দামুড়হুদার তালসারী ডিসি ইকো পার্কের জমি লিজ দিয়ে শাক-সবজি ও ঘাসসহ সাথী ফসল চাষ করানোর ফলে আমের ক্ষয়-ক্ষতির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় আম ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে শুধু আমবাগান নয়, পার্ক সংলগ্ন বিল নিয়েও রয়েছে রাজস্ব হারানোর অভিযোগ। জেলা আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মহলদার বলেন, পার্কের ১৬০ বিঘা জমিতে থাকা ৯৭২টি আমগাছের মধ্যে অনেক গাছ মারা গেছে। বাকি গাছগুলোতে আমরা পরিচর্যা ও কীটনাশক প্রয়োগ করে ভালো ফলনের চেষ্টা করছি। তবে কিছু ব্যক্তি নেপিয়ার ঘাস ও অন্যান্য সাথী ফসল চাষ করে আম উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় বুঝেছি আমবাগানে সাথী ফসল চাষে ছত্রাক ও জীবাণু সংক্রমণ ঘটে। ফলে আমে দাগ, ক্ষত ও পচন দেখা দেয় এবং আগেই নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য তালসারীর ঐতিহ্য রক্ষার্থে সাথী ফসল চাষ বন্ধ করা উচিত।’ গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত ২০২৫ সালের আম সংগ্রহ দিনপঞ্জি চূড়ান্তকরণ সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম আম ব্যবসায়ীদের অভিযোগ শুনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন।
অন্য এক আমচাষি জুয়েল বলেন, সাথী ফসল চাষে বাগানে পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বাড়ছে, যা আমের ক্ষতি করছে। খুলনা বিভাগীয় আম ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সার ও কীটনাশক ব্যবহার করলেও তেমন ফল পাচ্ছি না। ঘাস চাষের ফলে গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে, পাতাও মরে যাচ্ছে।’ আমচাষী আসলাম উদ্দিন অভিযোগ করেন, ‘ডিসি ইকো পার্কের সুপারভাইজার বাহারুল ইসলাম কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে জমি নামমাত্র মূল্যে লিজ দিয়ে সাথী ফসল চাষের সুযোগ করে দিয়েছেন। এ লিজের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।’ তিনি আরও জানান, পার্ক সংলগ্ন বটতলা বিল ২০২২ সাল পর্যন্ত স্থানীয় মৎস্যজীবী সমিতির মাধ্যমে ইজারা দিয়ে বছরে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হতো। তবে ২০২২ সাল থেকে এই বিল ইজারা দেওয়া বন্ধ থাকায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
অন্যদিকে আমচাষী রবিউল বলেন, ‘সাথী ফসলের ক্ষতির কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছি।’ ঘাস চাষী মিজানুর রহমানের ছেলে রেজাউল বলেন, ‘আমরা লিজ নিয়ে ঘাস চাষ করছি, তবে কত টাকা দিতে হয়, সে বিষয়ে বাবা জানেন।’ পার্কের নৈশপ্রহরী আবু বকর জানান, কিছু জমি লিজ দেওয়া হয়েছে, কিছু জমি দেওয়া হয়নি। লিজের টাকা ইউএনও অফিসে জমা হয়।
এদিকে, এলাকাবাসী ও আমচাষীদের অভিযোগে অভিযুক্ত ডিসি ইকো পার্কের সুপারভাইজার বাহারুল ইসলাম বলেন, ‘আগেও যেভাবে লিজ দেওয়া হতো, এখনও সেভাবেই হচ্ছে। আগে জমি লিজ না দিলে বন্যপ্রাণী ও গৃহপালিত পশুর আক্রমণে ক্ষতি হতো। তাই জমি লিজ দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের দায় লিজগ্রহীতার ওপর দেওয়া হয়। জমির ধরণ বুঝে সর্বোচ্চ বিঘা প্রতি ৬ হাজার টাকায় লিজ দেওয়া হয়।’
বটতলা বিল ইজারা প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ইজারা বন্ধ রাখার সুপারিশ করেন পূর্বতন ডিসি। আমিও ইজারার প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত তা থেকে সরে এসেছি। ইতোমধ্যে পার্কের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে।