মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

কার্পাসডাঙ্গায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী পালন

ব্যক্তি মালিকানাধীন আটচালা ঘর, সংস্কার ও অধিগ্রহণে পদক্ষেপ দাবি
  • আপলোড তারিখঃ ২৬-০৫-২০২৫ ইং
কার্পাসডাঙ্গায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী পালন


দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা মিশন পল্লীতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় পুষ্পমাল্য অর্পণ, বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আলোচনা সভা, নজরুল সংগীত ও নাট্য পরিবেশনা। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় কবির স্মৃতিবিজড়িত আটচালা ঘরের পাশে স্থাপিত নজরুল স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজানুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিথি মিত্র, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারমিন সুলতানা, কার্পাসডাঙ্গা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল করিম, দামুড়হুদা সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তনু ও মনির হোসেন এবং দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির।


কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক শামসুল আলম ও সদস্যসচিব জাহাঙ্গীর আলম টুটুলের নেতৃত্বে কার্পাসডাঙ্গা বাজার থেকে শুরু হয়ে র‌্যালিটি কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে শেষ হয়। এরপর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘নজরুলের আটচালা ঘর পর্যন্ত সড়কটি পাকাকরণ এবং স্মৃতিস্তম্ভ ঘিরে উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া কবির সাহিত্যকর্ম সংরক্ষণের জন্য একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্রোহ ও তারুণ্যের কবি নজরুল বাংলা সাহিত্যে ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি শোষণ, বঞ্চনা, দুঃখ ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। তার রচনায় আজও আমরা প্রেরণা পাই।’ আলোচনা সভা শেষে পরিবেশিত হয় নজরুল সংগীত ও নাটক। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবিব সেলিম।


নজরুল স্মৃতির শতবর্ষে গবেষণা ইনস্টিটিউটের দাবি:


১৯২৬ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে কাজী নজরুল ইসলাম বিপ্লবী হেমন্ত কুমার ও মহিম সরকারের আমন্ত্রণে সপরিবারে কলকাতা থেকে কার্পাসডাঙ্গায় আসেন। তিনি দুই মাস অবস্থান করেন হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের বাড়িতে। সেই সময় তিনি ‘লিচুচোর’, ‘কলসী গেল ডুবে’, ‘পদ্ম গোখরো’, ‘ব্যথার দান’সহ অনেক কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯৯০ সাল থেকে স্থানীয়দের উদ্যোগে জন্মজয়ন্তী উদ্যাপিত হয়ে আসছে। ২০১৬ সালে এখানে একটি নজরুল স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। ২০২১ সালে আটচালা ঘর ও ভৈরব নদীর ঘাট সংস্কার করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার।


অথচ, কবির স্মৃতিধন্য আটচালা ঘরটি এখনো ব্যক্তিমালিকানাধীন। বাড়ির উত্তরসূরি প্রকৃতি বিশ্বাস ওরফে বকুল বিশ্বাস বলেন, ‘সাবেক জেলা প্রশাসক সাইমা ইউনুস মন্ত্রণালয়ে অধিগ্রহণের সুপারিশ পাঠিয়েছিলেন। পরে নানা আলোচনা হলেও বাস্তবায়ন হয়নি।’ স্থানীয় নজরুলপ্রেমীরা অভিযোগ করেন, কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ মোড়ে নির্মিত নজরুল চত্বরে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। সদস্যসচিব জাহাঙ্গীর আলম টুটুল বলেন, ‘তদন্ত করে প্রকৃত দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।’


সভায় কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের সভাপতি শামসুল আলম বলেন, ‘কার্পাসডাঙ্গায় নজরুল গবেষণা ইনস্টিটিউট, পাঠাগার, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি।’ এদিকে, এ বছরই পূর্ণ হতে চলেছে কবির আগমনের শতবর্ষ। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের আহ্বানে স্থানীয় কবিপ্রেমীদের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা হয়।



এদিকে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলমডাঙ্গায় অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী। আলাউদ্দিন আহমেদ পাঠাগার ও আলমডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের যৌথ আয়োজনে সাহিত্যপ্রেমী ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষদের অংশগ্রহণে জমে ওঠে দিনব্যাপী এ আয়োজন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি গোলাম রহমান চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন আলমডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ওমর আলী মাস্টার। প্রধান আলোচকের বক্তব্যে কথাসাহিত্যিক পিন্টু রহমান নজরুলের জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন।


বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি খন্দকার শাহ আলম মন্টু, কলাকেন্দ্রের সভাপতি ইকবাল হোসেন, চিকিৎসক ও সমাজকর্মী ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন, কবি আতিকুর ফরায়েজী, কবি সিদ্দিকুর রহমান ও পলাশ আহমেদ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অহর আলী, শিবু ধর, রাকিব উদ্দিন রনি, কবি হারুন অর রশীদ আকাশ, গবেষক খাইরুল ইসলাম ও সাহিত্যিক জুলকার নাইন জাকারিয়া হায়দার শুভ্র।


বক্তারা নজরুলের বিদ্রোহী চেতনা, মানবতা ও সাম্যবাদের আদর্শ নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার গুরুত্ব তুলে ধরেন। পরে স্থানীয় কবি-সাহিত্যিক ও শিল্পীদের পরিবেশনায় কবিতা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারী কবি-শিল্পীদের মাঝে সম্মাননা ও পুরস্কার তুলে দেন আয়োজকরা।



কমেন্ট বক্স
notebook

পরীক্ষায় অনুপস্থিতদেরও উত্তীর্ণের অভিযোগ, সমালোচনার ঝড়