‘মরার পরে পাব বয়স্ক ভাতা’
- আপলোড তারিখঃ ২২-০৭-২০২০ ইং
তানভীর সোহেল, আলমডাঙ্গা:
নবিছদ্দিন মিয়া। বয়স ৮০ বছর। আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস করা কর্মাক্ষম এ মানুষটির বর্তমানে জীবন সংগ্রাম চলে বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতায়। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীর নিয়ে বেশি দূর হাঁটতেও পারেন না। তাই নিজের কর্মহীনতার কারণে মানুষের নিকট টাকা চেয়ে যে টাকা পান, তা দিয়ে কোনো রকম জোগাড় হয় দুই বেলার খাবার। এক বেলা থাকেন না খেয়ে।
আলাপচারিতায় নবিছদ্দিন মিয়া জানান, ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার পর অনেকটা নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। বয়সের ভারে বন্ধ হয়ে যায় আয় রোজগার। ছেলে বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। স্ত্রীও তাঁকে ফেলে চলে গেছেন। তিনি বলেন, ক্ষুধার তাড়নায় নেমে পড়েছেন মানুষের দ্বারে। বয়স্ক ভাতার জন্য চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছেন। মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছেন কয়েকবার। তাঁরা শুধু বলেন হবে। আকুতি-মিনতিই শেষ। ভাগ্যে আজও জোটেনি তাঁর বয়স্ক ভাতা।
এছাড়া, ৮০ বছরের বৃদ্ধ নবিছদ্দিন ৫ মাস পূর্বে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেনের স্মরাণাপন্ন হন। তাঁকে দেখে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন সমাজসেবা কর্মকর্তার নিকট সুপারিশ ও বয়স্ক ব্যক্তির ভাতার শতভাগ নিশ্চয়তার জন্য লিখিত সুপারিশও করেন তিনি। ৬ মাস পূর্বে সবার বয়স্ক ভাতার কার্ড হলেও হয়নি বয়স্ক নবিছদ্দিন মিয়ার। আবারো গতকাল বয়স্ক নবিছদ্দিন মিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অফিসে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মনে হয় আমি মরার পরে পাব বয়স্ক ভাতা।’ এমন কথা শুনার সঙ্গে সঙ্গে আবারো সমাজসেবা অফিসে যান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন। সমাজসেবা কর্মখর্তার পক্ষ থেকে এবারও আশার বাণী। এবার শতভাগ নিশ্চিত পাবে নবিছদ্দি তাঁর ভাগ্যের বয়স্ক ভাতা।
কুমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাইদ পিণ্টু জানান, ৬০ বছরের ওপরে যাঁদের বয়স, তাঁদের নাম লিস্ট করে ইউনিয়ন পরিষদে জমা দেওয়ার জন্য ইউপি সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নবিছদ্দি মিয়ার নাম সে তালিকায় রয়েছে। আশা করছি, তিনি বয়স্ক ভাতায় অন্তর্ভূক্ত হবেন।
এই ব্যাপারে সমাজসেবা কর্মকর্তা আফাজ উদ্দীন বলেন, বয়স্ক ভাতার তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করার একমাত্র এখতিয়ার ইউনিয়ন কমিটির। ইউনিয়ন কমিটি নবিছদ্দি মিয়ার নাম অন্তর্ভূক্ত না করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন বলেন, বয়স্ক মানুষের বয়স্ক ভাতা প্রদানে কর্মকর্তাদের গাফিলতি আছে। যাদের বয়স্ক ভাতা পাওয়ার কথা তারাই পাচ্ছে না। গত ৬ মাস পূর্বে মৌখিক ও লিখিত সুপারিশ করা হয়েছিল সমাজসেবা অফিসারের নিকট। সবার ভাতার কার্ড চালু হলেও ৮০ বছরের বয়স্ক ব্যক্তির ভাতার কার্ড জোটেনি। সব কর্মকর্তা মানবিক গুণ, মানবিক দৃষ্টি দিলে বয়সের ভাড়ে নুয়ে পড়া বৃদ্ধরা বয়স্ক ভাতার আওতায় আসবে।
কমেন্ট বক্স