শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

আবার খুলছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

বাংলাদেশ থেকে নেয়া হবে কয়েক লাখ কর্মী, স্বচ্ছ নিয়োগে জোর
  • আপলোড তারিখঃ ১৬-০৫-২০২৫ ইং
আবার খুলছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

অবশেষে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে। আগামী বছরগুলোতে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে বেশি সংখ্যক কর্মী নেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ২১ মে ঢাকায় দুদেশের কার্যনির্বাহী সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার পুত্রাজায়ায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে মালয়েশিয়ার সরকার এ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে জানায়। বৈঠকে দুটি মূল বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশী কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত এবং একটি স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার অধীনে নতুন কর্মী পাঠানোর সুশৃঙ্খল রূপরেখা তৈরি করা। কর্মীদের বেতন, নিরাপত্তা এবং সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার আশ্বাসও দিয়েছে দেশটি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন।

দুদেশের মধ্যে সমঝোতার অংশ হিসেবে, মালয়েশিয়া আগামী কয়েক বছরে কয়েক লাখ কর্মী নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২০ হাজারের বেশি কর্মী কোনো খরচ ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, সরকারি-বেসরকারি কোনো খরচ ছাড়াই ২০ হাজারের বেশি কর্মীকে নিয়োগ দেবে দেশটি। মালয়েশিয়া কর্মী নেবে ব্যাচ হিসেবে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে ৭ হাজার ৯২৬ জন নেওয়ার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রথম ব্যাচ নেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই দ্বিতীয় ব্যাচ, তারপর তৃতীয় ব্যাচ। এভাবে পর্যায়ক্রমে কয়েক লাখ শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।

উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, গত বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম বাংলাদেশ সফরে এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, শেষ মুহূর্তে যেসব কর্মী গত বছর মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারেনি, তাদের প্রবেশের সুযোগ দেবেন। এ রকম কর্মী ছিলেন ১৭ হাজারের মতো। এর ভিত্তিতে আমরা অনেক আলোচনা করেছি। তারা বলেছেন, ব্যাচ হিসেবে নেবেন। এর আগে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সিনিয়র সচিব নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া এবং উপসচিব মো. সারওয়ার আলমকে নিয়ে গত বুধবার মালয়েশিয়া সফরে যান। শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার এবং স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে প্রতিনিধি দলটি মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে  বৈঠকে মিলিত হয়।

বৈঠকের অগ্রগতির বিষয়টি নিশ্চিত করে সারওয়ার আলম বলেন, ‘মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে ইতিবাচক ফল এসেছে। আগামী ২১ মে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটির  বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’ মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে থাকা কর্মীদের বৈধতা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে আশাবাদী এবং মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে  বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।’ কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় সাধারণ কর্মীদের মজুরি মধ্যপ্রাচ্যের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা গেলে এই শ্রমবাজার থেকে রেমিটেন্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে।’

প্রবাসী কল্যাণ ও  বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আমরা বিভিন্ন সূত্রে জেনেছি, আগামী কয়েক মাসে মালয়েশিয়া এক থেকে দেড় লাখ বিদেশী শ্রমিক নিতে পারে। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী আমাদের আশস্ত করেছেন, কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি লোক নেবে মালয়েশিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে সে দেশের মানবসম্পদমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়  বৈঠক শেষে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা অনুরোধ করেছিলাম বাংলাদেশে যারা রিক্রুটিং এজেন্ট আছে, তারা সবাই যেন লোক পাঠানোর সুযোগ পায়। এটা আমরা অনেক ভালোভাবে বুঝিয়ে বলেছি। তারা বলেছেন, এটি ভালোভাবে বিবেচনা করে দেখবেন। আমাদের অচিরেই তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। আমাদের একটা বড় অগ্রগতি যেটা হয়েছে, আমি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলাম, আমাদের শ্রমিকরা মাল্টিপল ভিসা পায় না, সিঙ্গেল এন্ট্রি পায়। অন্য দেশের শ্রমিকরা পায় মাল্টিপল এন্ট্রি। তিনি আমাদের সরাসরি কিছু বলেননি, কিন্তু তার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়ায় যেসব কর্মী অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন, তাদের যেন নিয়মিত করা যায়, সেই অনুরোধ করেছিলাম। তারা বলেছেন, মাঝে মাঝে এটা করা হয়। গত বছর করা হয়েছিল। যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তাদের ক্ষেত্রে হয়ত এটা করা সম্ভব হবে না। আমি বলেছি, অনেক সময় মালিকের গাফিলতির কারণে, ত্রুটির কারণে এটা হয়। সেগুলো আলাদাভাবে বিবেচনা করার অনুরোধ করেছি। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এটা বিবেচনা করে দেখবেন। আসিফ নজরল বলেন, আমরা আরও কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। যেমন- নিরাপত্তাকর্মী, কেয়ারগিভার বা নার্স বাংলাদেশ থেকে নেওয়ার বিষয়ে। দক্ষ কর্মী নেওয়ার বিষয়ে তারা আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। ব্যক্তিগতভাবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন, তার কথামতো আমরা কাজ করছি।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে বন্ধ হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার, আট বছর পর তা চালু হয়েছিল ২০১৬ সালে। এর পর দুর্নীতির অভিযোগে ফের ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর নতুন সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে সেই বাজার খুলতে সময় লেগেছিল তিন বছর। ২০২২ সালের আগস্টে দেশটিতে আবারও বাংলাদেশী কর্মী যাওয়া শুরু হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে রামরুর চেয়ারপার্সন অধ্যাপক তাসনিম আলম বলেন, ‘সিন্ডিকেটের কারণে প্রবাসীরা তাদের অধিকার পাচ্ছে না। এখন যেহেতু অধিকার পাওয়ার সুযোগ এসেছে সে সুযোগকে বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কাজে লাগাতে হবে।’ তিনি বলেন,  যেখানে একজন কর্মী ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় যেতে পারছে, সেখানে সিন্ডিকেট করে কর্মীর কাছ থেক আদায় করছে ৫-৬ লাখ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি। তাতে গিয়ে প্রবাসীদের জীবন আরও দুর্বিসহ হয়ে পড়ছে।

বায়রার সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ফখরুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার চালুর ব্যাপারে আমরা অনেকদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। সেজন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার মিটিং, বন্ধ শ্রমবাজার চালুর দাবিতে মানববন্ধনও করেছি। তিনি বলেন, চালু হয়েছে সেটা অবশ্যই বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য সুখবর। কিন্তু পাশাপাশি অসাধু সিন্ডিকেটের কবলে সাধারণ শ্রমিকরা যদি সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে লাভ কি? তিনি আরও বলেন, অসাধু মানব ব্যবসায়ীরা কোনোভাবেই যেন সিন্ডিকেট না করতে পারে, সে বিষয়ে অবশ্যই সরকারকে সর্বোচ্চ নজর রাখতে হবে।

অভিবাসী শ্রমসংক্রান্ত অভিযোগ প্রত্যাহারে মালয়েশিয়ার অনুরোধ:

এদিকে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে শ্রম অভিবাসন ইস্যুতে ‘অযৌক্তিক অভিযোগ’ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের মানবপাচার প্রতিবেদনে নিজেদের ভাবমূর্তি উন্নত করতে এই আহ্বান করেছে কুয়ালালামপুর। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ব্লুমবার্গ এ খবর জানিয়েছে। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মহাসচিব আজমান মোহাম্মদ ইউসুফ বাংলাদেশে পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, মানবপাচার ও অর্থপাচার সংক্রান্ত অভিযোগ মালয়েশিয়ার ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অথচ অভিযোগগুলোর বেশিরভাগই ভিত্তিহীন। ওই চিঠির একটি কপি যাচাই করেছে ব্লুমবার্গ। ২৩ এপ্রিল লেখা ওই চিঠি বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও  বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নেয়ামত উল্লাহ ভূইয়াকে পাঠানো হয়। পুরো বিষয়টি নিয়ে অবগত এক বাংলাদেশী কর্মকর্তা চিঠিটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বহু বাংলাদেশী ও অন্যান্য অভিবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। এসব অনিয়মের কারণে মালয়েশিয়ার মানবপাচারবিরোধী অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।




কমেন্ট বক্স
notebook

কোরআনে বিজ্ঞান চর্চার তাগিদ