মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

দ্রুত জন্মভূমিতে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা

  • আপলোড তারিখঃ ০৯-০৬-২০২৩ ইং
দ্রুত জন্মভূমিতে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা
সমীকরণ প্রতিবেদন: দ্রুত জন্মভূমি মিয়ানমারে ফেরার দাবিতে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। এ সময় তারা প্রত্যাবাসনবিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত অন্তত ১৩টি আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গারা একযোগে মানববন্ধন করেন ও সমাবেশে অংশ নেন। প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনা ও দুই দেশের প্রতিনিধিদের সফর ও নানাবিধ পদক্ষেপের মধ্যে রোহিঙ্গারা এই সমাবেশ করল। প্রায় ছয় বছর ধরে লাখ লাখ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অমানবিক ও বন্দি জীবন কাটাচ্ছে মন্তব্য করে সমাবেশে বক্তারা বলেন, তারা দ্রম্নতই নিজেদের দেশে ফিরতে চান, নিজের বসতভিটায় যেতে চান। প্রত্যাবাসনের জন্য দুই দেশের মধ্যে যে আলোচনা চলছে তা সফল করার আহ্বান জানান নেতারা। রোহিঙ্গা নেতারা অভিযোগ করে বলেন, দুই দেশের আলোচনার মধ্যে একটি মহল প্রত্যাবাসন বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে। অথচ তারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে মরিয়া। নাগরিকত্ব প্রদানের শর্ত মেনে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন জরুরি বলে দাবি করেন তারা। এছাড়া পাইলট প্রকল্পের অধীনে প্রত্যাবাসনে রাজি হওয়া চারটি পরিবারের ২৩ সদস্যের খাদ্য সহায়তা ইউএনএইচসিআরের পক্ষ থেকে বন্ধ করার সমালোচনা করে রোহিঙ্গা নেতারা নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য জাতিসংঘের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন। উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া চৌরাস্তার হমাথার সমাবেশে বক্তব্য দেন ক্যাম্প-১ ইস্ট এবং ওয়েস্ট কমিউনিটি নেতা জুবায়ের, মাস্টার কামাল, মৌলভী নুর হোসেইন, মৌলভী ছৈয়দ উলস্নাহ, মাস্টার শামসুল আলম; সাতরাস্তার মাথার সমাবেশে বক্তব্য দেন ক্যাম্প- ৩ ও ৪ এর আবদুল গফুর, রশিদ মিয়া; পোড়াবাজারের মাঠের সমাবেশে বক্তব্য দেন ক্যাম্প-৯, ১০ ও ৮/ইস্টের মান্নান হোসেন, রফিক উল্ল্নাহ। লম্বাশিয়া চৌরাস্তার মাথা (ক্যাম্প-১ ইস্ট এবং ওয়েস্ট), ক্যাম্প-৪ এর সাতরাস্তার মাথা (ক্যাম্প-৩, ৪, ৪ এক্সটেনশন), ক্যাম্প-৫ এর নিচে ঢালে (ক্যাম্প-৫ এবং ৮ ওয়েস্ট, ক্যাম্প-১৭), ক্যাম্প-৯ এর পোড়াবাজারের মাঠে (ক্যাম্প-৯, ক্যাম্প-১০, ক্যাম্প-৮/ইস্ট), ক্যাম্প-১১ মরাগাছ তলায় (ক্যাম্প-১২ সহ), ক্যাম্প-১৩ এর সিআইসি অফিসের পেছনে ফুটবল খেলার মাঠ, ক্যাম্প-১৯ এর সিআইসি অফিসের সামনে, ক্যাম্প-১৫ এর সিআইসি অফিসের পাশে (ক্যাম্প-১৪, ১৫, ১৬), ক্যাম্প-২০ এর সিআইসি অফিসের সামনে (ক্যাম্প-২০, ২০ এক্সটেনশন), ক্যাম্প-১৮ এর সিআইসি অফিসের সামনের রাস্তায়, ক্যাম্প-২৪ এর সিআইসি অফিসের সামনে, ক্যাম্প-২৬ এর সিআইসি অফিসের সামনে এবং ক্যাম্প-২৭ এর সিআইসি অফিসের সামনে এসব সমাবেশ করে রোহিঙ্গারা। আমাদের টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার সকালে টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সমাবেশ করেন রোহিঙ্গারা। সমাবেশে সাধারণ রোহিঙ্গারা দ্রুত সময়ে তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর দাবি জানান।শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতারা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারকে চাপ প্রয়োগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান। এ সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা আয়াছ ও বদুল ইসলামসহ সাধারণ রোহিঙ্গারা বক্তব্য রাখেন। টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের ডেভেলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, 'আমরা শরণার্থী জীবন আর চাই না। আমাদের নিজেদের দেশ আছে, সেদেশে বসবাস করা আমাদের অধিকার, মিয়ানমার আমাদের দেশ। সেখানেই আমরা চলে যেতে চাই।' এদিকে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, 'আমরা আর শরণার্থী জীবন চাই না। সামনের দিনগুলোতে আমরাও আমাদের জন্মভূমি আরাকানে জীবনযাপন করতে চাই। বিশ্ব সম্প্রদায় আমাদের দেশে ফেরার ব্যাপারে যেন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়।' এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন অতিরিক্ত কমিশনার (উপ-সচিব) খালিদ হোসেন জানান, 'শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ন্যায্য দাবি-দাওয়ার কথা তারা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতেই পারেন। রোহিঙ্গারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে তাদের দাবির কথা জানিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের এই সমাবেশে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য পুলিশের সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন বলে জানিয়ে ১৬-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মুহাম্মদ জামাল পাশা বলেন, 'মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবিতে তার নিয়ন্ত্রণাধীন ক্যাম্পেন ৫টি জায়গায় ৭ হাজার রোহিঙ্গা শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অংশ নেন।' বাংলাদেশে ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। তাদের প্রত্যাবাসন আলোচনা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চলতি বছর আবার শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত ১৫ মার্চ মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে। সে সময় প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গার তথ্য যাচাইবাছাই শেষে ফিরে যায় দলটি। পরে গত ৫ মে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ দেখতে বাংলাদেশ থেকে ২০ জন রোহিঙ্গাসহ ২৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে যায়। ফিরে এসে রোহিঙ্গারা অসন্তোষ প্রকাশ করলেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা প্রত্যাবাসনের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৫ মে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে মিয়ানমারের আরেকটি প্রতিনিধি দল টেকনাফে আসে। প্রত্যাবাসনের তালিকা যাচাইবাছাই করে ওইদিন বিকালেই তারা মিয়ানমারে ফিরে যান।


কমেন্ট বক্স
notebook

চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গায় যৌথ সভায় জেলা বিএনপির সম্পাদক শরীফুজ্জামান