একের পর এক মৃত্যুর খবরে উদ্বিগ্ন মানুষ!
- আপলোড তারিখঃ ০৪-০৭-২০২১ ইং
করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহের গ্রামে গ্রামে জ্বর-ঠান্ডা-কাঁশি
আতঙ্ক বিরাজ করলেও সচেতনতা নেই, চুয়াডাঙ্গায় তিন দিনে ২০ জনের মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক:
একের পর এক মৃত্যুর বিভিষিকাময় খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে মানুষ। ঘরে ঘরে অসুস্থ মানুষের ভিড় বাড়ছে। গ্রাম-শহর সর্বত্রই ভুগছেন মৌসুমি ঠাণ্ডা কাঁশি ও জ্বর নিয়ে। সামান্যতেই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ছুটছেন চিকিৎসকের কাছে। ফলে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি ভিড় বাড়ছে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে। করোনার লক্ষণ নিয়ে অনেকের মৃত্যু হলেও তাঁদের কোভিড পরীক্ষার সুযোগ হচ্ছে না। চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা নেই। নেই পর্যাপ্ত হাই ফ্লো অক্সিজেন ব্যবস্থা। এমন কথা চিন্তা করে অনেকেই কোভিড রোগী নিয়ে আতঙ্কে দিন পার করছেন।
এদিকে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জারসহ নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিদিন শুধুই মৃত্যুর সংবাদ ভেসে আসছে। কেউ কোভিডে আবার কেউ হৃদরোগে মারা যাচ্ছেন। কারো কারো মধ্যে থাকছে করোনার উপসর্গ। এমন প্রতিদিন স্বজন হারানোর বেদনায় অশ্রুসিক্ত হচ্ছে মানুষ। নিকটজনের কাছ থেকে ফোন পেয়ে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। চারদিকে যেন এক অস্বস্তিকর পরিবেশ।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গত তিন দিনে চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সদর হাসপাতালের রেড জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু দুজন ও পূর্বে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হওয়া একজনসহ করোনা আক্রান্ত হয়ে নতুন তিনজন ও উপসর্গ নিয়ে আরও তিনজনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গত শুক্রবার জেলায় করোনা ও উপসর্গে মৃত্যু হয় আরও ছয় জনের। গত শুক্রবার হাসপাতালের রেড জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা আক্রান্ত হয়ে দুজন ও উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের ইয়োলো জোনে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে গতকাল করোনা আক্রান্ত চারজন ও উপসর্গ নিয়ে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় তিনজন, জেলার বাইরে দুজন ও উপসর্গ নিয়ে তিনজনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গতকাল সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের রেড জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা আক্রান্ত হয়ে দুজনের, হোম আইসোলেশনে একজন ও জেলায় আক্রান্ত হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলার বাইরে মৃত্যু হয়েছে আরও দুজনের। অন্য তিন জনের মৃত্যু হয়েছে সদর হাসপাতালের ইয়োলো জোন। এছাড়া গত তিনদিনে জেলায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৪৮ জন।
গত ৩০ জুন চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়। সদর হাসপাতালের রেড জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হওয়া দুজন হলেন- চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের হক (৬৩), দামুড়হুদা উপজেলার হুমায়ুন কবির (৪০)। একই দিনে করোনা উপসর্গ নিয়ে সদর হাসপাতালের ইয়োলো জোন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আলমডাঙ্গা উপজেলার কুলপালা গ্রামের এনামুল হক (৮০), একই উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের আমিরুল ইসলামের স্ত্রী তানিয়া আক্তার (৩৬), দামুড়হুদা উপজেলার মজলিশপুর গ্রামের মৃত পরিনতের ছেলে হাসেম আলীসহ (৭০) আরও তিনজনের।
গত ২৯ জুন সদর হাসপাতালের রেড জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় সদর উপজেলার নুর জাহান (৩৩), দামুড়হুদা উপজেলার হুমায়ুন কবির (৪০) ও জীবননগর উপজেলার সিরাজুল ইসলাম (৫০)। একই দিনে করোনা উপসর্গ নিয়ে সদর হাসপাতালের ইয়োলো জোন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় সদর উপজেলার কুলচারা গ্রামের পারুলা বেগম (৫৫), আলমডাঙ্গা উপজেলার মনির উদ্দিন (৬০), পির মোহাম্মদ (৬৫) ও দামুড়হুদা উপজেলার মোনির হোসেনসহ (৬৫) আরও চারজনের। চুয়াডাঙ্গায় প্রতিদিন কেউ না কেউ মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে।
ঝিনাইদহ স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ঝিনাইদহের শৈলকুপার বাগুটিয়া গ্রামে দুই সপ্তাহ আগে একই দিন স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়। একই উপজেলার ফুলহরি কাজিপাড়া গ্রামে জিহাদ হোসেন নামে এক কিশোর গত ২১ জুন মৃত্যুর পর তাঁর মা করোনা উপসর্গ নিয়ে ২৪ জুন মারা যান। ১১ দিনের ব্যবধানে তাঁর নানা সৈয়দ মাহবুব হোসেন গত শুক্রবার মারা গেছেন। জিহাদের পিতা সৈয়দ কোরবান আলী হিরন করোনার লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গ্রাম-শহরে অনেকের পরিবার ধরেই করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। অনেকে ভয়ে পরীক্ষা করাতে যাচ্ছেন না, এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
হরিণাকুণ্ডুর পাঁয়রাডাঙ্গা গ্রামের সোহরাব হোসেন মণ্ডল জানান, গতকাল শনিবার সকালে গ্রামের এক নিকটাত্মীয়কে দাফন করার পর দুপুরে খবর আসে বৃদ্ধ নানা করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এখন সেখানে যাচ্ছি দাফন করতে। লকডউনের কারণে স্বজনরা মারা গেলেও করোনা ভয় ও সড়ক পথে যাতায়াতের কারণে অনেকই বিদায় বেলায় প্রিয় মানুষটির মুখ দেখতে পারছেন না।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ঝিনাইদহে করোনায় মারা গেছেন ৩ জন। এ নিয়ে জেলায় করোনা শুরুর পর থেকে এক’শ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ জন। ঝিনাইদহ করোনা ইউনিটে ভর্তি আছেন ৫৭ জন। ঝিনাইদহ ইসলামিক ফাউন্ডেশন এ পর্যন্ত ১১১ জনের লাশ দাফন করেছে। এর মধ্যে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারীরাও আছেন।
ডা. নজরুল ইসলাম নামে এক চিকিৎসক জানান, বর্তমান এই মৌসুমে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রকোপ থাকে। সাধারণত গ্রামে গ্রামে এই রোগ দেখা দিচ্ছে। তাঁরা সুস্থও হচ্ছেন। আবার অনেক বয়স্ক মানুষের হৃদরোগসহ নানা সমস্যা আছে। মৃত্যুবরণ করলেই উপসর্গ থাকায় অনেকেই ঢালাওভাবে করোনাভাইরাসের কথা উল্লেখ করছেন। এসব কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে।
কমেন্ট বক্স