সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসন কিছুটা নড়েচড়ে বসলেও জীবননগরের কিছু এলাকায় এখনো অব্যাহত রয়েছে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন। উপজেলার উথলী ইউনিয়নের একতারপুর বাওড় থেকে বালি উত্তোলনে ব্যবহৃত ড্রেজার মেশিন সরিয়ে নেওয়া হলেও ধোপাখালি নদী থেকে বালি তোলা চলছে নির্বিঘ্নে। যেন প্রশাসনের চোখের সামনেই বালি লুটের মহোৎসব। গত কয়েকদিন আগে ধোপাখালি, একতারপুর ও রায়পুরের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে প্রকাশ্যে বালি উত্তোলনের খবর উঠে আসে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাময়িক তৎপরতা দেখা গেলেও অনেক জায়গায় থামেনি এই অবৈধ কর্মকাণ্ড।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ধোপাখালি নদীর পাশে একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে বিশাল বালির স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিদিন ট্রাক্টরে করে বিভিন্ন স্থানে বালি বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রশাসনের কিছু অংশকে ‘ম্যানেজ’ করেই দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছে এই অবৈধ ব্যবসা। এদিকে রায়পুর ইউনিয়নের পুরাতন চাকলা গ্রামে নজরুল মেম্বার পুকুর খননের নাম করে বালি তুলে বিক্রি করায় পাশের কবরস্থান ধসে যাওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে গ্রামবাসী।
ধোপাখালি গ্রামের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নিউজ হওয়ার পর মনে করেছিলাম প্রশাসন কিছু একটা করবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, প্রশাসন বরং এদের সুযোগ করে দিচ্ছে। নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে, আশপাশের জমিও হুমকির মুখে পড়েছে।’ এ বিষয়ে পুরাতন চাকলার ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. আ. হান্নান বলেন, ‘নজরুল মেম্বার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পুকুর খননের নামে বালি তুলে বিক্রি করায় তার পাশে থাকা কবরস্থানটা ধসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা ইউএনও’র নিকট অভিযোগ করেছিলাম। তিনি দুই পক্ষকে ডেকে নজরুল মেম্বারকে কবরস্থানে মাটি দেওয়ার জন্য বললেও এখনও তিনি মাটি দেয়নি। অথচ নজরুল মেম্বার প্রতিদিন বালি বিক্রি করছে।’ এ বিষয়ে জানতে নজরুল মেম্বারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে, তা সঠিক না।’
জীবননগর উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব মো. কামরুল হোসেন বলেন, ‘ধোপাখালি নদী থেকে বালি তোলা হচ্ছে, এটা আমি গ্রামের মানুষের কাছে শুনেছি। বালি তোলার কারণে এলাকার মানুষের রাস্তা দিয়ে চলাচল করা কষ্ট হয়ে পড়েছে। প্রশাসন যদি এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে যে কোনো সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
উথলী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. জহুরুল ইসলাম ঝণ্টু বলেন, ‘বালি তোলার বিষয়টি আমি কিছুই জানি না, আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। কালকে আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখে বলতে পারবো।’ এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আল-আমীনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে স্থানীয়দের দাবি, কেবল তদন্ত বা আশ্বাস দিয়ে দায় সেরে ফেলা যাবে না। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই বালি লুট বন্ধ করতে হবে।