃত মৎস্যজীবীরা আজ মানবেতর জীবনযাপন করছে। জীবিকা হারিয়ে আজ মৎস্যজীবীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। প্রভাবশালীরা বাঁওড় ইজারা নিয়ে মৎস্যজীবীদের বাওড়ে অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ করেছে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এত মানুষ শহিদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশের সকল বাওড়ের ইজারা বাতিল করতে হবে। তাহলে বাঁওড় বাঁচবে। পরিবেশ, প্রকৃতি ও বাঁওড় পাড়ের মৎস্যজীবীরা বাঁচবে। মতবিনিময় সভায় মৎস্যজীবী হালদার সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা ইজারা পদ্ধতি বাতিল করে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের মাঝে বাঁওড় ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।