চোখের আলো না থাকলেও আছে অদম্য ইচ্ছা
- আপলোড তারিখঃ ২১-১২-২০২০ ইং
প্রতিবেদক, মেহেরপুর:
বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্বামী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুই সন্তান আর মানসিক ভারসাম্যহীন এক ননদকে নিয়ে পারেসা বেগমের জীবন সংগ্রাম। নিজেও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী! তবুও তিনি হাল ছাড়েননি সংসারের। চোখের আলো না থাকলেও অদম্য ইচ্ছা শক্তিতেই চালিয়ে যাচ্ছেন জীবন যুদ্ধ। অভাব-অনটনে বিধ্বস্ত পাঁচ সদস্যের সংসারে শুধুমাত্র পারেছা বেগমের ভাগ্যে জুটেছে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড জুটেছে। অন্য চার জনের কেউই পাইনি সরকারি কোনো সহযোগিতা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তারাও এই প্রতিবন্ধী পরিবারের কোনো খোঁজ রাখেন না বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ। মেহেপুরের গাংনী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের প্রাইমারি স্কুলপাড়ার একটি খুপড়ি ঘরে প্রতিবন্ধি পরিবারটি বসবাস করতো। সম্প্রতি প্রবাসীদের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে টিন ও মেঝে পাকা করে একটি ঘর নির্মাণ ও নগদ কিছু টাকা, চাল-ডাল এবং কয়েকটি ছাগল কিনে দিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। এটাই এখন অসহায় এই পরিবারটির বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।
পারেছা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী রাজমিস্ত্রীর জোগালের কাজে করেন। প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে কাজে নিলেও অর্ধেক মজুরি দেন গেরস্থরা। এই সামান্য টাকা দিয়ে সংসার চলে না। তাই বাড়িতে কিছু ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করি। প্রতিবন্ধী তিন জনের সংসারে পরপর দুটি সন্তান হয় তারাও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তবুও জীবনের হাল ছাড়িনি। ভিক্ষাবৃত্তি না করে পরিশ্রম করে খেয়ে না খেয়ে সংসার চালাচ্ছি। স্থানীয়ও কিছু যুবক প্রবাসীদের সহযোগিতায় থাকার ঘরটি করে দিয়েছেন। ’
পারেছা বেগম আরও জানান, পরিবারের সবাইকে নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করলেও সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি। জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান মেম্বাররাও খোঁজ নেননি এ পর্যন্ত। প্রতিবেশী শাহিন আলম ও রবিউল হক জানান, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও অসহায় পারেছা বেগমের পরিবার কারও কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পায়নি। সরকারি সহযোগিতার অনেক গল্প শুনলেও এমন একটি অসহায় পরিবারের দিকে ফিরেও তাকাননি ইউপি মেম্বার কিংবা চেয়ারম্যান। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এ পর্যন্ত পরিবারটি টিকে আছে। তবে পাঁচ সদস্যের অসহায় এই পরিবারকে সরকারি প্রকল্পের আওতায় একটি ঘর দেবার দাবি এলাকাবাসীর।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আনারুল ইসলাম বলেন, পারেছা বেগমের পরিবারটিকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব তার চেষ্টা করা হয়েছে। পারেছা বেগমকে ভিজিডি বা সিজিএফের চাল দেওয়া হয়। আগামীতেও তাদের সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। গাংনী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাজী মোহা. মুনছুর বলেন, দুস্থ ও অসহায় পারেছা বেগমের পরিবারকে অফিসে আসতে বলা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তালিকা দেওয়া হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ বলেন, পরিবারটি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে। আর যে যুবকদল এবং প্রবাসীরা অসহায় পারেছা বেগমের পরিবারটির প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন তাদেরকে সাধূবাদ জানায়।
কমেন্ট বক্স