ঝিনাইদহে টিকটক-লাইকি মডেলদের বেপরোয়া জীবন, যৌন ব্যবসায় জড়িত অনেকে ভিডিও ধারণ করে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি, পুলিশের নজরদারিতে মডেলরা ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহে ২২ বছরের এক তালাকপ্রাপ্তা নারীকে ইয়াবা সেবন করিয়ে রাতভর ধর্ষণ ও আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য গতকাল বুধবার দুপুরে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই নারীর বাড়ি ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চনপুর মধ্যপাড়ায়। এ ঘটনায় পুলিশ ধর্ষক চক্রকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালাচ্ছে। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে শহরের টিকটকার ও লাইকি মডেলদের ওপর নজরদারি শুরু করেছে পুলিশ। ধর্ষণের শিকার ওই যুবতী অভিযোগ করেন, তাঁর বান্ধবী সুমি নামের এক প্রবাসীর স্ত্রী গত মঙ্গলবার বিকেলে তাঁকে বিউটি পার্লারে নিয়ে যাওয়ার নাম করে শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের পেছনে জনৈক বিডিআর মিলনের বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকে উপস্থিত ছিলেন আদর্শপাড়ার তৌফিকুর রহমান টুটুলের ছেলে আশিকুর রহমান রোমেল নামের এক লাইকি মডেল। ভুক্তভোগী নারীর ভাষ্যমতে, ওই বাসায় নিয়ে তাঁকে ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করিয়ে বিডিআর মিলন ও রোমেল রাতভর তাঁকে ধর্ষণ করেন। বান্ধবী সুমিও ওই ঘরে এসময় উপস্থিত ছিলেন। তবে তাঁকে ধর্ষণ করেছে কি না, তা নির্যাতিত মেয়েটি বলতে পারেননি। সুমির স্বামী প্রবাসী হওয়ায় সেও বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল চত্বরে ধর্ষণের শিকার ওই নারীর মা জানান, চক্রটি ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে তাঁর মেয়ের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। গতকাল বুধবার সকালে মেয়ে বাড়িতে আসলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিনি জানান, ‘আমার স্বামী বেঁচে নেই। মেয়েকে পবহাটী গ্রামে বিয়ে দিয়েছিলাম। বিচ্ছেদ হওয়ার পর এখন আমার কাছেই আছে। কী করব, ভেবে না পেয়ে দুপুরে অসুস্থ মেয়েকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়।’ ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার জানান, গোটা চক্র অন্ধকার জগতে চলাফেরা করে অভ্যস্ত। এর আগে সুমি জনৈক প্রদ্যুৎ নামে এক যুবকের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় পুলিশের হাতে আটক হয়। এছাড়া ধর্ষক আশিকুর রহমান রোমেলও গত ৩ জুন শহরের মহিলা কলেজপাড়ার একটি বাসা থেকে নারী টিকটকার তুলির সাথে আপত্তিকর অবস্থায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। অন্যদিকে বিডিআর মিলন কয়েকদিন আগে শহরের শামীমা ক্লিনিকের সামনে থেকে ইয়াবাসহ আটক হয়। ভ্রাম্যমান আদালত তাঁকে ২৩ মাসের জেল দেয়। এ খবরে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা পিতা হৃদরোগে মারা যান। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মিলন আবার অন্ধকার জগতে পা বাড়ায়। ঝিনাইদহ ডিএসবির একটি সূত্র জানায়, ঝিনাইদহ শহরে সুন্দরী নারীদের ভয়ঙ্কর মিশন শুরু হয়েছে। ৮-১০ জন যুবতী নিয়মিত যৌনকর্ম ও মাদকে আসক্ত। এদের মধ্যে অনেক অপ্রাপ্ত বয়সের মেয়েরা এখন বিমানে চলাফেরা করে। এমন বেশ কিছু যুবতীকে তারা শনাক্ত করেছে। এসব অনিন্দ্য সুন্দরীরা ঝিনাইদহ শহরের পাশাপাশি নিয়মিত ঢাকায় দেহ ব্যবসার জন্য যাতায়াত করে থাকে বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। এদের সহায়তা করার নামে নিয়মিত যৌনকার্য চালিয়ে যাচ্ছে মিলন, রোমেলসহ বেশ কিছু লম্পট যুবক। এই চক্রটি নারীদের ঢাকায় পাঠাচ্ছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। যারা কথা শুনছে না, তাদের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ করে টাকা দাবি ও দেহ ব্যবসা করাতে বাধ্য করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি (তদন্ত) এমদাদুল হক গতকাল বুধবার বিকেলে জানান, ‘যদিও আমরা এখনো কোনো অভিযোগ পায়নি, তথাপী পুলিশ কর্মকর্তা এসআই ব্রজনাথ কুমারকে হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার ওই নারীর কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি ভিকটিমের বক্তব্য শুনে প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে জানালে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ভিকটিমকে আইনি সহায়তা দিতে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছি এবং মামলার প্রক্রিয়া চলছে।