বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

করোনায় ৪ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত

  • আপলোড তারিখঃ ২৫-০৮-২০২১ ইং
করোনায় ৪ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অপেক্ষায় বাংলাদেশের ৪০ লাখ শিশু সমীকরণ প্রতিবেদন: কোভিড মহামারির কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লাখ শিশু সশরীরে তাদের শিক্ষা গ্রহণ শুরু করতে পারছে না। বিশ্বজুড়ে এ সংখ্যা প্রায় ১৪ কোটি। ইউনিসেফের এক বিশ্লেষণে এমন কথাই বলা হয়েছে। এদিকে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দেশের চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা-ইউনিসেফ। তাদের ভাষ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত বেশি সময় বন্ধ থাকবে, ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ততই বাড়বে। ফলে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি সংস্থাটির। গতকাল মঙ্গলবার ইউনিসেফের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বিশাল সংখ্যক শিশুরা সশরীরে শিক্ষা গ্রহণের প্রথম দিনটির জন্য এক বছরের বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করে আছে। কবে নাগাদ তারা স্কুলে যেতে পারবে তা নিয়েও রয়েছে ব্যাপক অনিশ্চয়তা। বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে স্কুল বন্ধের ক্ষেত্রে বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম এটি। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, স্কুলের প্রথম দিন একটি শিশুর জীবনে উল্লেখযোগ্য এক মুহূর্ত। এদিন তাদেরকে ব্যক্তিগত শিক্ষা অর্জন এবং বিকাশের ক্ষেত্রে একটি জীবন পরিবর্তনকারী পথে পরিচালিত করে। আমরা বেশিরভাগই স্কুলের প্রথম দিনের অসংখ্য ছোটখাটো বিবরণ মনে রাখি। যেমন, কী পোশাক পরেছিলাম, শিক্ষকের নাম, কার পাশে বসেছিলাম ইত্যাদি। তবে লাখ লাখ শিশুর জন্য সেই গুরুত্বপূর্ণ দিনটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। যখন বিশ্বের অনেক জায়গায় ক্লাস পুনরায় শুরু হয়েছে, তখন প্রথম শ্রেণির লাখ লাখ শিক্ষার্থী এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সশরীরে ক্লাসরুমে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি টোমো হোযুমি বলেন, ‘স্কুল এবং সশরীরে উপস্থিত হয়ে শিক্ষাগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ থাকা শিশুদের কেবল পড়াশোনার ক্ষেত্রে নয়, একইসঙ্গে তাদের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা এবং মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতার উপর অত্যন্ত গুরুতর প্রভাব ফেলে। প্রান্তিক শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, যা তাদেরকে অধিকতর দারিদ্র্য এবং অসমতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও দেবে। নিরাপদে স্কুল পুনরায় খুলে দেওয়া এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিনিয়োগ করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আজকের এই সিদ্ধান্ত এই শিশুদের পুরো জীবনকে প্রভাবিত করবে।’ গবেষণায় দেখা গেছে, এই অর্ন্তবর্তীকালীন সময়ে স্কুলের ইতিবাচক অভিজ্ঞতাগুলো শিশুদের ভবিষ্যতের সামাজিক, আবেগীয় ও শিক্ষাগত ফলাফলের ইঙ্গিত বহন করে। একই সময়ে, যেসব শিশু শুরুর বছরগুলোতে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ে তারা প্রায় ক্ষেত্রেই স্কুলে কাটানো অবশিষ্ট সময়ের জন্য পিছিয়ে থাকে এবং বছরের পর বছর এই ব্যবধান বাড়তে থাকে। একটি শিশুর প্রাপ্ত শিক্ষা বছরের সংখ্যা তার ভবিষ্যতের আয়ের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, সমাধানমূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা না হলে এই পুরো প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ আয়ের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ ক্ষতি হবে তা প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। বিদ্যমান তথ্য-প্রমাণ বলছে, আগেভাগে সামাল দেওয়া গেলে শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে এই ব্যবধান কমানোর খরচ অনেক কম ও কার্যকারিতা অনেক বেশি হয় এবং সেক্ষেত্রে শিক্ষার পেছনে বিনিয়োগ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হয়। ইউনিসেফ যত শিঘ্র সম্ভব সশরীরে উপস্থিত হয়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য স্কুলগুলো পুনরায় খুলে দিতে এবং শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তার জন্য বিস্তৃত পরিসরে পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়। বিশ্বব্যাংক ও ইউনেস্কোর সঙ্গে মিলে ইউনিসেফ স্কুলগুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের প্রতি মনোনিবেশ করতে সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে: সব শিশু এবং তরুণদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক কর্মসূচি প্রণয়ন করা, যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মনোসামাজিক সুস্থতা এবং অন্যান্য চাহিদা পূরণের জন্য তারা তাদের প্রত্যেকের প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত সেবা গ্রহণের সুযোগ পাবে; শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে কার্যকর প্রতিকারমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করা; শিক্ষার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবং শিক্ষাদান প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শিক্ষকদের সহায়তা দেওয়া। ফোর বলেন, `স্কুলের প্রথম দিনটি আশা এবং সম্ভাবনার দিন - একটি শুভ সূচনার দিন। তবে সব শিশু এই শুভ সূচনার সুযোগ পায় না। এমনকি কিছু শিশু শুরুই করতে পারছে না। আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সশরীরে উপস্থিত হয়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য স্কুলগুলো পুনরায় খুলে দিতে হবে এবং এই মহামারি ইতোমধ্যে শিক্ষা কার্যক্রমে যে ক্ষতি করেছে তা পুষিয়ে নিতে আমাদের অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না করলে কিছু শিশু হয়তো কখনোই এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে না।` নিরাপদে স্কুল খোলার লক্ষে ইউনিসেফ বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এই কর্মযজ্ঞের অংশ হিসাবে নির্দেশিকা তৈরি করা হচ্ছে যাতে শিশু এবং তাদের শিক্ষকরা মাস্ক পরিধান করে, সাবান পানিতে হাত ধুয়ে সাস্থবিধি মেনে নিরাপদে স্কুল শুরু করতে পারে। ইউনিসেফ স্কুলের শিশু, তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের সাথেও যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে যাতে নিরাপদে স্কুল খুলে দেওয়ার বিষয়ে সবার মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। আগামী কয়েক সপ্তাহে, ইউনিসেফ তার অংশীদার এবং বৃহত্তর জনগণকে সাথে নিয়ে কাজ করবে যাতে এই শিক্ষা সংকট কোনভাবেই শিক্ষা বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত না হয় । অনলাইন ও অফলাইন প্রচারাভিযানে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক এবং অভিভাবকদেরসমন্বয়ে একটি সর্বসম্মত উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করবে যাতে যত শিঘ্রী সম্ভব সশরীরে উপস্থিত হয়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য স্কুলগুলো পুনরায় খুলে দেওয়া যায়। বিশ্বের সবচেয়ে অসহায় শিশুদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে রয়েছে। অপর দিকে, আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারির পুরোটা সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চতর শিক্ষার স্তর পর্যন্ত বাংলাদেশে চার কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যত বেশি সময় ধরে শিশুরা স্কুলের বাইরে থাকবে, সহিংসতা, শিশুশ্রম এবং বাল্যবিয়ের ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা ততই বাড়বে। ফলে তাদের স্কুলে ফিরে আসার সম্ভাবনা কমে যাবে। বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। ভাইরাসের বিস্তার রোধে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরে দফায় দফায় তা বাড়িয়ে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে। এদিকে, দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন মনোচিকিৎসকরা। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার কথাও বলেছেন তিনি। বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি টোমো হোযুমি বলেন, ‘শিক্ষাগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিশুদের কেবল পড়াশোনার ক্ষেত্রেই নয়, তাদের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা এবং মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতার ওপর অত্যন্ত গুরুতর প্রভাব ফেলে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপদে স্কুল পুনরায় খুলে দেয়া এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিনিয়োগ করাকে অগ্রাধিকার দেয়া আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ বিশ্বব্যাংকের হিসাব তুলে ধরে ইউনিসেফ বলছে, ‘সমাধানমূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা না হলে এ পুরো প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ আয়ের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ ক্ষতি হবে, তার পরিমাণ প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন ডলার।’ ইউনিসেফ জানায়, করোনা মহামারি শুরুর আগে ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ১৬ কোটি ৮০ লাখ শিক্ষার্থীর স্কুল গড়ে ৭৯ দিন (ছুটিছাড়া) পুরোপুরি বন্ধ ছিল। মহামারি শুরুর পর স্কুলগুলো বন্ধ ছিল প্রায় গোটা বছর। প্রতিবেদনে যত দ্রুত সম্ভব সশরীরে উপস্থিত হয়ে শিক্ষাগ্রহণের জন্য স্কুলগুলো খুলে দিতে এবং শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তার বিস্তৃত পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।


কমেন্ট বক্স
notebook

আলমডাঙ্গা ও জীবননগরে গাংনীতে জামায়াতের দায়িত্বশীল সমাবেশ