বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

সংস্কারে একমত হলেই ভোট

  • আপলোড তারিখঃ ২৬-০৯-২০২৪ ইং
সংস্কারে একমত হলেই ভোট

রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একমত হলেই নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচনের সময় ঠিক করার ক্ষেত্রে ভোটার তালিকা তৈরির কাজ সম্পন্ন করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন ড. ইউনূস। ওই সময়ই এই সরকার জানিয়ে দেয়, দেশে আগে সংস্কার দরকার, তারপর নির্বাচন। এর মধ্যে নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি বলেছে, তারা সরকারকে সময় দিতে প্রস্তুত, তবে সেটি ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়’। এরপর দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেন ড. ইউনূস। সেখানে একেক দল একেক ধরনের দাবি তুললেও নির্বাচনের ‘সময় সীমা’ নিয়ে কোনো প্রসঙ্গ আসেনি। গত মঙ্গলবার রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে।
আগামী ভোট নিয়ে দেশে বিএনপিসহ বিভিন্ন মহলের আলোচনার মধ্যে আইএমএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাই নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে তার মতামত তুলে ধরলেন। এসময় রাষ্ট্র সংস্কারে আইএমএফ ইউনূসের সরকারের ‘পাশে আছে’ জানিয়ে জর্জিয়েভা জানান, এই কাজের জন্য আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। দলটি ঢাকা ঘুরে এসে আগামী মাসে আইএমএফ পরিচালনা পর্ষদের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। বৈঠকে ড. ইউনূস বৈষ্যমবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারে উৎখাত নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তখন জর্জিয়েভা বলেন, এটি একটি ভিন্ন দেশ। এটি বাংলাদেশ ২.০।
প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন, বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও সংবিধানে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ করার জন্য গঠন করা ছয়টি কমিশনের কথা তুলে ধরেন। এসব উদ্যোগে সমর্থন জানিয়ে জর্জিয়েভা বলেন, আইএমএফ বাংলাদেশ সরকারের জন্য আর্থিক সহায়তা দ্রুততর করবে। আইএমএফ বোর্ড টিমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ঋণদান কর্মসূচি শুরু করতে পারে, অথবা এটি গত বছরের শুরুর দিকে চালু হওয়া বিদ্যমান সহায়তা কর্মসূচির অধীনে আরো ঋণ দিতে পারে। বৈঠকে জ¦ালানি, বিদ্যুৎ ও পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক সফররত প্রধান উপদেষ্টা এদিন ব্যস্ত সময় পার করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি আরো কয়েকটি বৈঠক ও অনুষ্ঠানে অংশ নেন। আগামীকাল প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আহ্বান :
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমাদের সতর্ক হতে হবে। এই সংকটের সমাধান না হলে শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র অঞ্চল সমস্যায় পড়বে। আমাদের অব্যশই এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। গত মঙ্গলবার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, আইসিসি প্রসিকিউটর করিম এ এ খান, আইওএম মহাপরিচালক অ্যামি পোপ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নতুন করে ভাবার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, প্রথমত আমরা চাই জাতিসংঘ মহাসচিব যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সব পক্ষের উপস্থিতিতে একটি সম্মেলনের আয়োজন করুক। সম্মেলনে সংকটের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নতুন এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সমাধানের উপায় কী হতে পারে, তেমন প্রস্তাব আসতে হবে। দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ যৌথভাবে পরিচালিত ‘জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান’ কার্যক্রমে নতুন করে প্রাণশক্তি যোগ করার প্রয়োজন। যেহেতু এখন রোহিঙ্গাদের পেছনে ব্যয় করার মতো তহবিলের অভাব রয়েছে, তাই রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়া আরো জোরদার করতে হবে।
তৃতীয় প্রস্তাবে ড. ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই আন্তরিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার দ্বারা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বৈষম্য, রাষ্ট্রহীনতা এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত বন্ধ করতে আমাদের অবশ্যই প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
আইওএম মহাপরিচালক অ্যামি পোপ বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। এই সংকট সমাধানে আমাদের আরো কাজ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে। আইওএম এই লক্ষ্য অর্জনে সম্ভাব্য সবকিছু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার-বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং বাংলাদেশ ও তাদের আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠীর জন্য প্রায় ১৯ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলারের নতুন সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেন। এই মার্কিন সহায়তা জীবন রক্ষা বিশেষ করে সহিংসতা ও নিপীড়নের কারণে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা, আশ্রয় এবং খাদ্য সরবরাহে সহায়তা করবে।
এদিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে বাংলাদেশে অবস্থানরত কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থী বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে ‘আমাদের হতাশ করবেন না’ মর্মে একটি বার্তা পাঠায়েছে। ভিডিও বার্তায় তারা বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ভুলে যাওয়া যাবে না।
তরুণদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে সহযোগিতার আহ্বান :
যুবসমাজের জীবন উৎসর্গ এবং অদম্য নেতৃত্বের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটেছে। একটি বৈষম্যহীন সমাজ ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে তারা জীবন দিয়েছে। তরুণদের এই স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিদেশি বন্ধুদের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিউইয়র্ক সময় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপ্রাপ্তির ৫০তম বছর উদযাপন উপলক্ষে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
সংবর্ধনা আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আরো ছিলেন- পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ¦ালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবদুল মুহিত, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রমুখ। প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি বন্ধুদের উদ্দেশে বলেন, তরুণদের আত্মত্যাগ আমাদের সামনে বড় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। আমরা এই সুযোগ হারাতে চাই না। বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে তরুণরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায়। এটি বাস্তবায়নে আপনাদের সবার সমর্থন প্রয়োজন।
অধ্যাপক ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোকচিত্রী ও লেখক শহিদুল আলম শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাগুলো নিয়ে লেখা দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। যারা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল আমরা তাদের হতাশ করতে চাই না। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে একটি নতুন নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কাজ করছে। বিদেশি বন্ধুদের উদ্দেশে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের তরুণরা যে সাহস ও প্রত্যয় দেখিয়েছে, তা আমাদেরকে অভিভূত করেছে। বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে তারা পঙ্গুত্ববরণ করতে পিছপা হয়নি। তরুণদের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষার বাংলাদেশ গড়তে আমরা আপনাদের পাশে চাই।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ :
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সাক্ষাৎ হয়েছে। মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে একটি ইভেন্টের সাইডলাইনে এই দুই নেতা কথা বলেন। তারা একে অন্যের সঙ্গে করমর্দন করেন।
ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক :
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উভয় নেতা অভিবাসন নিয়ে আলোচনা করেন। একই সঙ্গে আরো বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি যেন বৈধভাবে ইতালিতে যাওয়ার ও কাজের সুযোগ পায় সেই আহ্বান জানান ড. ইউনূস। বৈঠকের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, অনেক বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইতালিতে যাওয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পথ অবলম্বন করেন, তাই ড. ইউনূস বৈধ বা আইনি উপায় খোঁজার কথা জানিয়েছেন। আরো বেশি বাংলাদেশি যেন ইতালিতে গিয়ে কাজ করতে পারেন, তিনি সেই আহ্বান জানান।



কমেন্ট বক্স