জীবননগর উপজেলার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারা (সিএইচসিপি) প্রায় ৯ মাস বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়ায় চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন তারা। ধার-কর্জ করেই চলেছে তাদের সংসার। ইতিমধ্যে চাকরি ছেড়ে পেশা বদল করেছেন দুজন। আর চাকরিতে কর্মরতরা ঈদের আগেই বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার উন্নয়ন খাত থেকে রাজস্ব খাতে চাকরি স্থানান্তরের জটিলতায় বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে তাদের।
সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপি হিসেব কর্মরত আছেন ১৮ জন। অন্য দুজন চাকরি ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মরত সিএইচসিপিরা অসহায় গরিবের চিকিৎসা, গর্ভবতী ও প্রসূতি, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা, ইপিআই, কিশোর-কিশোরী ও নববিবাহিতদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকেন। ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে আর্থিক সংকটে হতাশার মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সিএইচসিপিরা।
জানা গেছে, ২০১১ সালে এক প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিরা যোগদান করে। ২০১৬ সালের ১৪ জুনে মেয়াদ শেষ হয়। এরপর পতিত শেখ হাসিনা সরকার তাদের রাজস্বে অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাস দিয়ে তিন দফা প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করলেও বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেনি এক টাকাও। চাকরি রাজস্বের জন্য হাইকোর্ট রায় দিলেও অদৃশ্য কারণে সেটি বাস্তবায়ন করেনি পতিত সরকার। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে মন্ত্রণালয়ের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় গত বছরের জুলাই মাস থেকে সিএইচসিপিদের বেতন-ভাতা বকেয়া পড়তে থাকে।
১৩ বছর ধরে বেতন-ভাতা সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না হওয়ায় গত বছরের আগস্টে ঢাকায় আন্দোলন করেন তারা। ২০ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্যের শিকার সিএইচসিপিদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের আশ্বাস দেয়। কিন্তু এ আশ্বাসের পরও প্রকল্প বা রাজস্ব খাত কোনোটা থেকেই তাদের বেতন-ভাতা ছাড় করা হয়নি। এতে তারা প্রায় ৯ মাস ধরে কোনো বেতন পাননি, এমনকি প্রণোদনা ভাতাও পাননি বলে জানান তারা।
আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের কুলতলা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি সাইদুর রহমান বলেন, ‘ধার-দেনা করে পরিবার ও ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হচ্ছে। সমস্যা অধিদপ্তরের। তাহলে আমাদের বেতন-ভাতা দিতে সরকার কেন সমস্যা করছে, এটা আমার বোধগম্য নয়। ঈদের আগেই বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানাচ্ছি।’
উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের ধোপাখালী কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আজিজুর রহমান জানান, ‘সংশ্লিষ্ট বিভাগের গাফিলতির কারণে গত ৯ মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছি না। প্রতিবারই অজানা ভূত এসে ভর করে বেতন-ভাতায়। পরিবার পরিজন নিয়ে চরম হতাশার মধ্যে রয়েছি। এই চাকরির ওপর নির্ভর করে আমার সংসার চলে। এমনকি অফিসে যাতায়াত ও বাবা-মায়ের চিকিৎসা করানোর টাকা-পয়সাও নেই।’ দ্রুত বেতন-ভাতা না দিলে পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মকবুল হাসান বলেন, কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারেশন প্লানের আওতায় কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা তাদের বেতন-ভাতা পেতেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উন্নয়ন খাত থেকে রাজস্ব খাতে চাকরি স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন বলে শুনেছি। বেতন-ভাতা কবে নাগাদ ছাড় হবে এটা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলতে পারবেন। তবে তাদের বেতন-ভাতা রাজস্ব খাত থেকে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জেনেছি। আশা করা যায়, এই জটিলতার সমাধান দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হবে।