- * আলমডাঙ্গায় প্রবাসী নারীর বহুতল বাড়ি নির্মাণেও অনিয়ম
- * প্রতিবেদনে ভুয়া তথ্য দিয়ে সরকারি নিয়ম উপেক্ষা
- * আক্কাস লেক ভিউ পার্কের রাস্তা মাপেও ভুল তথ্য দেখানো হয়েছে
- * চুয়াডাঙ্গা পৌরসভাতেও মানা হচ্ছে না নিয়ম-কানুন
মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফিন্সের উপ-সহকারী পরিচালক রফিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে। আবার ফায়ার সার্ভিসের অবহেলায় অনেকেই বাড়ি নির্মাণে ফায়ার সার্ভিসের অনুমতিও নিচ্ছেন না। আর্থিক লেনদেন ও সঠিক তদারকির অভাবে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে অনিরাপদ বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক বলছেন, চুয়াডাঙ্গায় এ ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠলে নিশ্চয় সেটি খতিয়ে দেখা হবে, নেয়া হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড আইন অনুযায়ী পরিবেশ ছাড়পত্র, ফায়ার ছাড়পত্র ও বিদ্যুৎ ছাড়পত্রসহ ১০টি ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে হয় ভবন মালিকদের। এক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশের অনুমোদনও নিতে হয়। ১০টি ছাড়পত্রসহ পৌরসভা কার্যালয়ে বহুতল ভবনের জন্য নকশাসহ আবেদন জমা দিতে হয়। তবে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন ছাড়া চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবন তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে আলমডাঙ্গা থানা পাড়ায় মর্জিনা বেগম নামে এক নারী ৭ তলা আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের ছাড়পত্র চেয়ে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসে আবেদন করেন।
এরপর চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক রফিকুজ্জামানকে প্রধান করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট পরিদর্শন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে অন্য দুজন সদস্য হলেন- আলমডাঙ্গা ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার আল-মামুন (সদস্যসচিব), সংশিষ্ট ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ খালিদ (সদস্য)। ফায়ার সার্ভিসের ৩ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি চলতি বছরের মার্চ মাসের ৪ তারিখে সরেজমিন কমিটি কর্তৃক পরিদর্শন করেন। সরেজমিন পরিদর্শন শেষে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক রফিকুজ্জামান অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বরাবর বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের ছাড়পত্র চেয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদন প্রস্তাবিত ভবনের সম্মুখে ফায়ার সার্ভিসের নীতিমালা অনুযায়ী ২০ ফুট রাস্তা দেখানো হয়েছে। যার মধ্যে কার্পেটিং ১২ ফুট, রাস্তার উভয় পাশে ৪ ফুট করে ৮ ফুট ফাঁকা রাস্তা দেখানো হয়েছে।
অথচ সেখানে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনটির সামনে জায়গা রয়েছে মাত্র ১৬ ফুট। এর মধ্যে ১২ ফুট কার্পেটিং ও উভয় পাশে ২ ফুট করে ৪ ফুট ড্রেন আছে। প্রশ্ন উঠেছে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক রফিকুজ্জামান কীভাবে ও কোন শক্তি বলে এ রকম ভুয়া প্রতিবেদন দাখিল করে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের ছাড়পত্র চেয়েছেন।
স্থানীয়দের অনেকেই জানিয়েছেন, নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে অর্থের বিনিময়ে আলমডাঙ্গার বহুতল ভবনের এ ছাড়পত্র অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। যদি ফায়ার সার্ভিসের নীতিমালা মানা হয়, তাহলে কখনই এ বহুতল ভবন নির্মাণ ছাড়পত্র পাবে না। টাকা দিলে অনেক কিছুই সম্ভব বলে মন্তব্য করেন অনেকে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দশমী বদরগঞ্জ এলাকার আক্কাস লেক ভিউ পার্ক অ্যান্ড রিসোর্স (প্রা.) লিমিটেডের সামনে মেইন রোড থেকে স্থাপনা পর্যন্ত ২০ ফুট রাস্তা থাকতে হবে, অথচ সেখানে রাস্তা আছে মাত্র ১৪ ফুট। এখানেও অর্থের বিনিময়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর তাদের ছাড়পত্র দেয়।
আলমডাঙ্গায় অনিয়মে তৈরিকৃত ওই বহুতল ভবনের মালিক মর্জিনা বেগমের নম্বরে কল দিলে জানা যায়, তিনি বিদেশে থাকেন। তার ভাই পিণ্টু বলেন, ‘যতটুকু রাস্তা রাখার কথা ততটুকু রাখা হয়েছে। হয়ত দু-এক ফিট কম আছে। কোনো টাকা-পয়সার লেনদেন হয়নি। আক্কাস লেক ভিউ পার্কের মালিক আক্কাস আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক রফিকুজ্জামান বলেন, ৩ সদস্য কমিটি গঠন করে নীতিমালা অনুযায়ী ছাড়পত্র প্রতিবেদন অধিদপ্তর বরাবর পেশ করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের নীতিমালায় ২০ ফুট রাস্তা থাকার নিয়ম থাকলেও বাস্তবে সেখানে সবমিলিয়ে ১৬ ফুট রাস্তা আছে, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুযায়ী ২০ ফুটের স্থলে যদি ১৯ ফুটও থাকে, তবুও ওই ভবনের অনুমতি দেয়া সম্ভব না। যদি চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস নিয়ম বর্হিভূতভাবে ভবনের জায়গা বেশি দেখিয়ে ছাড়পত্রের আবেদন করে, তাহলে অবশ্যই সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে