যে পাখি দিয়ে মাছ শিকার করা হয়
- আপলোড তারিখঃ ১৩-০৮-২০২০ ইং
বিষ্ময় ডেস্ক:
পুকুর, নদী-নালা, হাওর, বাঁওড়, বিলের মাঝে নৌকায় চলতে চলতে চারপাশে তাকালে দেখা যায় পুঁতে রাখা বাঁশের কঞ্চি বা লাঠির মাথায় ডানা মেলে ঠায় বসে আছে কালচে মতো একটি পাখি। প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্য যেন বিখ্যাত ভাস্কর্যকেও হার মানায়। ডুবসাঁতারে অন্যতম সেরা পাখিটিই হচ্ছে পানকৌড়ি। সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতিতে এ পাখি নিয়ে বেশ আলোচনা পাওয়া যায়। গ্রামবাংলায় দুরন্ত শৈশবে কেউ জলে বেশিক্ষণ ডুবালে বলা হতো ছেলেটি বা মেয়েটি পানকৌড়ির মতো সারাক্ষণ ডুব দিয়ে বেড়ায়।
জলের পাখি পানকৌড়ি বাংলাদেশে সবার কাছে অত্যন্ত পরিচিত। গায়ের কালো রঙের জন্য একে জলের কাক নামেও ডাকা হয়। গ্রামাঞ্চলে এটি পানিউড়ি, পানিকাবাডি, পানিকাউর, পানিকহুর, পানিকাউয়া, পানিকুক্কুট নামেও পরিচিত। ইংরেজিতে এরা কর্মোরেন্ট ও শ্যাগ নামে পরিচিত। পৃথিবীতে প্রায় ৪০ প্রজাতির পানকৌড়ির বাস। বাংলাদেশে বড়, মাঝারি বা দেশি ও ছোট পানকৌড়ি নামে তিন প্রজাতির পানকৌড়ি পাওয়া যায়। এদের দেহ বেশ উজ্জ্বল কালো রঙের। তবে সূর্যালোকে পিঠ থেকে নীলাভ-সবুজের আভা বের হয়। লম্বায় প্রায় ৫০-৬০ সেন্টিমিটার হয়। গলায় সাদা একটি দাগ, পাখার নিচের পালক ধূসর। লেজ অনেকটা কুলার মতো। ঠোঁট সরু আর প্রান্তভাগ বাঁকানো। পা হাঁসের পায়ের মতো খাটো। চোখ সবুজাভ বাদামি। মাথায় ঝুঁটির মতো পালক আছে। বড় পানকৌড়ির ঠোঁট পুরো কালো। আর ছোট পানকৌড়ির ঠোঁট অল্প সাদা। ওদের ডাক শোনা বেশ দুরূহ ব্যাপার। কেবল বাসা বাঁধার সময় ওরা অনেকটা চাপা কাশির মতো হুপ-হুপ ধরনের কর্কশ স্বরে ডাকে।
পানকৌড়ি অত্যন্ত ভালো সাঁতারু এবং মাছের খোঁজে পানির গভীরে ডুব দিতে পারে। এই ডুবুরি সত্তাকে কাজে লাগিয়ে চীন, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ায় এদের দিয়ে মাছ শিকার করা হয়। বিশেষত চীন, জাপান ও ভিয়েতনামে একে ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখনো অনেক পর্যটক পানকৌড়ি বা কর্মোরেন্ট পাখি দিয়ে মাছ শিকার দেখতে এসব দেশের নদীতে ভ্রমণ করে। পানকৌড়ির বিষ্ঠা থেকে উৎপন্ন সার গুয়ানো একটি বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে যথেষ্ট সমাদৃত। এ পাখির দীর্ঘক্ষণ পানিতে ডুব দিয়ে মাছ খাওয়ার দৃশ্য অত্যন্ত চমৎকার। কিছুক্ষণ পরপর টুপটুপ করে জলাশয়ের গভীরে দ্রুতগতিতে ডুব দেয়। আর মাছ ধরে নিয়ে এসে ভুস করে ভেসে উঠে গিলে ফেলে। দূর থেকে পানকৌড়ির এমন ডুবসাঁতার দেখলে মাঝে মাঝে মনে ভ্রম হবে। মনে হবে যেন সাপ পানিতে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, পানকৌড়ি পানির তলদেশে দীর্ঘক্ষণ থাকার পর যখন উঠে এসে ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গলে গাছের ডালপালা, আগাছা, বাঁশের খুটি বা লাঠিতে বসে সূর্যের দিকে ডানা দু’টি উঁচিয়ে শুকাতে থাকে, তখন দারুণ লাগে।
কমেন্ট বক্স