ঢাকাস্থ ঐতিহ্যবাহী সরকারি সাত কলেজ চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার মিরপুর রোডের ফ্যামিলি ওয়ার্ল্ড টাওয়ারে আয়োজিত এই মাহফিলে চুয়াডাঙ্গা জেলার শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও পেশাজীবীরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির উপ-কোষাধ্যক্ষ মাহমুদ হাসান খান বাবু। বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীসহ সকলের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘আমাদের প্রথম পরিচয় হওয়া উচিত, আমরা চুয়াডাঙ্গার সন্তান। আমরা যে পেশা বা শ্রেণিরই হই না কেন-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, গণমাধ্যমকর্মী-আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি। একমাত্র ঐক্যবদ্ধ থাকলেই আমরা চুয়াডাঙ্গার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পেশাগত বা ব্যক্তিগত কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থান করি, কিন্তু আমাদের মধ্যে একটি শক্তিশালী বন্ধন থাকা প্রয়োজন। যদি আমরা সঠিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে আমাদের ন্যায্য অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীসহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা যদি একত্রিত হয়, তাহলে চুয়াডাঙ্গার উন্নয়নের পথ আরও সুগম হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরে সব কিছু রাজনীতির মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু আমরা চাই, কিছু সংগঠন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত বা ব্যক্তি স্বাধীনতায় থাকুক এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করুক। আমরা চাই, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকুক, যাতে আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব হয়। চুয়াডাঙ্গার কল্যাণে আমরা সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে প্রস্তুত।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘আমাদের অনেক কিছু করার ইচ্ছে থাকলেও বিগত সময়ে তা সম্ভব হয়নি। আমরা একটি গণ্ডির মধ্যে বন্দি ছিলাম, যখন সামাজিক বা রাজনৈতিক কোনো কাজে আমাদের স্বাধীনতা ছিল না। টানা ১৬ বছর অস্থিতিশীল পরিবেশে জীবনযাপন করতে হয়েছে। এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা জাতীয়তাবাদী আদর্শকে ধারণ করে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। সংগ্রামের পথ ধরেই ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শাসকের পতন ঘটেছে, যার ফলে আমরা আবার গণমানুষের স্বার্থে সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পেয়েছি।’
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে চুয়াডাঙ্গাকে নিয়ে স্বপ্নের কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের এই সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের জেলার বিভিন্ন প্রান্তে অনেক বড় বড় কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী রয়েছেন। আমরা যদি তাদের একত্রিত করতে পারি এবং চুয়াডাঙ্গার নবীন শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা দিতে পারি, তাহলে তারা একদিন সফল ব্যক্তিত্বে পরিণত হবে। আমরা চাই, চুয়াডাঙ্গার সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলতে, যাতে তারা একদিন নিজেদের জেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা যারা চুয়াডাঙ্গার সন্তান, নিজেদের জেলার প্রত্যেককে খুঁজে বের করুন। আমরা চাই, চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হোক, যাতে তারা তাদের শিক্ষা ও ক্যারিয়ার গঠনে কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন না হয়। আমরা ছোট পরিসরে শুরু করলেও ধীরে ধীরে এটিকে বড় প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরিত করবো। চুয়াডাঙ্গার ছাত্রদের কল্যাণে দেশব্যাপী একটি শক্তিশালী ছাত্রকল্যাণ সমিতি গঠনই আমাদের লক্ষ্য।’

ঢাকাস্থ সরকারি সাত কলেজ চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সভাপতি নোবেল ইসলাম সূর্যের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আল জোবায়ের বাদশার সঞ্চালনায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জনতা ব্যাংক পিএলসির ডিরেক্টর ও সাবেক যুগ্ম সচিব ড. মো. আব্দুস সবুর, বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির ট্রেজারার ডা. সায়ীদ মেহবুব উল কাদির, ঢাকাস্থ চুয়াডাঙ্গা জেলা সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ড. মোহা. মাসুদুল হক ঝণ্টু, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পরিষদের উপদেষ্টা ইকরামুল হক নয়ন।
এছাড়া, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সাব্বির আহমেদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোমিন মালিতা, যুগ্ম সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি এহসানুল হক, বিশিষ্ট ঠিকাদার উসমান গনি রতন প্রমুখ।
বক্তারা চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীদের একত্রিত করে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরির ওপর গুরুত্ব দেন। তারা বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার নবীন ও প্রবীণদের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে পারলে জেলার শিক্ষার্থীরা আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা পাবে। আমরা চাই, প্রত্যেক শিক্ষার্থী যেন একে অপরের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।’
অতিথিরা প্রতিশ্রুতি দেন, ‘শুধু শিক্ষার্থীদের সহায়তা নয়, চুয়াডাঙ্গার সার্বিক উন্নয়নে আমরা কাজ করবো। আমাদের লক্ষ্য, চুয়াডাঙ্গার প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন যথাযথ দিকনির্দেশনা পায় এবং তাদের শিক্ষা ও ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকে। আমরা সকলকে সঙ্গে নিয়ে এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে চাই।’ এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে চুয়াডাঙ্গার কল্যাণে কাজ করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন।