চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে আরও ৮ জনের প্রাণহানি
- আপলোড তারিখঃ ১৫-০৭-২০২১ ইং
দেশে টানা চার দিন দুই শতাধিক মৃত্যু, আক্রান্ত ১২ হাজার ৩৮৩ জন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে টানা চার দিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে দৈনিক ২০০-এর ওপরে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে নতুন করে আরও ১২ হাজার ৩৫৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ২১০ জনের। এদিকে, গতকাল চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৩১ জনের শরীরে। গতকাল মেহেরপুরে করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৬ জন।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে চারজন ও উপসর্গ নিয়ে আরও দুজনসহ মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও ১৩১ জনের শরীরে। গতকাল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ চুয়াডাঙ্গার ৪৯৬টি নমুনার ফলাফল প্রকাশ করে। এর মধ্যে ১৩১টি নমুনার ফলাফল পজিটিভ ও ৩৬৫টি নমুনার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। জেলায় নতুন আক্রান্ত ১৩১ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ৬৪ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ২৫ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ১৭ জন ও জীবননগরের ২৫ জন রয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৬.৪১ শতাংশ। এনিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ৫৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলার ২ হাজার ১৫২ জন, আলমডাঙ্গার ৮৫৮ জন, দামুড়হুদায় ১ হাজার ৬১ জন ও জীবননগরে ৯৮৯ জন। গতকাল জেলায় নতুন ৮৭ জন সুস্থ হয়েছে। এনিয়ে জেলায় মোট সুস্থ হয়েছে ২ হাজার ৮৭৫ জন।
গতকাল জেলায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আরও ছয়জনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৪৭ জনের। এর মধ্যে ১৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলায় ও করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলার বাইরে। এদিকে, এখন পর্যন্ত জেলায় চিকিৎসাসেবা কাজে নিয়জিত ৮৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭১ জন সুস্থ হয়ে তাঁদের কর্মস্থলে পুনঃরায় যোগদান করেছেন। অন্য ১৩ জন প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গতকাল জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে নিহতরা হলেন- দামুড়হুদা উপজেলার দশমীপাড়ার সৈয়দ কাশেম আলীর ছেলে সৈয়দ মামুনুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কেদারগঞ্জপাড়ার দাশু শেখের মেয়ে সুন্দরী খাতুন (৪৫), দামুড়হুদা উপজেলার দলকা লক্ষীপুর গ্রামের কালামের মেয়ে কাকলী খাতুন, জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের ইবারত আলীর ছেলে বিশারত আলী (৮৫)।
করোনা উপসর্গ নিয়ে সদর হাসপাতালের ইয়োলো জোনে মৃত্যু হয়েছে- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার রমজানের ছেলে বাবলু ও একই উপজেলার নুরনগর এলাকার সুসাহেবের মেয়ে সায়েরা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম ফাতেহ্ আকরাম জানান, গতকাল জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতাল আইসোলেশনে তিনজনসহ জেলায় মোট চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালের ইয়োলো জোনে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর করোনা প্রটোকলে নিহতের লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। করোনায় মৃত্যু হওয়া নতুন একজনসহ জেলায় আক্রান্ত হয়ে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে মৃত্যু হয়েছে মোট ১৩১ জনের ও জেলার বাইরে মৃত্যু হয়েছে আরও ১৬ জনের।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা পরীক্ষার জন্য গত রোববার ৪৪৭টি নমুনা, সোমবার ৪৭৮টি ও মঙ্গলবার ৩৭৩টি সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করে। গতকাল উক্ত নমুনা ও পূর্বের পেন্ডিং নমুনার মধ্যে ৪৯৬টি নমুনার ফলাফল প্রকাশ করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গতকাল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ আরও ৪৭৮টি নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করেছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ ১৮ হাজার ৬৫টি, প্রাপ্ত ফলাফল ১৮ হাজার ১৯০টি, পজিটিভ ৫ হাজার ৫৫ জন। জেলায় বর্তমানে ২ হাজার ৩৩ জন হোম আইসোলেশন ও হাসপাতাল আইসোলেশনে রয়েছে। এর মধ্যে হোম আইসোলেশনে আছে ১ হাজার ৯১৫ জন ও হাসপাতাল আইসোলেশনে ১১৮ জন। জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৪৭ জনের। এর মধ্যে জেলায় আক্রান্ত হয়ে জেলার হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে মৃত্যু হয়েছে ১৩১ জনের। এছাড়া চুয়াডাঙ্গায় আক্রান্ত অন্য ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলার বাইরে।
মেহেরপুর:
মেহেরপুরে প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত নয়টায় মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ পরীক্ষিত ২৬৮টি নমুনার ফলাফল প্রকাশ করে, এরমধ্যে ৮৬টি নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। নতুন আক্রান্ত ৮৬ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ৪৩ জন, গাংনী উপজেলার ৪০ জন ও মুজিবনগর উপজেলার ৩ জন রয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩২.০৮ শতাংশ।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় মোট পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৮৭৫ জন। এর মধ্যে সদরে ২৮১ জন, গাংনীতে ৪৯৭ ও মুজিবনগরে ৯৭ জন। এ পর্যন্ত মেহেরপুরে মারা গেছেন মোট ৮৫ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলার ৩৭ জন, গাংনী ২৯ জন ও মুজিবনগরে ১৯ জন।
সারা দেশ:
সারা দেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে আরও ২১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৭ হাজার ৫২ জনে। এর আগে, ১১ জুলাই দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৩০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এনিয়ে টানা চারদিন দুই শতাধিক মৃত্যু দেখলো দেশ। গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় শনাক্ত হয়েছে ১২ হাজার ৩৮৩ জন। এনিয়ে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৫৩৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ হাজার ৮১০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও পরীক্ষা করা হয় ৪২ হাজার ৪৯০ জন। যেখানে শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের মোট হার ১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, একদিনে নতুন করে সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ২৪৫ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ৮ লাখ ৯৭ হাজার ৪১২ জন। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, মারা যাওয়া ২১০ জনের মধ্যে ষাটোর্ধ ১০৭ জন। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৫২ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২৯ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৪ জন এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে সাতজন ও ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ১৩১ জন ও মহিলা ৭৯ জন। যাদের মধ্যে বাসায় ১৩ জন ছাড়া বাকিরা হাসপাতালে মারা গেছেন। একই সময়ে বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ৬৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৫ জন, খুলনা বিভাগে ৪৬ জন, বরিশাল বিভাগে ১০ জন, সিলেট বিভাগে ৯ জন, রংপুর বিভাগে ১৪ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে আটজন মারা গেছেন।
কমেন্ট বক্স