মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়ন বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট কামরুল হাসানের গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। এতে তার মাইক্রোবাস, কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয় এবং অন্তত ৬ নেতা-কর্মী আহত হন।
জানা যায়, গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে আমঝুপি গ্রামের গন্ধরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা বিএনপি। সম্মেলনে অংশ নিতে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট কামরুল হাসানের নেতৃত্বে একটি গাড়িবহর মেহেরপুর শহর থেকে রওনা দিলে আমঝুপি বাজার এলাকায় গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়। সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের অনুসারীরা তাদের পথরোধ করে। পরে গাড়িবহরটি বিকল্প পথ ধরে সামিউল টাওয়ারের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হামলার শিকার হয়।
বিএনপির দাবি, হামলায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আজমুল হক মিণ্টু, মিজান মেনন, চঞ্চল, মুকুল, শাকিল, শহিদুল, সানোয়ারসহ অন্তত ৬ জন আহত হন। গুরুতর আহত মুকুল ও তৌহিদুলকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাইফুল ইসলাম পক্ষের তিন নেতা-কর্মীকে আটক করলে, তাদের মুক্তির দাবিতে আমঝুপি বাজারে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়ক অবরোধ করা হয়। অবরোধে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পুলিশ তিনজনকে ছেড়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
ঘটনার বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাড. কামরুল হাসান বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই সাইফুল ইসলামের নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা সম্মেলন বানচাল করার অপচেষ্টা করেছে। মেহেরপুর জেলা বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিকে মানতে না পেরেই তারা সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালিয়েছে।’
অন্যদিকে, পাল্টা অভিযোগ করে সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বেআইনিভাবে আয়োজিত সম্মেলনে বাধা দিয়েছি। কিন্তু আসলে অ্যাডভোকেট কামরুল হাসানের নেতা-কর্মীরাই আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।’
মেহেরপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বেজবাহ উদ্দীন বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ লিখিত অভিযোগ দেয়নি এবং কাউকে আটক করা হয়নি।’
এদিকে, সংঘর্ষ ও উত্তেজনার মধ্যেও জুমার নামাজ শেষে বেলা ২টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয় এবং বিকেল সাড়ে ৪টায় শেষ হয়। সম্মেলনের মঞ্চে উঠে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাবেদ মাসুদ মিল্টন ঘোষণা দেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীরা আহত হয়েছেন, তবু কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সুশৃঙ্খলভাবে ভোট গ্রহণ হবে এবং আমরা সম্মেলন শেষ করেই বাড়ি ফিরব ইনশাআল্লাহ।’
ভোট গ্রহণ শেষে গণনা করে দেখা যায়, চেয়ার প্রতীকে জাহির হোসেন ১৪০ ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীকের হাসিবুর জামান পেয়েছেন ৮২ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় হাফিজুর রহমান হাফিজ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।