সীমান্তে এক ধরনের অস্বস্তিকর অবস্থা বজায় রেখেছে ভারত। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেয়ার পর থেকে তা বাড়তি পর্যায়ে পৌঁছেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন জায়গায় আটক করছে শত শত নাগরিক। তাদের বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী বলা হচ্ছে। এদিকে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধাবস্থার মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে পুশইন করা হচ্ছে। জোর করে সীমান্ত দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে মানুষদের। বলা নেই কওয়া নেই তাদের এমন অপচেষ্টা সীমান্তে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। কিছু মানুষ ধরে এনে জোর করে অন্য দেশে পাঠানো অমানবিক হলেও ভারতকে বাংলাদেশ সীমান্তে এমনটি করতে প্রায়ই দেখা যায়।
কয়েক দিন কয়েক দফায় মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি ও কুড়িগ্রামের সীমান্ত দিয়ে কয়েক শ’ মানুষকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে। গত বুধবার মৌলভীবাজার বড়লেখা সীমান্তের উত্তর শাহবাজপুর পাল্লাথল বিজিবি ক্যাম্পের আওতাধীন সীমান্ত দিয়ে ৩২ নারী পুরুষ ও শিশুকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। বৃহস্পতিবার সকালে বোবারথল সীমান্ত দিয়ে আরো ২৩ জনকে সীমান্তের এপারে পাঠায়। বুধবার সকালে কমলগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ১৫ জনকে পুশইন করে। এদের মধ্যে আগের দুই দফায় পাঠানো ৫৫ জন বিজিবির অধীনে আছে। সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, গত কয়েক দিনে এ সীমান্ত দিয়ে শতাধিক লোক বাংলাদেশে ঢুকেছে। বুধবার খাগড়াছড়ি ও কুড়িগ্রামের সীমান্ত দিয়ে আরো ১১০ জনকে পুশইন করা হয়। এদিকে কিছু দিন ধরে গুজরাটে চালানো হয় বিশেষ অভিযান। সেখানে বাংলাদেশী সন্দেহে ছয় হাজার মানুষকে আটক করা হয়। মূলত মুসলমানদের নিশানা করে ধরপাকড় চালানো হচ্ছে। বেপরোয়া এ ধরপাকড়ে বিপুল মানুষ সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে তাদের মৌলিক মানবাধিকারের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের আটক করেও বলা হচ্ছে তারা বাংলাদেশী। মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে পুশইন করাদের বিষয়ে জানা যাচ্ছে, তারা আসামে বসবাস করছিলেন। কিছু দিন আগে তাদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তিন শতাধিক লোককে ত্রিপুরা বিএসএফের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তাদের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ভাগ করে পুশইন করা হচ্ছে।
এর আগে আমরা দেখেছি রোহিঙ্গাদের ধরে বাংলাদেশে পুশইন করেছে ভারত। দেশটি এসব ক্ষেত্রে যেমন মানবাধিকারের ধার ধারে না, তেমনি কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা করে না। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, ‘আমাদের দেশের নাগরিক যদি কেউ হয়ে থাকেন, আর সেটি যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের আমরা গ্রহণ করব। তবে সেটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় হতে হবে। এভাবে পুশইন করাটা সঠিক প্রক্রিয়া নয়।’ তার এই বক্তব্য যথার্থ। বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত নিজের কর্মকাণ্ডে প্রজ্ঞার পরিচয় দেয় না। প্রতিবেশীদের সাথে দেশটির আচরণ সব সময় অসহিষ্ণু ও প্রতিক্রিয়াশীল। সীমান্তে ভারত অব্যাহত উসকানিমূলক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য দরকার। পুশইন নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া আমরা এখনো দেখিনি। আমরা শক্ত অবস্থান না নিলে ভারতের বিবেচনাহীন অন্যায় আচরণ আরো বাড়াবে। এই সুযোগ ভারতকে দেয়া ঠিক হবে না। তাই সরকারের পক্ষ থেকে এর কড়া প্রতিবাদ জানানো উচিত।