মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

লাখো মানুষের অভ্যর্থনায় খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন

১০ কিলোমিটার জুড়ে জনস্রোত, অনেকটা সুস্থ, হেঁটে প্রবেশ করলেন ফিরোজায়
  • আপলোড তারিখঃ ০৭-০৫-২০২৫ ইং
লাখো মানুষের অভ্যর্থনায় খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন ছবির ক্যাপশন: খালেদা জিয়া

লাখো মানুষের প্রাণঢালা অভ্যর্থনা, আবেগাপ্লুত উচ্ছাস, মুহুর্মুহু স্লোগান ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়ে গতকাল মঙ্গলবার দেশে ফিরলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। চিকিৎসার জন্য চার মাস লন্ডনে ছেলের কাছে ছিলেন তিনি। তাকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসভবন পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে ছিল জনস্রোত। নেত্রীকে পরম ভালোবাসায় বরণ করে নিতে সারাদেশ থেকে আসেন দলের লাখো নেতা-কর্মী-সমর্থক। দুই পুত্রবধুকে নিয়ে জনজোয়ার পেরিয়ে বাসভবন ফিরোজায় পৌঁছাতে খালেদা জিয়ার দুই ঘণ্টার বেশি সময় লাগে।খালেদা জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’; ‘খালেদা জিয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাইসহ বিভিন্ন স্লোগান আর ফুল ছিটানোর মধ্যে পুরো পথে হাত উঁচিয়ে জনতাকে  শুভেচ্ছা জানান খালেদা জিয়া। তার চেখেমুখে ছিল প্রশান্তির ছায়া। বাসার কাছে এসে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গৃহে প্রবেশ করেন এই নেত্রী। দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী চার মাস আগে হুইল চেয়ারে লন্ডন গিয়েছিলেন। গাড়ি থেকে নেমে দুই পুত্রবধুর হাতে হাত রেখে হেঁটে বাসভবনে প্রবেশের দৃশ্য দেখে আবেগে অনেক নেতাকর্মীর চোখ ভিজে যায়।

ভারতে আশ্রয় নেয়া পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার প্রতিহিংসাপরায়ণতার শিকার হয়ে বছর বন্দী জীবনে উপযুক্ত চিকিৎসাহীনতা, হত্যা চক্রান্ত এবং মানসিক নিপীড়নের নির্মমতা পেরিয়ে বেগম জিয়ার শারিরীক মানসিক অবস্থার দৃশ্যমান উন্নতিতে নেতা-কর্মীদের উচ্ছ্বাসটাও ছিল অন্যরকম। ২০১৮ সালে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর গত বছরে কোনো জনসমাবেশে সশরীরে অংশ নেননি বিএনপি চেয়ারপারসন। এবার তার দেশে ফেরা ঘিরে কার্যত রাজধানীর উত্তরভাগ জনসমুদ্রের রূপ পরিগ্রহ করে। খালেদা জিয়া নিজেও আপ্লুত হন। লন্ডন থেকে দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসনকে বহনকারী কাতারের আমিরের দেয়া রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর সোয়া ১১টায় বিমানবন্দর থেকে রওনা হয়ে গুলশানের বাসায় পৌঁছান দুপুর ১টা ২৬ মিনিটে। তার আগে লন্ডনের স্থানীয় সময় সোমবার বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে খালেদা জিয়াকে নিয়ে হিথ্রো বিমানবন্দর ত্যাগ করে, পথে দোহায় যাত্রা বিরতি দিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকায় আসে।

চিকিৎসার জন্য গত জানুয়ারি লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন। টানা ১৭ দিন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ২৫ জানুয়ারি থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন। লন্ডনে ছেলের কাছে থাকার মানসিক প্রশান্তিতে খালেদা জিয়া আগের চেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন। ফেরার পথে তার সঙ্গী হয়েছেন দুই পুত্রবধূ-তারেক রহমানের স্ত্রী প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা.জুবাইদা রহমান আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান সিঁথিসহ ১৩ জন। গত সোমবার নিজে গাড়ী চালিয়ে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে নিয়ে এসে মাকে বিদায় জানান তারেক রহমান। খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান লন্ডন থেকে দেশে এলেন প্রায় ১৭ বছর পর। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্দেশ্যমূলক মামলা হয়রানির কারণে তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। তার এই ফেরা নিয়েও স্বজন এবং দলীয় নেতা-কর্মীরা উচ্ছ্বসিত। জুবাইদা রহমান ধানমন্ডিতে বাবার বাসামাহবুব ভবনেউঠেছেন।

এদিকে, বেগম জিয়া ঢাকায় এসে নামার পর বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে বিএনপি চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ। খালেদা জিয়া ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে রওনা দেন সাদা রঙের এসইউভিতে করে। সাধারণত তিনি গাড়ির সামনের আসনে বসেন না, কিন্তু গতকাল ব্যতিক্রম দেখা গেল। পেছনের আসনে ছিলেন তার দুই পুত্রবধূ। খালেদা জিয়ার জন্য গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কেফিরোজাআগেই প্রস্তুত ছিল। ফিরোজায় খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান তার মেজ বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, শামীমের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, জোবাইদা রহমানের বড় বোন শাহীনা জামান বিন্দু এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া বিএনপি নেত্রীর মেডিকেল বোর্ডের সদস্য এফ এম সিদ্দিক, বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর প্রমুখ সেখানে ছিলেন।

সড়কজুড়ে উৎসবের আমেজ:

প্রিয় নেত্রীকে বরণ করে নিতে গতকাল ফজরের পর থেকেই ঢাকাসহ সমগ্র দেশ থেকে আগত বিএনপি এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিমানবন্দর সড়কে জড়ো হতে শুরু করেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের খিলক্ষেত, কুর্মিটোলা, বনানী, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে অবস্থান নেন। পিকআপ কিংবা বাসে করে গান বাজাতে-বাজাতে নেতা-কর্মীরা আসেন। কারো হাতে খালেদা জিয়ার ছবি, কারো হাতে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, জাতীয় এবং দলীয় পতাকা হাতেও আসেন কেউ কেউ। অনেকে আসেন ব্যান্ডপার্টি নিয়ে। খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা উপলক্ষে নেতা-কর্মীদের ভিড় সামলাতে ঢাকা মহানগর পুলিশও বিমানবন্দর সড়কে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে অটোরিকশা মোটরসাইকেল চলাচলের সুযোগ রাখা হয়। ঢাকা সেনানিবাসের রাস্তায় হালকা যানবাহন চলাচলের সুযোগও থাকে। বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় পৌঁছানোর পথে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় বিপুল সংখ্যক সেনা সদস্য, পুলিশ, ্যাব, এপিবিএন আনসার সদস্য।

খালেদা জিয়া অনেকটা সুস্থ, মানসিকভাবেও শক্ত’:

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনে চিকিৎসা নেওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। উনি অনেকটা সুস্থ আছেন এবং মানসিকভাবেও উনি স্ট্যাবল (শক্ত) আছেন। আপনারা ওনার জন্য দোয়া করবেন। গতকাল দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের বাসভবনফিরোজা সামনে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া  শারীরিক মানসিকভাবে সুস্থ আছেন। যদিও দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টার ভ্রমণের কারণে তিনি কিছুটা অবসন্ন। আমরা তার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। বিএনপির চেয়ারপারসন সবাইকে শুভেচ্ছা, সালাম কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বলে জানান তার এই ব্যক্তিগত চিকিৎসক। খালেদা জিয়ার জন্য কাতারের পক্ষ থেকে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ায় দেশটির সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, জোবাইদা রহমান ফিরেছেন, তারেক রহমানও ফিরবেন। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়। কিছুদিন পর জোবাইদা রহমান আবারো লন্ডনে যাবেন এবং খুব দ্রুতই তারেক রহমানসহ দেশে ফিরে আসবেন।

ডা. জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, দেশে পৌঁছে কাতার সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, কাতার সরকার শুধু এয়ার অ্যাম্বুলেন্সই প্রদান করেনি বরং বিমানের খরচ, ওষুধ এবং চিকিৎসা সেবার সবকিছু নিশ্চিত করেছে। এই সহায়তার জন্য খালেদা জিয়া কাতার সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন। রাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দীর্ঘ যাত্রা শেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কিছুটা অসুস্থ। এখন তিনি বিশ্রামে আছেন। নেতা-কর্মীদের স্লোগান দিতে বারণ করেছেন। এদিকে দীর্ঘদিন পর দুই পুত্রবধূকে নিয়ে দেশে ফেরা উপলক্ষে খালেদা জিয়ার ঢাকার গুলশানের বাসভবনে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ ভোজের। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত বাবুর্চি এই বিশেষ ভোজের আয়োজন করেন। জিয়াউর রহমান সাহেবের সময় থেকেই তিনি রান্না করছেন।



কমেন্ট বক্স
notebook

দেশের কোনো নাগরিকেরই এখন দুটি এনআইডি কার্ড নেই: ডিজি