চুয়াডাঙ্গায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে চলমান তাপপ্রবাহ। টানা দুই দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে এই জেলাতেই। গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টা ও ৬টায় এই তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। পরপর দুই দিন এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সারাদেশের মধ্যেও সর্বোচ্চ। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলমান লঘুচাপ ও বৃষ্টিহীন আবহাওয়ার কারণে এই তাপপ্রবাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে আগামী ১৪ মে থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, জেলার তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হু হু করে কমছে বাতাসের আর্দ্রতাও। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বাতাসে আর্দ্রতা ছিল মাত্র ৩৩ শতাংশ, যা বেলা ৩টায় নেমে আসে ২৪ শতাংশে। এতে গরমের তীব্রতা অসহনীয় পর্যায়ে বেড়ে যায়। তীব্র গরমের কারণে সকালের পর থেকেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হতে শুরু করে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হয়নি। যারা বের হচ্ছেন, তাদের অনেককেই রোদ থেকে বাঁচতে মাথায় গামছা, ছাতা কিংবা পাতলা কাপড় ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা শহরের অটোরিকশাচালক সাজু আহম্মেদ বলেন, ‘এই গরমে রাস্তায় টিকে থাকা মুশকিল। যাত্রীও কম, আবার রোদে গাড়ি চালানো যায় না। মাঝে মাঝে মাথা ঘুরে যায়। সকাল থেকে রোদ এমন তীব্র হচ্ছে যে বারবার তৃষ্ণা পাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গায় প্রতিবছরই প্রচণ্ড গরম পড়ে, কিন্তু এবার গরম একটু বেশিই লাগছে, যেন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’
চুয়াডাঙ্গা কলেজের শিক্ষার্থী আফরিন পারুল বলেন, ‘কোচিংয়ে পরীক্ষা ছিল বলে আসতে হয়েছে। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে হেঁটে আসতে খুব কষ্ট হয়েছে। ছাতা থাকলেও রোদের তীব্রতা সহ্য হয় না। শরীর ঝাঁঝালো গরমে ঘেমে একাকার হয়ে যায়। কলেজে পৌঁছেও মাথা ধরে থাকে অনেকক্ষণ। তাপমাত্রা এত বেশি যে কাচের মতো পুড়তে থাকে রাস্তা। চুয়াডাঙ্গা তো এমনিতেই দেশের সবচেয়ে গরম জায়গা। আগেও গরম দেখেছি, কিন্তু এবার চারদিকে শুধু উত্তাপ আর ধোঁয়া মনে হচ্ছে। অনেক বন্ধুই গরমের কারণে ক্লাস মিস করছে, কেউ কেউ অসুস্থও হয়েছে।’
অন্যদিকে, গরমজনিত অসুস্থতা হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন, মাথা ঘোরাসহ বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচতে বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী নারী এবং রাস্তায় কাজ করা মানুষদের বিশেষ শতর্কতা ও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘বর্তমানে যেভাবে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে পৌঁছেছে, এতে গরমজনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক। বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী নারী এবং রাস্তায় কাজ করা মানুষ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। গরমে সবারই দিনে অন্তত ৩-৪ লিটার পানি পান করা উচিত। হালকা খাবার খাওয়া, গরমে সরাসরি রোদে না যাওয়া এবং ছাতা বা টুপি ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি। কারও মাথা ব্যথা, বমি ভাব বা দুর্বলতা অনুভব হলে দ্রুত ছায়াযুক্ত স্থানে নিয়ে বিশ্রাম দিতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ঠাণ্ডা পানি বা খাবার স্যালাইন রীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।’
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী ১৩ মে পর্যন্ত এই অবস্থা থাকতে পারে। এরপর ১৪ মে থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করতে পারে।’