করোনার পর পাঠক কমছে চুয়াডাঙ্গার দুটি গ্রন্থাগারে
- আপলোড তারিখঃ ১০-১০-২০২১ ইং
মেহেরাব্বিন সানভী:
পর্যাপ্ত বই থাকলেও পাঠক নেই চুয়াডাঙ্গার দুটি গ্রন্থাগারেই। বিশেষ করে করোনাভাইরাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আরও বেশি কমেছে পাঠকসংখ্যা। নতুন সদস্য পেতেও বেগ পোহাতে হচ্ছে গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষকে। গত কয়েক বছরে দুটি গ্রন্থাগারেই সদস্য সংখ্যা বেড়েছে হাতে গোনা কয়েকটি। পুরোনো সদস্যদের অনেকেই আবার দীর্ঘদিন করান না সদস্যপদ নবায়ন।
চুয়াডাঙ্গা শহরে বড় বড় দুটি গ্রন্থাগার। একটি জেলা শহরের শহীদ রবিউল ইসলাম সড়কের টিএন্ডটি মোড়ে অবস্থিত চুয়াডাঙ্গা সরকারি গণগ্রন্থাগার। আরেকটি শহীদ আবুল হোসেন স্মৃতি পাঠাগার, যা চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। চুয়াডাঙ্গা শহরের সবচেয়ে পুরোনো গ্রন্থাগার এটি। ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এ গ্রন্থাগারটি। তবে বহু আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের আনাগোনা এখানে কম। সাপ্তাহিক শুক্রবার বাদে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পযর্ন্ত খোলা থাকে গ্রন্থাগারটি। বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার বই আছে এখানে। সাধারণ সদস্যদের মাসিক চাঁদা ২০ টাকা এবং শিক্ষার্থীদের ১০ টাকা। পত্রিকা, ম্যাগাজিন রাখা হয় প্রায় আটটি। ২০১১ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লাইব্রেরিটির তত্ত্বাবধান নেয় চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা।
অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারে গত এক বছরে সদস্য সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ১৪ জন। ১০০ জন একসাথে বসতে পারলেও এখন একসাথে তার অর্ধেক মানুষকেও পড়তে দেখা যায় না। গ্রন্থাগারটি কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি হওয়ায় করোনার আগে অল্প কিছু শিক্ষার্থীর দেখা মিললেও এখন তা আরও কম। কিছু নিয়মিত পাঠকও ছিলেন। তাঁরা মূলত চাকরিপ্রত্যাশী অথবা পত্রিকা পড়তে আসতেন। তবে তাঁদের সংখ্যাও এখন নগণ্য।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরি অ্যাসিসটেন্ট আবু সাঈদ মামুন জানান, গ্রন্থাগারে স্থানীয় লেখকদের বইসহ বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য, আইন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, শিশুসাহিত্য, দর্শন, খেলাধূলা, বাণিজ্য, ধর্মীয়, ভ্রমণ কাহিনী, আত্মজীবনী, বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয়ের মোট ৩৭ হাজারের ওপরে বই রয়েছে। এছাড়া পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী জাতীয়, আঞ্চলিক, স্থানীয়, সাপ্তাহিক, মাসিক, চাকরির পত্রিকাসহ নিয়মিত ১৪টি পত্রিকা রাখা হয়। লাইব্রেরির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৯৫ জন। শহীদ আবুল হোসেন স্মৃতি পাঠাগারের লাইব্রেরিয়ান আসাদুজ্জামান রাজু বলেন, ‘প্রায় পরিত্যক্ত ভবনে লাইব্রেরিটির কার্যক্রম পরিচালিত। ভবনটির মেরামত করা প্রয়োজন। বেশির ভাগ পাঠকই পত্রিকা পড়তে আসেন। তবে বই নিয়ে যেয়ে পড়ার পাঠকের সংখ্যা আগের থেকে কমে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে মেরামত ও বরাদ্দ বাড়িয়ে বইয়ের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। কথা হয় সরকারি গণগ্রন্থাগারে আসা পাঠক মুনতাসির মুনিমের সাথে। তিনি বলেন, ‘মূলত যারা পাঠক, সেই স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরাই ক্লাসের পড়ার চাপে লাইব্রেরিতে এখন আসতে পারছে না।
চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সি বলেন, বইয়ের পাঠক আগের মতো আর নেই। ডিজিটাল যুগ আসার পর জ্ঞান অন্বেষণ থেকে মানুষ সরে যাচ্ছে। একুশে বইমেলায় বিপুল উৎসাহ লক্ষ করা গেলেও বাস্তবে বইয়ের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক কমে যাচ্ছে।
সরকারি চাকুরিজীবী মনিরুজ্জামান বলেন, জেলা গণগ্রন্থাগারগুলো পাঠক ধরে রাখতে না পারার একটি কারণ হচ্ছে সময়সূচি। গণগ্রন্থাগারগুলো খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। চাকরিজীবীরা অবসর সময়টি লাইব্রেরিতে কাটাতে চাইলেও তা সম্ভব হয় না। পাঠক সমাগমের জন্য খোলা রাখা উচিত বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত। তা ছাড়া শুক্রবার ও শনিবারও খোলা রাখা উচিত।
কমেন্ট বক্স