হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের শাসনামলে জনগণের বিরুদ্ধে হেন কোনো অপরাধ নেই যা সংঘটিত হয়নি। বিরোধী দলকে রাজনৈতিক পরিসর থেকে উৎখাত করে পুরো দেশে বিভীষিকাময় পরিবেশ তৈরি করা হয়। গুম-খুন, আয়নাঘর বানিয়ে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। ব্যাংক-রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুটে মুদ্রাপাচারের মাধ্যমে দেশকে দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। ক্ষমতার অপব্যবহার প্রান্তসীমায় পৌঁছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করে দুঃশাসন কায়েম করা হয়। জুলাই বিপ্লব-উত্তর আওয়ামী লীগের সংঘটিত অপরাধের বিরুদ্ধে দ্রুততার সাথে ব্যবস্থা নিতে না পারায় চারদিকে হতাশার বিস্তার ঘটে। অন্তর্র্বতী সরকারের কার্যক্রমে কিছু ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শনের লক্ষণ দেখা যায়। অনিয়ম-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদকে দেশ ছাড়তে সহযোগিতা করা হয়েছে। এ ঘটনা জনমানুষের হতাশা বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকারের দুর্বলতার কারণে ফ্যাসিবাদী শক্তি আবার জাতির ঘাড়ে চেপে বসার সুযোগ নিতে পারে। সেই শঙ্কা থেকে জুলাই বিপ্লবের পক্ষগুলো আবার রাজপথে নেমে আসে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। অন্তর্র্বতী সরকার তাদের দাবি আমলে নিয়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ায় মানুষ আবার আশাবাদী হয়েছে। অন্তর্র্বতী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে। সাইবার স্পেসেও কোনো কার্যক্রম তারা চালাতে পারবে না। ইতোমধ্যে তাদের গুপ্ত কর্মকাণ্ড দেশকে গণতান্ত্রিক-ব্যবস্থায় উত্তরণে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছিল। সন্ত্রাসী তৎপরতায় দেশের চলমান বিচার ও সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় আওয়ামী লীগ। দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীর নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদি-সাক্ষীদের সুরক্ষায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিষ্ক্রিয় করতে সরকারের এই সিদ্ধান্ত যথাযথ বলে আমরা মনে করি। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। এতে এই আদালত কোনো রাজনৈতিক দল, এর অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দেয়ার এখতিয়ার পাবেন। উপদেষ্টা পরিষদ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে বিএনপি-জামায়াতসহ জুলাই আন্দোলনের অংশীদারদের মতামত নিয়েছে। সবাই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে একমত। এতে করে জুলাই আন্দোলনের পক্ষগুলোর মধ্যে ফের একতা প্রতিষ্ঠিত হলো। বিভিন্ন কারণে পক্ষগুলো যখন একে-অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল; তখন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের উদ্যোগ সবাইকে এক জায়গায় নিয়ে এলো। উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত জানানোর পর সারা দেশের মানুষ আনন্দ করেছে। পুরো জাতি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান ব্যক্ত করেছে। ফ্যাসিবাদী আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের বিচারের ওপর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। তাদের ভয়াবহ সব অপকর্মের ন্যায়বিচার না করা গেলে দেশ শান্তির পথে ফিরবে না; বরং ঘাপটি মেরে থাকা দুর্বৃত্তরা আবার পুনর্বাসিত হবে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে দল-মত নির্বিশেষ যে ঐক্য রচিত হয়েছে; অন্তর্র্বতী সরকার তাকে বিচক্ষণতার সাথে কাজে লাগিয়ে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেবে, এটিই জাতির প্রত্যাশা।