চুয়াডাঙ্গা এখন করোনার হটস্পট : দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ!
- আপলোড তারিখঃ ২১-০৭-২০২০ ইং
২৪ ঘণ্টায় ৪৬ জনসহ দুদিনে রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্ত, সুরক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে অবস্থা হবে আরও ভয়াবহ
স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আজ থেকে আরও কঠোর অবস্থানে যাবে প্রশাসন : ডিসি নজরুল ইসলাম সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা জেলা এখন করোনার হটস্পট হয়ে উঠছে। ছোট এ জেলায় প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা। সংক্রমণ ছড়াচ্ছে খুব দ্রুতগতিতে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর আগে গত রোববার এক দিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩১ জন আক্রান্ত হন। এ নিয়ে গত দুদিনে জেলায় রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্তের খবরে সবার কপালে চিন্তার ভাজ ফেলেছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাচল ও সচেতন না থাকায় করোনাভাইরাস বিস্তার লাভ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখনই প্রশাসনের পক্ষ জরুরিভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে জেলাজুড়ে এ মরণব্যাধীর সংক্রমণ ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়বে। তাই জেলাবাসীর সুরক্ষায় প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন জেলার সচেতন মহলের ব্যক্তিরা। এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে এবং সচেতনতা বাড়াতে আজ থেকে প্রশাসন আরও কঠোর অবস্থানে যাবে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। এদিকে, জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪৬ জনে দাঁড়ালেও চুয়াডাঙ্গাকে লকডাউন ঘোষণার কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ যাবত জেলার ৬ জনের মৃত্যুর পরেও সবার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতায় বেশি দেখা যাচ্ছে। আসন্ন কোরবানি ঈদে জনসমাগম বৃদ্ধি পেলে অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
চুয়াডাঙ্গায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল সোমবার কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবের রিপোর্ট চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের নিকট পৌঁছায়। গতকাল ৮৪টি নমুনার ফলাফলে ৪৬টি পজিটিভ ও ৩৮টি নেগেটিভ এসেছে। এ যাবৎ পর্যন্ত জেলায় এক দিনে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা শনাক্ত হলো। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৪৬। এছাড়াও দুটি ফলোআপ রিপোর্ট পজিটিভ আসে। গতকাল চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলার আক্রান্তের সংখ্যা হলো চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২৯ জন, জীবননগর উপজেলায় ৩ জন, দামুড়হুদা উপজেলায় ৫ জন ও আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৯ জন।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় নতুন শনাক্ত ২৯ জনের মধ্যে পৌর এলাকার ফিরোজ রোডের ২ জন, এতিমখানাপাড়ার ১ জন, ডিসি অফিসের ১ জন, মাস্টারপাড়ার ৩ জন, ইসলামপাড়ার ১ জন, এনএসআই অফিসের ১ জন, বিআরটিএ অফিসের ১ জন, সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার ১ জন, জীবননগর বাসস্ট্যান্ডপাড়ার ১ জন, বড় বাজারপাড়ার ২ জন, হাজরাহাটি গ্রামের ১ জন, শ্মশান ঘাটপাড়ার ১ জন, গোরস্তান পাড়ার ১ জন, টাউন ফুটবল পাড়ার ১ জন, সদর থানার ১ জন, মল্লিকপাড়ার ১ জন, থানা কাউন্সিল পাড়ার ১ জন, দৌলাতদিয়াড়ের ১ জন ও হাতিকাটা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ১ জন। জীবননগর উপজেলার ৩ জনের মধ্যে পৌর এলাকার ১ জন, মধুমতী ব্যাংকের ১ জন ও হাসপাতাল পাড়ার ১ জন। দামুড়হুদা উপজেলার ৫ জনের মধ্যে দশমী পাড়ার ১ জন, লোকনাথপুর গ্রামের ১ জন, দর্শনা শহরের ১ জন, মোবারকপাড়ার ১ জন ও শ্যামপুর গ্রামের ১ জন। আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৯ জনের মধ্যে পাইকপাড়া গ্রামের ৬ জন ও শহরের বাবুপাড়ার ৩ জন। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন আছেন ৩৮ জন, বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৬২ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৭ জন, হোম কোয়ারেন্টাইনে যুক্ত হয়েছেন আরও ৪১ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১০ জন। মোট সুস্থ ২৩৮ জন। এই পর্যন্ত জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় করোনার ভয়াবহতার মধ্যে রাজধানী ঢাকা ও বিভিন্ন জেলার গরু ব্যবসায়ীরা ঢুকছেন চুয়াডাঙ্গায়। সরকারিভাবে বাইরে থেকে লোকজন প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গণপরিবহন বন্ধ না থাকায় এরা খুব সহজেই জেলাতে ঢুকে পড়ছেন। এতে আরও সংক্রমণের হার বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রবেশ না ঠেকাতে পারলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রুপ নেবে বলেও মন্তব্য করেন তাঁরা।
এদিকে, করোনা আক্রান্তের বিষয়ে গতকাল চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কোনো বক্তব্য দেয়নি। চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে সবকিছু জানানো হবে। এ ছাড়া হঠাৎ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তিনিও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেই আছে। আমরাও খুব চিন্তিত। সরকার জেলাভিত্তিক লকডাউনের কথা ভাবছে না। তবে বাড়ি বাড়ি লকডাউনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে ৯টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতি কমিটিতে একজন চিকিৎসক, একজন পুলিশ কর্মকর্তা, পৌরসভার ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীসহ ১৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরা আক্রান্তদের বাড়ি লকডাউনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার-ঘাট করে দেবেন। গত রোববার থেকে তাঁদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশানের পক্ষ থেকে নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বারবার বলা হচ্ছে। মাঠে গিয়ে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।’
কমেন্ট বক্স