বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

মৃত্যুডেরা রাখাইন থেকে পালিয়ে সীমান্তে হাজার হাজার রোহিঙ্গা

  • আপলোড তারিখঃ ২৭-০৮-২০১৭ ইং
মৃত্যুডেরা রাখাইন থেকে পালিয়ে সীমান্তে হাজার হাজার রোহিঙ্গা
সমীকরণ ডেস্ক: মিয়ানমার সীমান্তে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে নানাভাবে। অবশ্য বাংলাদেশে প্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে বিজিবি। ওদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেছে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ বিজিপি। গতকাল দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। অপরদিকে গুলিবিদ্ধ এক রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের কড়া পাহারার মধ্যেও বিভিন্নভাবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গতকাল ৭৩ রোহিঙ্গাকে অনুপ্রবেশ করার সময় ফেরত পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অনুপ্রবেশকারী ১৭ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল ভোরে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির আইসিএসআই মনির খানের নেতৃত্বে পুলিশ তাদের আটক করে। পরে তাদের বিজিবি’র কাছে হস্তান্তর করা হয়। মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সহিংসতার ফলে আতংকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে শতশত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের জন্য জড়ো হয়ে আছে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। শুক্রবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত মিয়ানমারের ৭৩ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় বিজিবি, কোস্টগার্ড টহল জোরদারসহ অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে মুসলমানদের ওপর সে দেশের সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। এর প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে গতকাল দুপুর ১টায় টেকনাফ উপজেলা মিলনায়তনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় কক্সজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। এরা কোনোভাবেই যেন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে। এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক এবং নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে হবে। যারা রোহিঙ্গা পারাপার, অনুপ্রবেশে সহযোগিতা, আশ্রয় প্রশ্রয় দেবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং রোহিঙ্গাদের বহনকারী সিএনজি, টমটম গাড়িসহ যে কোনো ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিপূর্বে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে সরকার। কিন্তু এই রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে। তাই বার বার তাদের সেই সুযোগ দেয়া যায় না। এজন্য সীমান্তে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকতে হবে। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সুশীল সমাজের ব্যক্তিদেরও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ভূমিকা অতি প্রয়োজন। গতকাল দুপুর ১টায় টেকনাফ উপজেলা মিলনায়তনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বিশেষ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ উদ্দীন ছিদ্দীকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ সভায় বক্তব্য রাখেন, টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, কক্সবাজারের উপ পরিচালক (স্থানীয় সরকার) আনোয়ারুল নাসের, সহকারী পুলিশ সুপার (উখিয়া-টেকনাফ সার্কেল) চাইলাউ চাকমা, টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাঈন উদ্দিন খাঁন, হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী, হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান এসকে আনোয়ার, সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন, টেকনাফ পৌর প্যানেল মেয়র কুহিনুর আক্তার, ইউপি মে¤॥^ার জালাল উদ্দিন প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, টেকনাফ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাহেরা আক্তার মিলি, পৌর প্যানেল মেয়র মাওলানা মুজিবুর রহমান, টেকনাফ সদর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আবদুল্লাহ, বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, গোয়েন্দা, বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকবৃন্দ। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ বলেন, বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে অবস্থানরত আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনুপ্রবেশ করাতে না পারে সেদিকে প্রশাসনের লক্ষ্য রাখা জরুরি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা যেন সীমান্তের কাছাকাছি যেতে না পারে সে জন্য ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের গতিবিধির প্রতি নজরদারি রাখতে হবে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। চিকিৎসাধীন রয়েছেন আহত আরো একজন। গতকাল সকাল ৮টায় তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে আহত হন। পরে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। বেলা ১১টার দিকে মো. মুসা (২২) নামে ওই বিদ্রোহী মারা যান। তিনি রাখাইনের মংডু এলাকার মো. ইসমাইলের ছেলে। আহত মোক্তার হোসেনের (২৭) বাড়িও মংডু এলাকায়। তার বাবার নাম গুল মোহাম্মদ বলে জানান চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার। আহত মোক্তার হোসেনের বরাত দিয়ে এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, তারা মংডুর লাইনমাখালি পুলিশ ফাঁড়ির সামনে গুলিবিদ্ধ হন। পরে পালিয়ে শুক্রবার রাতে কক্সবাজার সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। সেখান থেকে সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেলে আসেন। তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির’ (এআরএসএ) সদস্য বলে স্বীকার করেন। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের উখিয়া ও ঘুমধুম ঢেকুবুনিয়া এলাকা গতকাল বিকাল থেকে গুলিবর্ষণের শব্দে কেঁপে ওঠে। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন গতকাল সকাল ১০টায় উখিয়া উপজেলা পরিষদ হলরুমে এক জরুরি সভায় প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকলকে কড়া সতর্ক অবস্থায় থেকে সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশ সীমান্তে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তবে মিয়ানমার সীমান্তে চলছে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। রাখাইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের মুখে সীমান্তবর্তী এলাকায় পালিয়ে আসা মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর উপর্যুপরী গুলিবর্ষণ করছে মিয়ানমার বাহিনী। এতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা দিকহারা হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার বিভিন্ন  ঝোপঝাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান জানান, সীমান্তের যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন ও টহল জোরদার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ চেকপোস্টে হামলার পর নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৮৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৭৭ রোহিঙ্গা মুসলিম ও নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য রয়েছেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর রোহিঙ্গা যোদ্ধারা পুলিশ পোস্টে হামলা এবং একটি সেনাঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলে এ সংঘর্ষ বাধে। এরপর শুক্রবার মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনের বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে গুলি করে হত্যা ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়।


কমেন্ট বক্স
notebook

আইজিপির সঙ্গে সাক্ষাৎ করল রবার্ট এফ কেনেডি মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিদল