গ্রাহকের প্রায় কোটি টাকা নিয়ে চম্পট!
- আপলোড তারিখঃ ২২-০৮-২০২০ ইং
জীবননগর ভুয়া এনজিও মানব কল্যাণ সংস্থার প্রতারণা
মিঠুন মাহমুদ/শ্যামল :
জীবননগরে ‘মানব কল্যাণ সংস্থার (মাকস্)’ নামের একটি ভুয়া এনজিও এলাকার সর্বসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে চম্পট দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, জীবননগর উপজেলায় আশতলাপাড়ায় মানব কল্যাণ সংস্থা (মাকস্)-এর নামে ভুয়া এনজিও প্রতিষ্ঠান খুলে উপজেলার ৫০ জন হতদরিদ্র দিনমজুর, গরীব ও অসহায় মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে চলে গেছে। এতে করে ওই এনজিওর গ্রাহক এলাকার খেটে-খাওয়া মানুষগুলো বিপাকে পড়েছেন।
প্রতারণার শিকার জীবননগর উপজেলা সীমান্ত ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের মিনারুল ইসলামের স্ত্রী রোজিনা খাতুন বলেন, ‘জীবননগর পৌরসভার লক্ষীপুর মিলপাড়ার আব্দুল মান্নানের ছেলে জামাল হোসেন ও মিনাজ আমাদের গ্রামে আসে এবং স্বল্প সুদে লোন দেওয়ার কথা বলে সুজন নামের এক ব্যক্তিকে ওই সংস্থার ম্যানেজার হিসাবে পরিচয় করে দেয়। ঋণ দেওয়ার কথা বলে আমাদের প্রত্যোকের নিকট থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে সঞ্চয় জমা নেয়। পরে ঋণ দেওয়ার নির্ধারিত তারিখে অফিসে গেলে অফিসে কাউকে না পেয়ে চলে আসি। পরে জানতে পারি তারা আমাদের মতো বেশ কিছু ব্যক্তির নিকেট থেকে অর্থ নিয়ে অফিস গুছিয়ে পালিয়ে গেছে। পরবর্তীতে ওই সংস্থার ম্যানেজার পরিচয়দানকারী সুজনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছি।’ একই অভিযোগ করেন একই গ্রামের আকলিমা খাতুন, লাইলী খাতুন, হামিদা খাতুন, শরিফাসহ বেশ কিছু ব্যক্তি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, এনজিওর একটি সঞ্চয় ও পাস বইয়ের খোঁজ মিললে উক্ত পাস বইয়ের উপরে সংস্থার হেড অফিস ১৩ এ/ ৩ এ ব্লক বি, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭ লেখা থাকলেও এটি শাখা অফিস হিসেবে জীবননগর পৌর শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আশতলাপাড়ায় মানব কল্যাণ সংস্থা (মাকস্)-এর নামে ভুয়া এনজিও প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় খোলা হয়। এটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করেন জীবননগর পৌরসভার লক্ষীপুর মিলপাড়ার আব্দুল মান্নানের ছেলে জামাল হোসেন ও মিনাজ উদ্দিন। তাঁদের মাধ্যমেই এই সংস্থাটি এলাকায় পরিচালিত হত। এদিকে, বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য জামাল হোসেন ও মিনাজ উদ্দিন বিভিন্ন মহলে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে জীবননগরে ‘মানব কল্যাণ সংস্থার (মাকস্)’-এর ম্যানেজার সুজনের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁর মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলে তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত জামাল হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো ব্যক্তির নিকট থেকে টাকা গ্রহণ করিনি এবং প্রতারণা করিনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’
৪ নম্বর সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ময়েন উদ্দিন মঈন বলেন, ‘জীবননগরে ‘মানব কল্যাণ সংস্থার (মাকস্)’ নামের একটি ভুয়া এনজিও আমার সীমান্ত ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া, গয়েশপুরসহ এলাকার সর্বসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে চম্পট দিয়েছে। তাদের প্রতারণার কারণে এ এলাকার মানুষ আজ নিঃস্ব হওয়ার পথে। এসব প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে তারা অন্য এলাকায় যেয়ে আরও বড় ধরনের প্রতারণা করবে।’
এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘জীবননগরে ‘মানব কল্যাণ সংস্থার (মাকস্)’ নামের একটি ভুয়া এনজিও এলাকার সর্বসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, এ বিষয়ে আমাদের কাছে এখনো তেমন কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে এসব ভুয়া এনজিওদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, জীবননগরে ‘মানব কল্যাণ সংস্থার (মাকস্)’ নামের একটি এনজিওর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ থানাতে এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, এসব প্রতারক চক্রকে চিহ্নিত করে অতিদ্রুত শাস্তির আওতায় আনার জন্য স্থানীয়রা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছে।
কমেন্ট বক্স