সমীকরণ প্রতিবেদন: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জানিয়েছেন, তাকে হত্যা করার জন্য যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে- সেটা তিনি আগেই জানতেন। এই ষড়যন্ত্রের পেছনে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এবং মেজর জেনারেল ফয়সাল। তিনি এই তিনজনের পদত্যাগ দাবি করেছেন। গতকাল শুক্রবার লাহোরের শওকত খানম হাসপাতাল থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এ দাবি করেন। ইসলামাবাদ অভিমুখে লং মার্চে নেতৃত্বে দেওয়ার সময় বৃহস্পতিবার ওয়াজিরাবাদে বন্দুক হামলায় গুলিবিদ্ধ হন ইমরান খান। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদিকে ইমরান খানের ওপর হামলার প্রতিবাদে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ করেছে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) কর্মী ও সমর্থকরা। বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। এদিকে ইমরান খানের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, রাজনীতিতে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। খবর ডন ও উইওনের। ইমরান খান বলেন, আগেই জানতাম ওয়াজিরাবাদে আমাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। একদিন আগেই সরকারের ভেতর থেকেই আমার কাছে এই তথ্য এসেছিল। পাঞ্জাবের সাবেক গভর্নর সালমান তাসিরের মতো তারা আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। তিনি বলেন, মোট চারজন ব্যক্তি আমাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে। আমি আগেই একটি ভিডিও’তে এসব ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে রেখেছি। আমার কিছু হলে সেই ভিডিও প্রকাশ হবে। ভাষণে ক্ষমতাসীন পিএমএল-এন ও পিপিপি পার্টির কড়া সমালোচনা করেন ইমরান খান। তিনি বলেন, এই দুই দল বিপুল দুর্নীতি করে দেশকে ঋণের বোঝায় ডুবিয়েছে। জনগণ তাদের ওপর বিরক্ত হয়ে পরিবর্তনের আশায় আমাকে ভোট দিয়েছিল। আমাকে কোনো প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান ক্ষমতায় আনেনি। আমি জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসেছিলাম। ইমরান খান বলেন, আমার সরকার অনাস্থা ভোটে হারেনি। যড়যন্ত্র করে, অর্থ খরচ করে আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের নিজস্ব এজেন্সিগুলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা চাইছে না। তারা আমার দলের নেতা-কর্মীদের, গণমাধ্যমকে বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছে, ব্ল্যাকমেইল করছে যাতে তারা আমাকে পরিত্যাগ করে। তোষাখানার মিথ্যা অভিযোগে আমাকে অযোগ্য ঘোষণায় নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করা হয়েছে। ইমরান খান বলেন, আমরা মানুষ, আমাদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করবেন না। জাতি আজ রুখে দাঁড়িয়েছে, এখন রাস্তা দুটি- হয় শান্তিপূর্ণ, না হয় রক্তাক্ত বিপ্লব। তৃতীয় কোনো পথ খোলা নেই। শান্তিপূর্ণ অবাধ নির্বাচন হবে নাকি বিশৃঙ্খলাপূর্ণ হবে- সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। ভাষণে ইমরান খান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাবেদ বাজওয়াকে তার প্রতিষ্ঠানের কুলাঙ্গারদের বিচারের মুখোমুখি করার আহবান জানান। তিনি বলেন, দুস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে সেনাবাহিনীর সম্মান বাড়বে। হত্যাচেষ্টার পর পিটিআই মামলা দায়ের করে চেয়েছে জানিয়ে ইমরান বলেন, কিন্তু সবাই ভীত সন্ত্রস্ত। কারণ অভিযুক্ত অনেক প্রতিষ্ঠান আইনের উর্ধে। ইমরান বলেন, দুইজন হিরো সেসময় না থাকলে আমি আরো গুরুতর আহত হতে পারতাম। আমি শহীদ মুয়াজ্জেমের প্রতি সম্মান জানাই। আরেকজন ইবতিশাম যদি হামলাকারীকে প্রতিহত না করতেন তাহলে আরো গুলি চলতো। সেখানে দুইজন হামলাকারী ছিল। হামলার পর আমি পড়ে যাওয়ায় তারা মনে করেছিল আমি মারা গেছি। ইমরান বলেন, আমি সুস্থ হলেই আবারো রাস্তায় নামবো। স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আপোষ করব না। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের পদত্যাগের দাবিতে জনগণকে রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শনের আহবান জানান। তিনি বলেন, বিচার না হওয়া পর্যন্ত জাতি মুক্ত হবে না। পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ: ইমরানের খানের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। করাচি, লাহোর, পেশোয়ার, ফাইজাবাদ, ফয়সালাবাদসহ কয়েকটি শহরে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন পিটিআইয়ের হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। কয়েকটি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। হামলার সুষ্ঠু তদন্তের পাশাপাশি সমাবেশ থেকে সরকারবিরোধী স্লোগান ওঠে। ডন জানায়, করাচির শারা ফয়সাল রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের সমাবেশে টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ। লাহোরের গভর্নর হাউসের বাইরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন পিটিআই নেতা-কর্মীরা। ফাইজাবাদে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ জানায়, বিক্ষোভকারীরা লাঠি, গুলতি ও পাথর নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। বিক্ষোভকারীরা সমাবেশ থেকে ঢিল ছুড়লে পুলিশ পাল্টা টিয়ার গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করে। আলপুরি, পুরানসহ অনেক এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে, টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। ইমরান খানকে হত্যাচেষ্টার নিন্দা যুক্তরাষ্ট্রের: ইমরান খানের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে দেশটির সব রাজনৈতিক দলকে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, রাজনীতিতে সহিংসতার কোনও স্থান নেই। আমরা ইমরান খান এবং অন্যান্য যারা আহত হয়েছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।