বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

জীবননগরে সওজের জমি দখল করে বিক্রয়

  • আপলোড তারিখঃ ০৩-০১-২০২২ ইং
জীবননগরে সওজের জমি দখল করে বিক্রয়

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে দীর্ঘদিন ধরে সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গা দখল করে লাখ লাখ টাকার বিক্রয় করাসহ গড়ে তোলা হয়েছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। গড়ে উঠেছে দোকান-পাট। আর এই সব দোকান ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করছে একটি মহল। সওজের জমি দখল হয়ে আসলেও কর্মকর্তারা নিশ্চুপ থাকায় জনমনে উঠেছে নানা প্রশ্ন।

জীবননগর পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিমপাশের্^ অবস্থিত সওজের পুরাতন রেস্ট হাউজটি উপজেলাবাসীর নিকট বর্তমানে পুরাতন ডাকবাংলো হিসেবে পরিচিত। এ ডাকবাংলোর রেস্ট হাউজসহ জীবননগর বাসস্ট্যান্ডের আশেপাশে সড়ক ও জনপথের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আগত অতিথিদের জন্য নির্মিত রেস্ট হাউজ ও ভবিষ্যতে সড়ক আরও প্রসারিত করার কথা চিন্তা করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিপুল সম্পত্তি রাখা হলেও দপ্তরটি স্থানীয় কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব সম্পদ রক্ষার পরিবর্তে উল্টা কিছু দখলবাজদের সাথে গোপন আঁতাত করে। এ নিয়ে লাখ লাখ টাকার অর্থ বাণিজ্য হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যার ফলে দখলদাররা দখল করতে করতে প্রধান পাঁকা রাস্তার ওপর চলে এসেছে। যে কারণে সাধারণ পথচারীদের রাস্তা পারাপারে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সকল স্থানের সড়ক ও জনপথ বিভাগের মূল্যবান জমি নিয়ে প্রভাবশালী মহলের রীতিমতো হরিলুট কারবার শুরু হয়েছে। যার যেখানে ইচ্ছা সেখানে দল করে পাকা ইমারত নির্মাণ করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে কেউ নিজে ব্যবসা করছেন, আবার কেউ ভাড়া দিয়ে রেখেছে আবার কেউ বা দখলকৃত জায়গা বিক্রি করে দিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করছেন। যে কেউ দেখলে মনে করবে গড়ে ওঠা স্থাপনাগুলো মালিকাধীন জমিতে হয়েছে।

দোকান ভাড়া নেওয়া ফল ব্যবসায়ী ইসলাম বলেন, ‘বজলু মেশিনারির মালিক বজলু মিয়ার নিকট থেকে আমি একটি দোকান ভাড়া নিয়েছি। যার প্রতি মাসের ভাড়া ৩ হাজার টাকা। ওনার এখানে মোট তিনটি দোকান আছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, জীবননগর পৌর শহরের জীবননগর-দত্তনগর ভায়া জীবননগর হাসপাতাল সড়কের দু’ধারে থাকা সওজের বিপুল সম্পত্তি অবৈধ দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। সরকারি জমি দখল করে এ ধরণের অপকর্ম করছেন এমন শুধু বজলু একাই নয়, লুৎফর, হুসাইন, সাদেক, দেলোয়ারসহ বেশকিছু ব্যক্তি সরকারি এই জমি দখল করছে। সড়ক বিভাগে চাকরি করেন রফিক নিজেও এখানে জমি দখল করে দোকান তৈরি করেছেন। প্রতি বছর দখলদার মহলটি তাদের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করছে। তার ওপর আবার ভাড়া দিতে একটু দেরি হলে ঘর ছেড়ে দেওয়ার হুমকিসহ নানাভাবে হয়রানিও করে থাকে। এসব জমি দখল করে রাতারাতি সেমি পাকা দোকান ঘর নির্মাণ করেছে প্রভাবশালী মহল। এ চক্রের হোতারা মালিক বনে গিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দোকান ঘরগুলো ভাড়ায় দিচ্ছে। এসব এলাকায় অবৈধ দখলদাররা কোটি কোটি টাকার জমি বেদখল করে আছে।

জীবননগর বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি, সড়ক ও জনপথের পুরাতন ডাকবাংলো নামক জায়গাটি খুব সহজেই দখলদাররা দখলে নিলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে কোনো বাঁধা দেওয়া হয়নি। যে কারণে এখন সওজের কোটি কোটি টাকার জমি হরহামেশায় দখল করে দোকান-পাট নির্মাণ করে লাখ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করছে। যারা এসব দোকান ভাড়ায় কিংবা ক্রয় করে নিয়েছে, অবৈধ দখলদার চক্রটি তাদেরকে কারো নিকট মুখ খুলতে নিষেধ করায় এ ব্যাপারে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হয় না।

``

জীবননগর বাসস্ট্যান্ডের আশেপাশে ও পুরাতন ডাকবাংলোর জমি গত কয়েক বছর আগে ক্ষমতাসীন দলের একটি প্রভাবশালী মহল মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়। সে সময় টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়া অনেক ক্ষুদ্র-প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের ব্যবসা গুটিঁয়ে নিতে দেখা যায়। সচেতন মহলের দাবি, সরকারি সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব যাদের, খোদ তারাই যদি উদাসীন হন, তাহলে কাররই আর কিছুই বলার থাকে না।

চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ইতঃপূর্বে সওজের জায়গা দখলমুক্ত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু রোজার মাস হওয়ায় মানবিক কারণে ঈদ পর্যন্ত জোর সুপারিশ করায় দখলমুক্ত করতে পারিনি। সওজের সাইন বোর্ড অপসারণ করে হাইওয়ের রেস্ট হাউজের জায়গায় অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে খুব শিগশিরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং সওজের জায়গা দখলমুক্ত করা হবে।’

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কের জমি কেউ দখল করে বিক্রি করতে পারবে না এবং ভাড়া দিতে পারবে না, সড়ক বিভাগ যখন চাইবে তখন উচ্ছেদ করবে। যদি কেউ টাকা দিয়ে এই জমি ক্রয় করে থাকে, তা হলে সে ভুল করবে।’



কমেন্ট বক্স
notebook

চুয়াডাঙ্গায় টানা দাবদাহে অতিষ্ঠ প্রাণিকূল, হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ